রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়াকে সঙ্গে চায় বাংলাদেশ। মিয়ানমারে দক্ষিণ কোরিয়ার যে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ও বিনিয়োগ রয়েছে সেটি উভয় দেশেরে বন্ধুত্বকে ক্রমশ দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করেছে।
বিশেষ করে গত তিন বছরে উভয় দেশের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য পরিণতি লাভ করেছে। তাই বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে বোঝাতে ভূমিকা রাখুক দক্ষিণ করিয়া।বৃহস্পতিবার (১২ মে) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর’ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে দেশটির কাছে এমন প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।মিয়ানমারের সঙ্গে দক্ষিণ করিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানান তথ্য-উপাথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, উভয় দেশের সম্পর্ক অত্যান্ত দারুণ।
আমরা আশাকরি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোরিয়া মিয়ানমারে সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ককে কাজে লাগাবে।দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জং কিওনকে উদ্দেশ্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক ভালো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক বিনিয়োগকারী মিয়ানমারে বিনিয়োগ করেছেন।
মিয়ানমারে আপনাদের যে প্রভাব রয়েছে সেটিকে ব্যবহার করার জন্য আমি অনুরোধ করছি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে কোরিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে।
আপনারা এ বিষয়ে মিয়ানমারকে জোরালোভাবে চাপ দিন।মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হলেও এখনো প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি বলে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।
আমরা এ সংকটের সমাধান চাই এবং আপনাদের ভূমিকা নেওয়ার আহবান জানাই।মিয়ানমার আমাদের শত্রু নয়, বন্ধু দেশ উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, তাদের খারাপ সময়ে আমরা সহযোগিতা করেছি।পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। এর পর থেকেই আমারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের দিকে ক্রমশ ধাবিত হয়েছি।
বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া একে অপরের উন্নয়ন সহযোগী। বিশেষ করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের গুরুত্ব বাড়ছে। এ ছাড়া শিক্ষা, আইসিটি ও জ্বালানি খাতেও কোরিয়ার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়াতে ব্যবসায়িক পরিবেশ অনেক ভালো। আমাদের এখানে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর সেটি সহজে শেষ হয় না।
তিন বছরের একটা প্রকল্প শেষ হতে দেখা যায় দশ বছর লেগে যায়। আমাদের এখানে বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। যার কারণে খরচও বাড়ে।প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষতা রয়েছে এবং কিভাবে আরো দ্রুত ও টেকসইভাবে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়েও দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সফট লোনের সবচেয়ে বড় গ্রহীতাদের মধ্যে একটি এবং ২০২৬ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশে আমাদের আনুষ্ঠানিক স্নাতক হওয়ার পরেও অগ্রাধিকার অংশীদার দেশ হিসেবে থাকার আশা করি।ড. মোমেন বলেন, কয়েক দশক ধরে কোরিয়া বাংলাদেশের একটি প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে রয়েছে।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কঙওঈঅ) এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য, বিশেষ করে পরিবহন, স্বাস্থ্য, আইসিটি, শিক্ষা, পানি, চিকিৎসা, জ্বালানি, ইত্যাদি অগ্রাধিকারমূলক খাতের জন্য আমরা কোরিয়া সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ।দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়ন সহায়তা অবশ্যই আমাদের দর্শনীয় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে। বিশেষ করে গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে।
আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বরণ করি যে বাংলাদেশ ওডিএ’র অগ্রাধিকার অংশীদার দেশ হিসাবে।
দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রায় ১০ বছরের স্থবিরতার পরে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২১ সালে রেকর্ড উচ্চতায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে।
৯৫ শতাংশ বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত অগ্রাধিকারমূলক বাজার অ্যাক্সেসের জন্য আমরা দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের প্রশংসা করি।আমরা আশা করি যে, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার ২০২৬ সালের পরেও আমাদের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজারে প্রবেশাধিকার প্রসারিত করবে যাতে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে বাণিজ্যের অনুকূল ভারসাম্যসহ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়তে পারে।
কোরিয়া বাংলাদেশের জন্য পঞ্চম বৃহত্তম এফডিআই উৎস দেশ যেখানে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি এফডিআই স্টক রয়েছে।যদিও কোরিয়ান কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে মূলত টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। কোরিয়ান বিনিয়োগকারীরা এখন চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স, মোবাইল ফোন, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, অটোমোবাইল, আইসিটি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫০টিরও বেশি কোরিয়ান কোম্পানির উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। আশা করি, এই সংখ্যা আগামীতে আরো বাড়বে।
মন্তব্য