-->
শিরোনাম
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৯ বছর

বিদেশিরা বলছেন, ‘ফলো বাংলাদেশ’

* গার্মেন্টস কারখানার বিষয়ে ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে: বিজিএমইএ সভাপতি * ২০১২-১৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার * জুলাই ২০২১ থেকে মার্চ ২০২২ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ডলার রপ্তানি

জুনায়েদ হোসাইন
বিদেশিরা বলছেন, ‘ফলো বাংলাদেশ’
৯ বছর আগের এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠে দেশের পোশাকশ্রমিকদের কাজের ও জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে। ফাইল ছবি

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকা সাভারে ‘রানা প্লাজ’ ভবন ধসে কমপক্ষে ১১শর বেশি তৈরি পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও কয়েক হাজার। ঘটনার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ রোববার। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। ঘটনার পর থেকে তৈরি পোশাক খাতে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। ফলে দেশের কারখানার বিষয়ে ক্রেতাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। কারখানাগুলোতে এখন কমপ্লায়েন্স বা নিয়মতান্ত্রিক উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। যেজন্য বিদেশিরা তৈরি পোশাক খাতের বিষয়ে এখন ‘ফলো বাংলাদেশ’ (অনুসরণ বা অনুকরণ) বলছেন বলে দাবি করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তবে ওই ঘটনার পর কারখানার কর্মপরিবেশ ও ভবন বিষয়ে প্রথম দিকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তার সুফল বর্তমানে পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে প্রাণে বেঁচে গেলেও রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় আহত অনেক শ্রমিকই আগের চেয়েও দুঃসহ জীবনযাপন করছেন বলে দাবি করছে- অ্যাকশনএইড। আর বিজিএমইএর পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে- ঘটনায় সব আহত শ্রমিক বর্তমানে চাকরিতে রয়েছে। বাধ্যবাধকতার থেকে বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অ্যাকশনএইড সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে- রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ। বর্তমান জরিপে ৫৬.৫ শতাংশের মধ্যে যারা তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা কোমর, মাথা, হাত-পা এবং পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।

পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পরিচালিত জরিপে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পর্যায়ক্রমে উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও এ বছর অবনতি ঘটেছে। জরিপে আরো উঠে আসে, ৩৩ শতাংশের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল রয়েছে। এতে আরো দেখানো হয়, গত বছর যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, এ বছর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশে। ৩১ শতাংশ বলেছেন তাদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।

৯ বছর আগের এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠে দেশের পোশাকশ্রমিকদের কাজের ও জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে। আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে আসে নানা কড়াকড়ি। একই সময় প্রেসিডেন্ট ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বাতিল করেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

রানা প্লাজা পরবর্তী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের বিষয়ে জানাতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)-এর সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী ভোরের আকাশকে বলেন, ‘রানাপ্লাজার ঘটনা, তৈরি পোশাকশিল্পে এবং এই শিল্পের ইতিহাসের জন্য একটি দুঃখ জনক ঘটনা। তবে আমি মনে করি, এর পরই উদ্যোক্তারা ভূমিকা রেখেছেন এবং ক্রেতারা আমাদের সহায়তা করেছেন। এখন কারখানাগুলো এতই আধুনিক ব্যবস্থায় সজ্জিত হয়েছে, শ্রমিক নিরাপত্তা ও কারখানা, ভবন নিরাপত্তার জন্য যা যা দরকার তার সব কিছুই করা হয়েছে। যে কারণে অতীতের ন্যায় আর কোনো দুর্ঘটনা দেখি না, মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা হলেও আমাদের যেসব প্রশিক্ষিত লোকবল রয়েছে, তারা তা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছেন। আমি মনে করি, নিরাপত্তার বিষয়ে এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। দেশের এই বিষয়টি এখন বিদেশে অন্য দেশের জন্য মডেল হয়ে উঠেছে। আমাদের অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স এবং সংশোধন সমন্বয় সেল (আরসিসি)-এর সঙ্গে যে কাজ হয়েছে, সেজন্য বিদেশিরা বলছেন, ‘ফলো বাংলাদেশ’।

রানা প্লাজার সময়ে ক্রেতাদের যে মনোভাব তা এখন পরিবর্তন হয়েছে কি? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু পরিবর্তন হয় নাই, তাদের আগ্রহ আগের থেকে আরো বেড়েছে। (আবদুস সালাম মুর্শেদী বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি)।

অন্যদিকে দেশি-বিদেশি সংস্থার সব ধরনের শর্ত পূরণ করে দেশের তৈরি পোশাক খাত আবার বিশ্ব দরবারে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। বিজিএমইএর এক অনুষ্ঠানে তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘রানা প্লাজা হওয়ার পরে আমাদের সচেতনতা আরো বেড়েছে। বড় বিষয় হচ্ছে, কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয় অনেক উন্নত হয়েছে। যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ বা প্রতিযোগী দেশের তুলনায় অনেক ভালো। কারখানাগুলোর বিষয়ে ক্রেতাদের মধ্যে এখন আত্মবিশ্বাস এসেছে। তারাও মনে করে বাংলাদেশ এখন বেস্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এছাড়া, উন্নয়ন সহযোগী এবং দেশ-বিদেশে শ্রমিক সংস্থা বিশ্বাস করে এখানে অনেক উন্নতি হয়েছে। ’

এ সময় ফারুক হাসান দাবি করেন, ‘রানা প্লাজার পরে আন্তর্জাতিক মাধ্যম থেকে আমাদের যেসব শর্ত দিয়েছিল তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। দেশে একোর্ড, এলায়েন্স এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) অন্যান্য সংস্থার বিভিন্ন পরামর্শ পেয়েছি। আমাদের স্বার্থে, শিল্প রক্ষায় তাদের সঙ্গে নিয়ে একযোগে সমস্যা সমাধানে কাজ করেছি।’

রানা প্লাজা প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ভোরের আকাশকে বলেন, ‘প্রথমত রানা প্লাজার ঘটনায় দেশের কারখানা, ভবন ও শ্রমিক নিরাপ্তার বিষয়ে অনেক কাজ হয়েছে। এ ছাড়া আইনগত দিক থেকে অনেক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ফলে ক্রেতাদের আস্থা ফিরেছে। যার ফল তৈরি পোশাক খাতে বর্তমানের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

গার্মেন্ট খাতে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ গত অর্থবছর (২০১২-১৩) সালে ২ হাজার ১৫০ কোটি ডলার ছাড়ায়। চলতি অর্থবছর ২০২১-২০২২ সালে এর প্রথম নয় মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে, ৩ হাজার ১৪২ কোটি ডলার।

মন্তব্য

Beta version