সাভারের রানা প্লাজা ধসের ৯ বছর পূর্তি আজ ২৪ এপ্রিল। এই ভবন ধসে ১ হাজার ১৩৭ জনের প্রাণহানিতে গোটা দুনিয়া তোলপাড় হলেও ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হাইকোর্টের জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি হয়নি আজও। হাইকোর্টে বিচারাধীন এ রুল নিষ্পত্তিতে কোনো পক্ষেরই উদ্যোগ নেই। ফলে ওই ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই ভবন ধসের পর রাজউক ও পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা করলেও সেসব মামলার বিচার সম্পন্ন হয়নি। নিম্ন আদালতে মামলা দুটি এখনো বিচারাধীন। এর মধ্যে হত্যা মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, রুলের বিষয়টি কী অবস্থায় আছে, তা জেনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে রিট আবেদনকারী আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শাহীনুজ্জামান ভোরের আকাশকে বলেন, ঈদের পর নিয়মিত আদালত খুললে ক্ষতিপূরণ আদায়ের রুল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন অসংখ্য কর্মী।
ভবন ধসের পরদিনই হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। পরে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ ৪টি প্রতিষ্ঠানও রিট আবেদন করে। এ রিট আবেদনে আদালত রুল জারি করেন। রুলে ভবন মালিক ও গার্মেন্ট মালিকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চান। এর মধ্যে ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হওয়ায় রুলের একটি অংশ কার্যকারিতা হারায়। তবে রুলের মূল বিষয় ছিল ক্ষতিপূরণ বিষয়ক। এ মূল বিষয়টি আজও নিষ্পত্তি হয়নি।
হাইকোর্ট ওইবছরের ৩০ এপ্রিল এক আদেশে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা এবং ৫ গার্মেন্ট মালিকের সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তাদের ব্যাংক হিসাব থেকে কোনো অর্থ অন্যত্র স্থানান্তর করতে না পারে, সেজন্য সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রতি সার্কুলার জারি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বিজিএমইএ’র তত্ত্বাবধানে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য অর্থ তোলা যাবে বলে আদেশে বলা হয়।
আদালতের শুনানিতে তখনকার অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত মাহবুবে আলম ক্ষতিগ্রস্তদের (নিহত) প্রত্যেককে ১ কোটি টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এর অর্ধেক দেবে ভবন মালিক আর বাকি অর্ধেক দেবেন গার্মেন্ট মালিকরা। পরে ওইবছরের ১৩ মে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশে ক্ষতিগ্রস্তদের কাকে কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের জন্য নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, সরকার ও গার্মেন্ট মালিকদের প্রতিনিধি এবং মেডিসিন, মনোবিদ, অর্থনীতিবীদসহ ১৬ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির প্রতিবেদন আদালতে দাখিলও করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চ ভেঙে দেওয়ায় ওই পর্যন্তই শেষ। এরপর আর রিট আবেদনটির অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় কেটে গেল ৯ বছর। এ সুযোগে ওই ঘটনায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র রানা ছাড়া বাকিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
মন্তব্য