কারো এক হাতে ব্যাগ, অন্যহাত ধরে হাঁটছে শিশু সন্তান। কেউ হাতে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন স্ত্রীকে। কেউ টেনে-টেনে নিয়ে যাচ্ছেন ট্রলি। এমন দৃশ্য দেখা গেছে বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশন এলাকায়। নাড়ির টানে ছুটছে এসব ঘরমুখো মানুষ। ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা।
যানজটময় চেনা নগরী পাল্টে গেছে একদম। রাজধানীর অলিগলি থেকে মূল সড়কগুলোতে নেই ব্যস্ততা। ভিড় কমেছে শপিং সেন্টারগুলোতেও। শহরের বেশির ভাগ গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশার গন্তব্য বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরে। শহর ছেড়ে গ্রামের ছুটছে মানুষ। এরই মধ্যে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। ঈদের আগের রাত পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক কোটিতে। এমনটিই জানিয়েছে যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি অফিস বন্ধ হওয়ায় ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বেড়েছে বিপুলভাবে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ ছিল গণপরিবহণে।রাজধানীর মূল সড়ক থেকে মহাসড়কে ছিল যানজট। গতকাল থেকে চাপ কিছুটা কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল, মতিঝিল, কাওরানবাজার, ফার্মগেট, মিরপুর ঘুরে দেখা গেছে সড়কে যানজট নেই। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মোড়ের ট্রাফিক সিগন্যালে থামতে হয়েছে, তবে তা ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। ফার্মগেট এলাকায় ট্রাফিক সার্জেন্ট দুর্জয় জানান, গাড়ির চাপ অনেক কমেছে।
গত কয়েক দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে সড়কে সেবা দিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। আহমেদ রুবেল জানান, প্রাইভেট গাড়িতে রামপুরা থেকে মতিঝিল যেতে সময় লেগেছে ২০ মিনিট। রাস্তা ফাঁকা থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে। তবে গতকাল গুলশান, বনানীতে ছিল প্রাইভেট গাড়ির ভিড়। বনানীর ১১ নম্বর সড়কে যততত্র গাড়ি পার্কিং করে রাখায় বেশ কয়েকটি মামলা দেন ট্রাফিক সার্জেন্টরা। গুলশানের পিঙ্ক সিটির সামনে কথা হয় প্রাইভেট কোম্পানির কর্মকর্তা আহসান মাহমুদের সঙ্গে। স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে শপিং করতে বের হয়েছেন তিনি। বাসা গুলশান-২ এর ১১৮ নম্বর সড়কে। ঈদ করছেন ঢাকাতেই। যে কারণে আগে তেমন কেনাকাটা হয়নি।
মতিঝিল এলাকায় কথা হয় আসিফ আলাউদ্দিনের সঙ্গে। কর্মজীবী এই যুবক জানান, গত এক সপ্তাহ আগেই পরিবারের সদস্যদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে পাঠিয়েছেন। ছুটি হয়নি বলে গতকাল পর্যন্ত অফিস করেছেন তিনি।
বেশির ভাগ মানুষ ঢাকা ছাড়ায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী। কাকরাইল মোড়ে কথা হয় সুপ্রভাত পরিবহণের চালক হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, গত দুই দিনে প্রচুর মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এ কারণে রাস্তায় মানুষ অনেক কম। যে কারণে যানজট নেই।
যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ১ কোটির বেশি মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাবে। ছুটি শেষে আবার ফিরে আসবে। ঈদের আগে চার দিন প্রতিদিন গড়ে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা থেকে বের হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।
এবার ৩০ রোজা পূর্ণ হলে ঈদ উদযাপন হবে ৩ মে। এ ক্ষেত্রে ঈদুল ফিতরে দেশের সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীরা ২৯ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত টানা ছয় দিনের ছুটি পেয়েছেন।
যদিও ঈদের ছুটি মূলত তিনদিন। তবে ঈদের আগে সাপ্তাহিক ছুটি ও মে দিবসের ছুটি মিলিয়ে এবার ঈদের ছুটি বেড়ে ছয় দিন। ঈদের আগের শুক্রবার ছিল ২৯ এপ্রিল। পরদিন শনিবার ৩০ এপ্রিল। ১ মে রোববার শ্রমিক দিবসের সরকারি ছুটি। একই সঙ্গে এ দিন ঈদের ছুটিও শুরু হচ্ছে। এরপর সোম ও মঙ্গলবার ঈদের ছুটি। তবে রোজা যদি ৩০টি হয় এই ক্ষেত্রে বুধবারও ৪ মে ঈদের সরকারি ছুটি থাকবে। সব মিলিয়ে টানা ছয়দিন ছুটি পাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। যে কারণে অনেকে পরিবারের সবাই মিলে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে ঢাকা ছাড়ছেন।
মন্তব্য