-->
শিরোনাম
রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৯ বছর

হত্যা মামলায় বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

এমদাদুল হক খান
হত্যা মামলায় বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১৩৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো কয়েক হাজার শ্রমিক। ফাইল ছবি

আজ রোববার ২৪ এপ্রিল। দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। ২০১৩ সালের এই দিনে ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১৩৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হন আরো কয়েক হাজার শ্রমিক। এ দিনটিতে নানা শ্রমিক সংগঠন আয়োজন করে নানা কর্মসূচি।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত রানা প্লাজায় তিনটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো ওই দিন সকাল ৮টায় হাজির হন কর্মস্থলে। উৎপাদনও শুরু করেন নির্ধারিত সময়ে। হঠাৎ সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দ। আশপাশে উড়তে থাকে ধুলো-বালি। ধসে পড়ে রানা প্লাজা। শুরু হয় আহত শ্রমিকদের আহাজারি। উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। চলে বিরতিহীন উদ্ধার অভিযান।

এদিকে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় করা হত্যা মামলায় বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৯ মে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এ এইচ এম হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া এই দিন ধার্য করেন।

যা ছিল ভবনটিতে

রানা প্লাজার প্রথম তলায় ছিল বিভিন্ন দোকান। দ্বিতীয় তলায়ও ছিল দোকান আর ব্যাংক। তৃতীয় তলার নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় নিউ ওয়েভ স্টাইল লিমিটেডে এবং ফ্যানটম ট্যাক লিমিটেড, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় ইথারটেক্স লিমিটেড গার্মেন্টস।

হতাহতের সংখ্যা

রানা প্লাজা ধসে ১১৩৬ জন শ্রমিকের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধার কর্মীরা। আর ২৪৩৮ শ্রমিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আহতদের মধ্যে অনেকেই পঙ্গু হয়ে গেছেন। অনেকে আবার মানসিক রোগী হয়ে আছেন।

তৈরি হয়েছে শহীদ বেদি

নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালের ২৪ মে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের সামনে নির্মাণ করেন একটি শহীদ বেদি। অস্থায়ী শহীদ বেদিটির নামকরণ করা হয় ‘প্রতিবাদ-প্রতিরোধ’। এ শহীদ বেদিটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন চালিয়ে আসছে নানা আন্দোলনের কর্মসূচি।

বর্তমান রানা প্লাজার চিত্র

অধিকাংশ ধ্বংসস্তূপই সরিয়ে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বংশাই নদীর পাড়ে। এখনো কংক্রিটের সুরকি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে রানা প্লাজার ১৮ শতাংশ জমির ওপর। চার পাশটা কাঁটাতার ও টিনের বেড়া দিয়ে রেখেছিল জেলা প্রশাসক। তাও আজ মিশে গেছে। সামনেই বিভিন্ন সংগঠন তৈরি করেছে শহীদ বেদি। প্রায় প্রতিদিনই রানা প্লাজায় আহত, নিহত আর নিখোঁজ স্বজনের আনাগোনা চোখে পড়ত। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন নানা দাবিতে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে আন্দোলন করেছে।

সোহেল রানার সব ভূমি সরকারের দখলে

সোহেল রানার মালিকানাধীন রানা প্লাজার ভূমি, রানা টাওয়ারের ভূমি ও ধামরাইয়ের রানা ব্রিকসের ভূমি সরকার দখলে নিয়েছে। আদালতের নির্দেশে রানার মালিকানাধীন সব ভূমি বাজেয়াপ্ত করে ঢাকা জেলা প্রশাসন দখল বুঝে নিয়েছে।

কালের সাক্ষী অধরচন্দ্র স্কুলমাঠ

বেদনার সাক্ষী হয়ে আছে সাভারের অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ। ঘটনার দিন থেকে টানা ১৭ দিন ওই বিদ্যালয়ের মাঠে নিহতদের নিয়ে রাখা হতো। আর সেখান থেকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হতো। প্রিয় মানুষটির সন্ধান পেতে সে সময় স্বজনরা দিগি¦দিগ ছুটাছুটি করতেন। রানা প্লাজা থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ দেড় কিলোমিটার জুড়ে সে সময় অ্যাম্বুলেন্সের মুহুর্মুহু শব্দ সবাইকে জাগিয়ে তুলতো। আর অপেক্ষারত স্বজনরা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। এই বুঝি এলো নিখোঁজ মানুষটি। আজও সেই মাঠটি আছে, তবে নেই সেই চিত্র। তবে মাঠটি যেন আগের মতো আর হাসে না। প্রাণচঞ্চলতা যেন হারিয়ে ফেলেছে।

অধরচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র ফরিদ জানান, আগে সকাল-দুপুর-রাত এমন কোনো সময় নেই যে মাঠে না আসতাম, কোনো ভয় ছিল না। তবে রানা প্লাজার ধসে পড়ার পর মৃত লাশগুলো সারি সারি করে রাখা হয়েছিল। এর পর থেকে আর সাহস পাই না।

শ্রমিক নেতাদের দাবি

রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর প্রায় প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনই নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ নিরাপদ রাখতে আন্দোলন শুরু করে। নিহত ও আহতদের লস অব আর্নিং-এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেন তারা। ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করার জোর দাবি তোলেন তারা।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের আশুলিয়া থানার সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, রানা প্লাজার এখনো অনেক শ্রমিক রয়েছেন যারা ক্ষতিপূরণ পাননি। দ্রুত ওই সব শ্রমিকদের লস অব আর্নিং-এর ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া সরকার সোহেল রানার যেসব সম্পত্তি জব্দ করেছে সেসব সম্পতি নিহত ও আহত পরিবারের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

মন্তব্য

Beta version