টানা ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যায় সিলেটের জনপদ এখন লণ্ডভণ্ড। নিম্নআয়ের মানুষ এখন চরম বিপাকে। বিধ্বস্ত বাড়িঘর সংস্কারের সামর্থ্য নেই, নেই একবেলা খেলে আরেক বেলা খাবারের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বন্যার কারণে সিলেটে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এটি প্রাথমিক তথ্য। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগর এবং জেলার ১৩টি উপজেলার সড়ক ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ খাতে প্রায় ৪০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও কৃষি খাতে ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গবাদিপশু-পাখি, খড়-ঘাসসহ এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকা। এছাড়াও জেলার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ ডুবে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জেলায় ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো জমি, ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টর সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ১২০টি রাস্তার ২৭৭ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, এ দপ্তরের আওতাধীন ৭২ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর বাইরে আরো ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার তিন উপজেলায় ১ হাজার ২০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১৩০টি ঘর। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
তিনটি উপজেলার মধ্যে কানাইঘাটে বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে ৩৫১টি ঘর। এর মধ্যে ২৮৯টি আংশিক ও ৬২টি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৮৩টি বাড়িঘর। এর মধ্যে ৬৮টি পুরোপুরি ও ৪১৫টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৬৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাড়িঘর ও বিভিন্ন খাতে বন্যায় সিলেট নগর এবং জেলায় অন্তত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখনই পুরোপুরি হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব মিলবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।’
পাউবো সিলেট জানিয়েছে, সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে এখনো পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এদিকে পানি কমলেও দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না মানুষের। বন্যাকবলিত এলাকায় বাড়তে শুরু করেছে পানিবাহিত রোগ। বেশির ভাগই ডায়রিয়া ও চর্ম রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পানি আরো কমলে রোগবালাই আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তবে আক্রান্ত বেশির ভাগই এখন পর্যন্ত বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ এখনো তেমন বাড়েনি। এদিকে বন্যাপরবর্তী সময়ে রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জেলায় ১৪০টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে সিভিল সার্জন অফিস। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও নগরে গঠন করা হয়েছে আরো তিনটি টিম।
সিলেটের সিভিল সার্জন এস এম শাহরিয়ার বলেন, ‘এখন পানিবাহিত রোগ বাড়ছে। আমাদের হিসেবে এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪৫০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। পাশাপাশি চর্ম রোগে ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন আরো কয়েকজন।’
মন্তব্য