মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় দেশের ৬১টি জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে আর্থিক বিষয়টি দেখার জন্য প্রধান জেলা পরিষদগুলোয় নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে। ইতোমধ্যে একটি তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের রাজনৈতিক-সামাজিক এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবরও নেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
গত ৬ এপ্রিল প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে জেলা পরিষদ আইনের সংশোধনী সংসদে পাস হয়েছে। আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে প্রশাসক বসানোর বিধানও রাখা হয়েছে। আইনে ৮২ নম্বর ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে, কোনো জেলা পরিষদের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসকের মেয়াদ ও অব্যাহতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে। এছাড়া আইনের সংশোধনীতে জেলা পরিষদে বিদ্যমান ১৫ জন সাধারণ সদস্যের স্থলে উপজেলার সমানসংখ্যক সদস্য থাকার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সংশোধিত আইনে প্রত্যেক উপজেলা থেকে একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণ সংখ্যা) ও কমপক্ষে ২ নারী সদস্য থাকবেন।
এছাড়া আইনের সংশোধনী অনুযায়ী, প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিনের বেশি হবে না। এছাড়া একাধিক মেয়াদে কোনো ব্যক্তি প্রশাসক পদে থাকতে পারবেন না। এরপর গত ১৭ এপ্রিল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার ৬১টি জেলা পরিষদ বিলুপ্ত করে এবং জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা বা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়। এর পরপরই জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও) মূলত জেলা পরিষদের আর্থিক বিষয়টি দেখভাল করবেন। আর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত আইনানুযাযী এখন একজন প্রশাসক দায়িত্ব পালন করবেন। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, অচিরেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের শূন্যপদে প্রশাসক নিযোগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের শূন্যপদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছি। নির্বাচন কমিশন তাদের সুবিধাজনক সময়ে এ নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। নির্বাচনের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত। জেলা পরিষদে প্রশসক হিসেবে সরকারি আমলারা নিয়োগ পেতে পারেন বলে বিভিন্ন মহলে যে গুজব রয়েছে, তা সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই এ পদে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাবেন। কোনো অবস্থায়ই আমলাদের এ পদে নিয়োগ করা হবে না।
উল্লেখ্য, জেলা পরিষদসংক্রান্ত বিদ্যমান আইনের সংশোধনীতে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ শূন্য হলে পরবর্তী নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সরকার নির্বাহী আদেশে যোগ্য কোনো ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে থেকে কাউকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দান করতে পারবে। এ সংশোধনী পাস হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে গুজব ওঠে জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে সরকার যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিব এবং যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার অনেক কর্মকর্তারা পদায়নের অভাবে বিভিন্ন অফিসে যুক্ত হয়ে আছেন। এসব কর্মকর্তা অনেকে আগের কর্মস্থলেই বহাল রয়েছেন। বিষযটি নিয়ে অনেক কর্মকর্তার মধ্যে হতাশাও রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকেও জেলা পরিষদে রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই নিয়োগের ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলা কমিটি সম্ভাব্য প্রশাসক হিসেবে আগ্রহী ব্যক্তিদের নাম পাঠিয়েছে। এক্ষেত্রে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা তিন-চারজন করে যোগ্যতাসম্পন্ন আগ্রহী প্রার্থীদের নাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আগামী জুলাই-আগস্টে জেলা পরিষদ নির্বাচন করার চিন্তাভাবনা চলছে। ঈদের পর জেলা পরিষদ এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, দেশে জেলা পরিষদ নির্বাচন প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর। পার্বত্য তিন জেলা ছাড়া দেশের ৬১ জেলা পরিষদে ওইদিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর এ বছর জানুয়ায়ি মাসে স্থানীয় এ সরকার পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আইনানুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা ছিল।
মন্তব্য