-->

বাড়তি ভাড়ায় ঈদযাত্রা

*অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ *বিআরটিসির টিকিট মিলছে বাইরে *৭০০ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায় *লঞ্চে বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় জরিমানা *চলছে বিআরটিসির অগ্রিম টিকিট বিক্রি

রাজন ভট্টাচার্য
বাড়তি ভাড়ায় ঈদযাত্রা
যাত্রীরা বলছেন, কাউন্টার থেকে ইচ্ছেমতো টিকিটের দাম নেওয়া হচ্ছে। ছবি- সংগৃহীত

ঈদযাত্রায় নৌ ও সড়কপথে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। টিকিট যখন সোনার হরিণ তখন অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। অনেকেই এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে কার কাছে অভিযোগ করবেন, সে রকম কর্তৃপক্ষও টার্মিনালে পাননি যাত্রীরা। গতকাল বুধবার নগরীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল, কাউন্টার ও সদরঘাট নদী বন্দর ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, বিআরটিসি বাসের টিকিট বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বেসরকারি বিভিন্ন বাস কাউন্টারে। এদিকে ঘরমুখো মানুষের বিভিন্ন ফেরিঘাটে ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে।

২ মে ঈদ ধরে সড়ক ও রেলপথে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের জন্য বাসের টিকিট বিক্রি হয় একটু আগেভাগেই। শিডিউল বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে বুধবার থেকে ঈদ উপলক্ষে অগ্রিম ট্রেনযাত্রা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বাসের কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৮-৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর যাত্রীরা বলছেন, কাউন্টার থেকে ইচ্ছেমতো টিকিটের দাম নেওয়া হচ্ছে। একই চিত্র বিভিন্ন বাস টার্মিনালেও।

গতকাল বুধবার দুপুরে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নেত্রকোনার যাত্রী হুমায়ূন জানান, হজরত শাহজালাল পরিবহণে ৩০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কেউ কোনো দিক না তাকিয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন বলে জানান তিনি। অভিযোগ জানানোর পর্যন্ত কাউকে পাননি। কাউন্টারে প্রতিবাদ করলে বলা হয় আপনাকে বাসে যেতে হবে না। হেঁটে যান। ৫০০ টাকায় ড্রিমল্যান্ড পরিবহণের বাসের টিকিট বিক্রির অভিযোগ করেছেন শেরপুরের যাত্রীরা। যদিও উভয় অভিযোগ স্বীকার করেছেন কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় বেসরকারি বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ৩০ এপ্রিল রাতের সুনামগঞ্জের এসি বাসের টিকিট কিনতে যান বাসাবোর বাসিন্দা কামাল। শ্যামলী পরিবহণের কাউন্টার থেকে তাকে বলা হয় আমাদের এসি গাড়ি নেই। আপনি আমার সঙ্গে আসুন। টিকিট আছে। জনপ্রতি ভাড়া লাগবে এক হাজার টাকা।

তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় এফটি ট্যুরিজম ও রিজার্ভ বুকিং কাউন্টারে। সেখানে দায়িত্বরত মো. কায়েস বলেন, আমার কাছে বিআরটিসির ৩০ এপ্রিলের এসি বাসের টিকিট আছে। কেন এত ভাড়া এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিআরটিসি কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করলে ৭০০ টাকা। আমরা সেখান থেকে এনে টিকিট বিক্রি করায় এক হাজার টাকা দিতে হবে।

প্রশ্ন হলো কীভাবে বিআরটিসি কাউন্টারের টিকিট বাইরের কাউন্টারে এল। যখন বিআরটিসির বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি চলছে তখন বাইরের কাউন্টারে টিকিট কীভাবে এল এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যোগাযোগ করা হয় কমলাপুর বিআরটিসি ডিপো ম্যানেজার মাসুদ তালুকদারের সঙ্গে। তবে মুঠোফোনে তাকে কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।

মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলী, কল্যাণপুরসহ বিভিন্ন বাস টার্মিনালে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে সব মালিকদের সতর্ক করেছি। কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিএর নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করছে না। আবার যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো আদায় করছে বেশি ভাড়া। গতকাল রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অভিযান চালিয়ে এ প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ অপরাধে তিনটি লঞ্চকে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঈগল-৭ লঞ্চকে ১০ হাজার টাকা, প্রিন্স শাকিল-৬ লঞ্চকে ৩ হাজার টাকা এবং এম ভি পুবালী-১ লঞ্চকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ঈদযাত্রায় লঞ্চে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হয় এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদারকি করতে আজ আমরা সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাই। এ সময় দেখা যায়, বেশির ভাগ লঞ্চ বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করছে না। আবার অনেকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে। এ সময় তিনটি লঞ্চকে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

তিনি বলেন, অভিযান শেষে বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সহজে দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে বলা হয়, একই সঙ্গে বেশি ভাড়া না নেওয়া এবং লঞ্চে সক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী না উঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৬ এপ্রিল থেকে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ করপোরেশন (বিআরটিসি)। বিআরটিসির অপারেশন বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ উপলক্ষে ২২ এপ্রিল থেকে বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট ডিপোতে অগ্রিম টিকিট বিক্রয় শুরু হয়েছে। আগামী ৬ মে পর্যন্ত ঈদ সার্ভিসের বাস চলাচল করবে। এ উপলক্ষে ঢাকার মতিঝিল, জোয়ারসাহারা, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো (চাষাড়া) থেকে বেশ কয়েকটি রুটে (ঢাকা হতে) অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

টিকিট বিক্রির স্থানগুলো হলো-

মতিঝিল বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: দাউদকান্দি, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর ও নেত্রকোনা রুটের টিকিট বিক্রি করা হবে।

কল্যাণপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: রংপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নেত্রকোনা, রানিশংকৈল, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর রুটের টিকিট।

গাবতলী বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: ঢাকা-আরিচা রংপুর, দিনাজপুর আরিচা ও পাটুরিয়া রুটের টিকিট।

জোয়ারসাহারা বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: বিশ্বরোড-পাঁচদোনা, রংপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও বগুড়া রুটের টিকিট।

মিরপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: রংপুর, কুষ্টিয়া, বগুড়া, কুড়িগাম, দিনাজপুর, নওগাঁ ও ময়মনসিংহ রুটের টিকিট।

মোহাম্মদপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও নওগা রুটের টিকিট।

গাজীপুর বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: বিশ্বরোড-পাঁচদোনা, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও কুড়িগ্রাম রুটের টিকিট।

যাত্রাবাড়ী বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: ঢাকা-রংপুর রুটের টিকিট।

নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপোর নিয়ন্ত্রণে: ঢাকা-রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড়, নীলফামারী, নওগাঁ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও পাবনা রুটের টিকিট।

এ ছাড়া যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে ঢাকার বিভিন্ন ডিপো বা টার্মিনালে জরুরি সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে ৫০টি বাস নিম্নলিখিত ডিপো বা স্থানে স্ট্যান্ডবাই থাকবে।

মন্তব্য

Beta version