যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবির ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

ভোরের আকাশ ডেস্ক
যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবির ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন

যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এবার জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানবতার সংকট ও রবীন্দ্রনাথ’।

জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকার। মূল অনুষ্ঠান ছিল রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ। স্বাগত বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। স্মারক বক্তৃতা করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী নতুনের বার্তা নিয়ে আসে, যা কালের আবর্তে কখনো মলিন হয় না। প্রাণে নিয়ে আসে উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা ও উচ্ছলতা।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন, রচনা করেছেন-'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি'- যেটিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতীয় সংগীত হিসাবে নির্বাচন করেছেন।

স্পিকার বলেন, বাঙালির আবেগ-অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা প্রভৃতি খুঁজে পাই রবীন্দ্র লেখনীতে। ‘সত্য ও সুন্দর সবসময় বিরাজ করে’- রবীন্দ্রনাথ এটি ধারণ করতেন।

তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে যে সংকট, অশান্তি যুদ্ধাবস্থা, সমাজের সকল অনাচার-অবিচার দূরীকরণ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমাদের কবির কাছ থেকে অনেক কিছু জানার ও শেখার রয়েছে।

কে এম খালিদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ মূলত আমাদের পূর্ববঙ্গের। কারণ পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশে অবস্থান তাঁকে পরিপূর্ণ রবীন্দ্রনাথ করেছে, মাটি ও মানুষের সঙ্গে নিবিড় আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধেছে। এ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে কবির স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন স্থাপনা। জমিদারি পরিচালনা করতে এসে এসব জায়গায় থেকেছেন কবি, রচনা করেছেন তাঁর মহামূল্য সাহিত্যকর্ম, তার মধ্যে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি অন্যতম।

১৮৯১ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে অল্প বিরতিতে কবি নিয়মিত কুঠিবাড়িতে অবস্থান করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ বাড়িতে বসেই কবি রচনা করেছেন তাঁর অমর সৃষ্টি সোনারতরী, চিত্রা, চৈতালী, কথা ও কাহিনী, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য ও খেয়া কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতাসহ অনেক উল্লেখযোগ্য রচনা। কবিগুরুর নোবেল জয়ের হাতিয়ার ‘গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদও শুরু করেন এখানেই।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও বাঙালির শৈল্পিক অহংকার। প্রতিভা ও শ্রমের যুগলবন্দি সম্মিলনে তিনি কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-নিবন্ধ-নাটক-শিশুসাহিত্য-জীবনী-শিক্ষাভাবনা ইত্যাদি সকল শাখায় সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছেন, বাংলা সাহিত্যকে করেছেন ঐশ্বর্যমন্ডিত। সংগীত ও চিত্রকলায়ও তাঁর অবদান অনন্যসাধারণ। নোবেল পুরস্কার এনে দিয়ে বাংলা ভাষাকে, বাংলা সাহিত্যকে, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানের আসনে বসিয়েছেন।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে জাতির সংকট মোচনে এক মহামানবের আগমন প্রত্যাশা করেছিলেন। বাঙালি তথা উপমহাদেশের ক্রান্তিলগ্নে সেই মহামানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় একদিকে যেমন কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, ক্ষমতার মদমত্ততার বিরুদ্ধে স্বর শাণিত করেছেন অন্যদিকে তেমনি সভ্যতার সুষমায় নারীশক্তির শুভ উদ্বোধন কামনা করেছেন, পাষাণ রাজতন্ত্রের বিপরীতে চিরায়ত হৃদয়তন্ত্রের গান গেয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কবির চিত্রশিল্প প্রদর্শনী এবং কবির ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারির মাসব্যাপী প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। ঢাকাসহ কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে স্থানীয় প্রশাসন।

এছাড়াও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমি কবিগুরুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণিকা ও পোস্টার মুদ্রণ করেছে। বাংলা একাডেমিসহ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল দপ্তর ও সংস্থাসমূহ এ উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের তত্ত্বাবধানে ঢাকার রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

মন্তব্য