অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। দামের উত্তাপ প্রায় সব পণ্যেই। বাড়তি দামের দিক থেকে শিশু খাদ্যও পিছিয়ে নেই। বাজার অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, গত এক বছরে বিভিন্ন শিশু খাদ্যের দাম দেড় থেকে দুইগুণের মতো বেড়েছে। যেখানে এক বছর আগেও শিশুদের ১ কেজি ৮০০ গ্রামের ল্যাকটোজেন (১) দুধ বিক্রি হতো ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়ে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা! শিশু খাদ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে অভিভাবকরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, আমদানিনির্ভর পণ্য না হলেও লাফিয়ে দাম বাড়ছে শিশু খাবারের। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কমবেশি সবাই।
এদিকে পুষ্টিবিদরা বলছে, শিশু খাদ্যে যদি এমনভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে শিশুরা পুষ্টি হীনতায় ভুগবে। নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হবে শিশুরা, যা দেশের জন্য বড় রকমের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিশু খাদ্যের মূল্য কমানোর দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে দেখা গেছে, গত এক বছর পূর্বে যেখানে নেসলে কোম্পানির ৪০০ গ্রাম নান দুধের মূল্য ছিল ৭০০ টাকা, এখন বেড়ে হয়েছে ৯০০ থেকে ৯২৫ টাকা। এক বছর আগে ৪০০ গ্রাম ‘ল্যাকটোজেন’র টিনের জারের মূল্য ছিল ৪৫০ টাকা, তা বেড়ে বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৬৭০ টাকায়। ৪০০ গ্রামের ‘প্রাইমা’ দুধের টিনের জার ছিল ৪৫০ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬২০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি শিশু খাদ্যেই ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। আবার কিছু কিছু শিশু খাদ্যের দ্রুতই মূল্য বাড়বে এমনই আগাম ইঙ্গিত মিলছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। একইসঙ্গে বেড়েছে ‘সেরেলাক’র দামও। এক বছর আগেও মানভেদে ৪০০ গ্রামের সেরেলাকের মূল্য ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর বর্তমানে গ্রাহক পর্যায়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ থেকে ৪২৫ টাকায়।
ডানো ২৫০ গ্রামের পেকেট বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এই দুধ এক বছরে প্রতি পেকেটে বেড়েছে প্রায় ৩০ টাকা। নিডো ৭০০ গ্রামের জার বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ টাকায়, যা তিন মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪০ টাকায়। ২০০ গ্রামের কাগজের পেকেটের কমপ্লেন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। কমপ্লেন ৩৫০ গ্রামের চকোলেট ফ্লেবারের জারের বর্তমান বাজার মূল্য ৩৪০-৩৬০ টাকা।
বনশ্রীর বাসিন্দা মেহেদি হাসান সৌরভ। তার দেড় বছরের ছেলের জন্য ১ কেজি ৮০০ গ্রামের ল্যাকটোজেন দুধ এবং ৪০০ গ্রামের সেরেলাক কিনতে এসেছেন বাজারে। সব জিনিসের এরকম অস্বাভাবিক মূল্য দেখে কিনেছেন ৬৫০ টাকায় ৪০০ গ্রামের ল্যাকটোজেনের টিনের কৌটা। আর ৪২০ টাকায় সেরেলাক।
মেহেদি হাসানের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বাজারে কোন জিনিসটার দাম কমেছে! শুধু কমেছে মানুষে জীবনের দাম। এভাবে বাড়তে থাকলে মরা বাদে উপায় নেই। বাজারে পণ্যের দাম শুনে বাড়ি ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ইচ্ছে করে অনেক কিছু কিনব। কিন্তু যখন দাম শুনি, তখন মন খারাপ হয়ে যায়।
শিশুদের খাবারে এরকম অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে ভোরের আকাশের সঙ্গে কথা হয় খিলগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী বাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে যদি প্রতিদিন ৫০ কৌটা দুধের চাহিদা থাকে। কিন্তু সেখানে সাপ্লাই দেয় ১০ থেকে ১২ কৌটা দুধ। আমরা ঠিকমতো সাপ্লাই পাচ্ছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এগুলো অতি প্রয়োজনীয় বাচ্চাদের খাবার। অভিভাবকরা আমাদের কাছে এসে বলে রেট বাড়াক তবুও দেন। তখন আমরা দিতে পারি না। কারণ কোম্পানির সাপ্লাই বন্ধ।’ অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ কোম্পানি দুদিন পরপর রেট বাড়ায়। অনেক সময় ডিলার পর্যায়ে পুরোনো মূল্যের ওপরই নতুন মূল্য বসাচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, কোম্পানিগুলো এক ধরনের চালাকি করছে। বাজারে কৃত্তিম সংকট তৈরি করে তারা দাম বাড়াচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ ধরনের পণ্য আমদানিনির্ভর নয়। বেশিরভাগই বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। যদি দেশেই তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে এসব পন্যের দাম বাড়ছে কেন? এদিকে শিশু খাদ্য হিসেবে পরিচিত সুজি, ডিম, সাবু, কলা, তরল দুধের দামও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। শিশুদের পছন্দের অন্যতম খাবার নুডলসের দাম বাড়ছে হু-হু করে। চার প্যাকেটের ম্যাগি নুডলস দেড় মাসের ব্যবধানে ৬০ টাকার স্থলে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। সুজি প্রতি পেকেটের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা।
মন্তব্য