ঈদের আনন্দ স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। অন্যান্য যানবাহনের মতো গতকাল ট্রেনেও ঢাকা ছেড়েছেন অনেকে। তবে ঈদযাত্রার প্রথমদিনেই বেশকিছু ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। বিপর্যয়ের সময় রেলমন্ত্রী স্বয়ং কমলাপুর স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু জাদুঘর এবং লোকমটিভ ইঞ্জিন উদ্বোধন করার পর টিকিট ব্যবস্থাপনা ঘুরে দেখেন।
ঈদ উপলক্ষে গত ২৩ এপিল থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। প্রথম দিন দেওয়া হয়েছিল ২৭ এপ্রিলের টিকিট। এই হিসেবে গতকাল বুধবার থেকেই রেলপথে ঈদযাত্রা শুরু হয়। রেলওয়ের সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীগামী ধূমকেতু ট্রেন দিয়েই এবারের ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা। ট্রেনটি প্রায় একঘণ্টা দেরিতে সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে কমলাপুর রেলস্টেশন ছেড়ে যায়। তাই পরের ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসের মাধ্যমে ৬টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিক ঈদযাত্রা শুরু হয়।
সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার পর সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা ছিল চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের। কিন্তু ট্রেনটি সকাল ৭টা পর্যন্ত প্ল্যাটফর্মে আসেনি। পরে সাড়ে ৭টার দিকে এটি ছাড়ে। আর সকাল ৭টার ট্রেন চট্টগ্রাম অভিমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে গেছে সঠিক সময়েই। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা। সেটি স্টেশন ছেড়ে যায় ৮টা ৪৭ মিনিটে। এ দিকে ঈদযাত্রার শুরুতেই ট্রেন বিলম্বে ছাড়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা।
কমলাপুর রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, এবারের ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৫৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনে আসন থাকবে প্রায় ২৭ হাজারের বেশি।
কমলাপুর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেলা ১১টা পর্যন্ত কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আটটি ট্রেন ছেড়ে গেছে। গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো হলো রাজশাহীগামী ধূমকেতু, সিলেটগামী পারাবত, চিলাহাটিগামী নীলসাগর, চট্টগ্রাম সোনারবাংলা, কিশোরগঞ্জে এগার সিন্দুর প্রভাতি, দেওয়ানগঞ্জ অভিমুখী তিস্তা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি ও খুলনা অভিমুখী সুন্দরবন এক্সপ্রেস।
গতকাল প্ল্যাটফর্ম ঘুরে দেখা যায়, নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ অপেক্ষা করছেন দীর্ঘক্ষণ ধরে। রংপুরগামী ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেসে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ার কথা ছিল। তবে তা ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরি করে স্টেশন ছাড়ে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী নওরিন ইসলাম যাবেন রংপুরে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমার কাছে এক ঘণ্টাও অনেক দামি। কেননা ঈদের পর দিনই আবার আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে। স্টেশনে এসে দেখি ট্রেন ছাড়তে এক ঘণ্টার বেশি দেরি হচ্ছে। যাত্রার শুরুর দিনই দেরি, বাকি দিনগুলোতে তাহলে কি হবে। এবারের ঈদযাত্রায় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ ছিল টিকিট পাওয়া। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা অপেক্ষার পর অনেক কষ্ট করে টিকিট পেয়য়েছিলাম।’
বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে করে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে যাবেন মো. অল-আমিন। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী, এক ছেলে ও ভাগিনা। বেলা ১১টার দিকে স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে পরিবারসহ অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। প্রতিবারই যাই। বাড়িতে মা আছেন। একসঙ্গে ঈদ করি। টিকিট অনলাইনে কেটেছি। এতখন দাঁড়িয়ে থেকে কাউন্টারে এসে টিকিট কাটা সম্ভব নয়। অনলাইনে টিকিট কাটতে সাড়ে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। তবু যে টিকিট পেয়েছি এবং বাড়ি যেতে পারছি, এটাই শুকরিয়া।’
কমলাপুর রেল স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ১১টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে। পশ্চিমাঞ্চলে জয়দেবপুর থেকে একদম পাবনার ঈশ্বরদী পর্যন্ত স্টেশনগুলো একটা থেকে আরেকটা দূরত্ব অনেক বেশি এ কারণে ট্রেন ক্রসিং একটু সময় বেশি লাগে।
মন্তব্য