-->

ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা: বিড়ম্বনা কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ

মো. রেজাউর রহিম
ঈদযাত্রায় দুর্ভোগের শঙ্কা: বিড়ম্বনা কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ
ঈদ সামনে রেখে দ্রুতগতিতে চলছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ। ছবিটি রোববার ধামরাই থেকে তোলা। ভোরের আকাশ

এবার ঈদে ১ কোটিরও বেশি মানুষ রাজধানী ছাড়বেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে সঙ্গী হতে পারে দুর্ভোগ। মূলত মহাসড়কগুলোতে সড়ক প্রশস্তকরণ ও সড়ক সংস্কার কাজ, অবৈধ যানবাহনের দাপট, তিনচাকার ধীরগতির যানবাহন, ফেরিঘাটে নাব্য সংকট ও পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সড়ক পরিবহণ সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় ঈদে মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ কমাতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

জানা গেছে, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাট, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাট, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাড় পর্যন্ত দুই লেন; বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলপ্লাজা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের কড্ডার মোড়, নলকা সেতু এলাকা, হাটিকুমরুল, ঘুড়কা ও চান্দাইকোনায় যানজট ও ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর, সোনারগাঁও, সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায়ও রয়েছে ব্যাপক যানযটের আশঙ্কা। এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী স্টেশন রোড, গাজীপুরা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তা নিয়েও রয়েছে দুঃশ্চিন্তা।

অন্যদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ডেমরা, রূপগঞ্জের গাউছিয়া এবং ঢাকা-আরিচা ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। আসন্ন ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ চরমে উঠতে পারে। এ ছাড়া বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতির নির্মাণকাজ, মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে অবৈধ বাজার ও দোকান, সড়কে নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ, অবৈধ অটোরিকশা ও তিন চাকার যানবাহনের আধিক্যসহ বেশ কয়েকটি কারণে এবারের দুর্ভোগ আগের চেয়ে আরো বাড়তে পারে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া সড়কে চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলের বিষয়ে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিষয়টি নিয়ে নৌ পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঈদে মানুষের বাড়ি ফেরার ক্ষেত্রে দুর্ভোগ লাগবে সরকার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণ ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ঈদকে সামনে রেখে এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি সভাও করা হয়েছে। এসব সভায় অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো বন্ধ, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করার পপাশাপাশি নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে সাইনবোর্ড এলাকা থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ যানজটের সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য প্রশাসনের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। এছাড়া সোনারগাঁও অঞ্চলে মেঘনা ও কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলসহ চারটি ইকোনমিক জোনের শত শত পণ্যবাহী ট্রাক বিভিন্ন স্থান দিয়ে মহাসড়কে প্রবেশ করার ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া যানবাহনের চাপে মেঘনা সেতুর টোল প্লাজায় ধীরগতিতে টোল আদায়ের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে বেশ কিছু উড়ালসড়ক ও ওভারপাস নির্মাণ এবং মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের গর্ত ও খানাখন্দ মেরামতের কাজ চলছে। আর ঈদের আগেই এসব কাজ সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের আগে-পরে ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখা হবে।

ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শামীম আল মামুন ভোরের আকাশকে জানান, মহাসড়কের উন্নয়নকাজ চলমান প্রক্রিয়া, এ অসুবিধা সাময়িক। তবে ঈদের আগে সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য মানুষকে যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মানুষের দুর্ভোগ কমাতে শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা নৌরুটে জাজিরার মাঝিকান্দি ঘাটে আরেকটি ফেরিঘাট নির্মাণকাজ চলছে। ২৮ এপ্রিলের মধ্যে নতুন ঘাটটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া এ নৌরুটে দুর্ভোগ লাগবে রাতে ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান গোলাম সাদেক জানান, ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ মোকাবিলা করার জন্য ওই ঘাট থেকে রাতে কয়েক দিন ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর বিকল্প জাজিরা ঘাটে আরেকটি ফেরিঘাট নির্মাণ করা হবে ২৮ এপ্রিলের মধ্যে। বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, শিমুলিয়া ঘাটে বর্তমানে ৬টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদকে সামনে রেখে আরো ৪টি ফেরি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদি ১০টি ফেরি চলাচল করে তাহলে দুর্ভোগ কিছুটা কমতে পারে।

এদিকে, ২১ জেলার প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া নৌরুটে ছোট-বড় ২১টি ফেরি রয়েছে। তবে এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে ৫টি ফেরি বিকল রয়েছে। দৌলতদিয়ার ঘাট, ফেরি ও নাব্য সংকটের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্চে। ঈদযাত্রায় এ দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

মন্তব্য

Beta version