-->
শিরোনাম

উন্নয়নের ধারায় ফেরার বাজেট

জাফর আহমদ
উন্নয়নের ধারায় ফেরার বাজেট

কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পরির্তনের লক্ষ্য নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে তিনি বাজেট উপস্থাপন করেন। এ বাজেট শেখ হাসিনা সরকারের চতুর্থ মেয়াদের চতুর্থ বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

বাজেটের আকার ৬,৭৮,০৬৪ কোটি টাকা

রাজস্ব আয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা

প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন ৭.৫ শতাংশ

মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ

ঘাটতি বাজেট ৫.৫ শতাংশ

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আসবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। আর অন্য উৎস হতে আসবে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। নতুন বছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি বছরে রয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এবারও ব্যয়ের সিংহভাগ স্থানীয় অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় থেকে হবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দেশে শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ব্যবসার ক্ষেত্র বৃদ্ধি, দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করণসহ সাম্য ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয়কর, শুল্ক ও মূসক প্রদানে অব্যাহত বা হ্রাস হারে প্রদানের সুবিধা দেয়া লক্ষ্য ঠিক করে বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনজীবনকে প্রশান্তি দেয়া। এ লক্ষ্যে খাদ্য উৎপাদন তথা কৃষিকে জোর দেয়া হচ্ছে।

গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জ¦ালানি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মতো কার্যক্রমকে। ভর্তুকিতেও দেয়া হচ্ছে জোর। ৯৬ টাকা দরে কিনে এনে প্রতিকেজি সার সরকারকে বিক্রি করতে হবে ৩৬ টাকা দরে। ফলে কৃষি খাতের ভর্তুকি ১২ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আগামীতে বাড়বে কৃষি খাতের ভর্তুকির পরিমাণও। বাজেট উপস্থাপনের আগে থেকেই অর্থনীতিবিদরা ইতোমধ্যে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে যেন কৃষি খাতে গুরুত্ব দেয়া হয়। এটি না হলে খাদ্যসামগ্রীর দাম বাড়বে। বাড়বে চালের উৎপাদন খরচ। ফলে কৃষি খাতের ভর্তুকি না বাড়ানোর কোনো বিকল্প নাই।

করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে থমকে দেয়। চলতি অর্থবছরেই করোনার অভিঘাত থেকে উত্তরণে বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকা- চলছে। এতে চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু উৎপাদন ও সরবরাহ ঘাটতি থাকার কারণে পুরো বিশ^ মূল্যস্ফীতিতে আক্রান্ত হয়। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। ঠিক একই সময়ে পরিস্থিতিকে আরও সংকটপূর্ণ করে তোলে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এ সময় অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডলার। এতে বাংলাদেশের ডলারের বিনিময় হার অস্থির হয়ে ওঠে। সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে আরও উত্তাল করে তোলে। এ অবস্থায় এবার উপস্থাপন হচ্ছে বাজেট। বাজার পরিস্থিতি মানুষের নাগালের মধ্যেই রাখাই বাজেটের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত দুই বছর করোনার উন্নয়ন ব্যয় কাটছাঁট করে স্বাস্থ্য খাতের অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। তবে এখন কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল হচ্ছে।

এ জন্য সরকার আগামী বছর উন্নয়ন খাতে ব্যয় বেশি করার পরিকল্পনা নিয়েও সাবধানে এগিয়ে যাওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শতাধিক পণ্যে অতিরিক্ত শুল্কারোপ করেছে। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।

প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক থেকে ধার করা হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানাবিধ অনিশ্চয়তার মধ্যে নতুন বাজেটে অর্থমন্ত্রী ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে জোগান দেয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। তারপরও তার আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ঘাটতির এই পরিমাণ আগের যেকোনো বছরের তুলনায় বেশি। অভ্যন্তরীণ উৎস ও বৈদেশিক ঋণ নিয়ে অর্থমন্ত্রীকে এই ঘাটতি পূরণ করা হয়। নতুন বাজেটে বিদেশি ঋণের নির্ভরতা অনেকটাই বাড়ানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এবার বিদেশ থেকে ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা আসবে বলে আশা করছেন। আর অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা ঋণ করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনার কারণে গত দুই বছরে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি জনতি কারণে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের ধাক্কা সামাল দিতে সংযতম শুরু করেছে। মানুষ বেশি পরিশ্রম করে জীবন চালাতে হিমসিম খাচ্ছে। কর্মহীন এসব মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা, সরকারের খাদ্য মজুত বাড়িয়ে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। রাজস্ব আয় বাড়ানো, চলমান বৈশ্বিক সংকট, ডলার সংকট, অগ্রাধিকার পাওয়া প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব সংগ্রহ, বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমানো, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো ইত্যাদি হবে সরকারের এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য।

বৈশ্বিক আয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকে পরিনত হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা মোকাবিলাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। করোনাকালে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চায়নেরও ভূমিকা রাখছে। সে বিবেচনা থেকে উদ্যোগ থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮ লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৫ লাখ ২০ হাজার মানুষের বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনার জানান অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আগামীতে বেশি পরিমাণে অভিবাসনে উৎসাহী করার লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলা পর্যায়ে ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র্র নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া ৮ লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং ৫ লাখ ২০ হাজার জনকে বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতা উন্নয়

মন্তব্য

Beta version