-->
শিরোনাম
‘বিশ্বের সব শহরের একটি সময়সীমা আছে কিন্তু ঢাকার নেই’

রাত ৮টার পর বিশ্রামে যাবে রাজধানী ঢাকা

শহরটির বিশ্রাম কেন দরকার, এর প্রভাব কী হবে

ভোরের আকাশ ডেস্ক
রাত ৮টার পর বিশ্রামে যাবে রাজধানী ঢাকা
ঢাকায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ বাস করে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। ছবি-বিবিসি বাংলা

যানজট ও নির্মাণ কাজে বিপর্যস্ত ঢাকা শহরকে স্বস্তি আর বিশ্রাম দিতে আগামী পহেলা জুলাই থেকেই রেস্তোরাঁ ও ঔষধের দোকানের মতো জরুরি বিষয়গুলো ছাড়া অন্য বাণিজ্যিক স্থাপনা রাত আটটার পর বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। খবর- বিবিসি বাংলার।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাত আটটার পর দোকানপাট শপিং মলসহ যেসব জায়গায় জরুরি সেবা দেয়া হয় না সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে এবং এর ফলে রাত্রিকালীন যানজট ছাড়াও দূষণ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকায় এখন রাত ১০টার পর অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে এবং এর ফলে শহরের প্রবেশপথগুলো তীব্র যানজটের পাশাপাশি শব্দ ও বায়ুদূষণ অনেক বেড়ে যায়।

ঢাকা শহরকে বিশ্রাম দেয়ার পরিকল্পনার ব্যাখ্যা করে গত শুক্রবার ঢাকায় এক সেমিনারে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, শহরের ব্যবস্থাপনার জন্যও সময় দরকার।

করোনার সময় ঢাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি উজ্জ্বল হয়ে ওঠার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, তখন প্রকৃতি নবউদ্যোমে জেগে উঠেছিলো।

তার মতে, বিশ্বের সব শহরের একটি সময়সীমা আছে কিন্তু ঢাকার নেই। এবং তিনি জানিয়েছেন যে এ বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকের সাথে আলোচনাও করেছেন তারা।

প্রসঙ্গত, ঢাকায় এক সময় রাত আটটার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার নিয়ম চালু ছিলো। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ থেকেও এই সময়ে দোকানপাট আবার বন্ধ রাখার সংস্কৃতি চালুর অনুরোধ করা হয়েছিলো।

এখন সাধারণত ঢাকায় মধ্যরাত পর্যন্ত প্রায় সব ধরণের দোকানপাট খোলা রাখার প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে যানজট যেমন মধ্যরাত পর্যন্ত লেগে থাকে, তেমনি দিন রাতের গড় তাপমাত্রাও কমে আসছে।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে যে হারে তাপমাত্রা বাড়ছে সেই ধারা অব্যাহত থাকলে রাজধানী ঢাকাসহ পাঁচটি বড় শহর আগামী কয়েক বছরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে।

গত ২০ বছরে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস যেখানে সারা বিশ্বে তাপমাত্রা-বৃদ্ধিকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য লড়াই চলছে বলে এই গবেষণাটি জানিয়েছে।

আর শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল।

অথচ পরিবেশ অধিদফতরের জরিপে দেখা যায় দেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় শব্দের মানমাত্রা ১৩০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে।

শব্দ দূষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে উঠে এসেছে রাজধানীর পল্টন , শাহবাগ ও ফার্মগেট, মতিঝিল, রামপুরাসহ কয়েকটি এলাকার নাম।

যানবাহনের হর্ন, ভবনের নির্মাণকাজ, কল-কারখানা, মাইক ব্যবহার এবং, বিশেষ করে, ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে একসঙ্গে কয়েকশ গাড়ি হর্ন বাজানোকে শব্দ দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার জন্যই শহরের কাজকর্মের সময়সীমা নিয়ে নতুন করে চিন্তা করা দরকার।

ঢাকায় বায়ুদূষণ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ছবি-বিবিসি বাংলা

 

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন, শহরের বিশ্রাম কেন দরকার

বাংলাদেশ প্লানার্স ইন্সটিটিউটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডঃ আদিল মুহাম্মদ খান বলছেন, ঢাকায় দিনের চেয়ে রাতে বেশি ধূলি-দূষণ হয় এবং পরিবেশের যত সূচক আছে তার সব দিক থেকেই ঢাকা পিছিয়ে আছে কারণ শহরটি প্রতিনিয়ত নিপীড়িত হচ্ছে।

‘নিউইয়র্ক শহরের হয়তো বিশ্রাম দরকার হয় না কারণ পরিবেশসহ তাদের সব ব্যবস্থাপনার সূচক অত্যন্ত উঁচুতে। কিন্তু ঢাকার ক্ষেত্রে তা হয় না।

তাই এ শহরকে বিশ্রাম দেয়া দরকার,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. খান, যিনি একজন নগর পরিকল্পনাবিদ, ‘তবে একই সঙ্গে শহরের উপর থেকে চাপ কমাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কোনটি কখন শুরু হবে সেটির সমন্বয় দরকার।’

তিনি বলেন, ঢাকায় দিনের চেয়ে রাতেই বেশি ধূলা ছড়ায় এবং শব্দ ও বায়ু দূষণের দিক থেকে বিবেচনা করলে শহরটি ব্যাপকভাবে দূষিত।

‘এই অবস্থায় শহরটিকে কিছুটা বিশ্রাম দেয়া দরকার। তবে এ জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনাও থাকা দরকার, যাতে দিনের কিছু বিশেষ সময়ে যেন অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।’

বুয়েটের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আফসানা হক বলছেন, আগে যখন রাত আটটায় দোকানপাট বন্ধ হতো, তখন যান চলাচলসহ বেশ কিছু বিষয়ে তার একটি সুফল পাওয়া যাচ্ছিলো ।

‘শহরকে স্বস্তি দিতে হবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। শহরমুখী মানুষের স্রোত যদি শহরের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হয় তাহলে সেই শহর টিকবে কীভাবে?

অন্যদিকে শহরের মধ্যে জায়গা কম তাই অল্প জায়গার বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে,’ তিনি বলেন।

‘এতে শহর যেমন বিশ্রাম পাবে তেমনি নাগরিকরাও দরকারি সব সেবা পাবে কোনো কাজ ব্যাহত হওয়া ছাড়াই।’

তবে বিশ্রামটি যেন কার্যকর হয় এবং তাতে শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিময়তা যাতে নষ্ট না হয় সেদিকেও গুরুত্ব দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।

নাগরিকরা প্রয়োজনীয় সব সেবা পাবে আবার শহরের পরিবেশ স্বস্তিকর হবে - এই চিন্তা থেকেই শহরের কার্যকর বিশ্রাম নিয়ে একটা পাইলট প্রজেক্ট করে দেখা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কার্যকর বিশ্রামের জন্যই কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা আরোপ করা দরকার।

এখন মধ্যরাত পর্যন্ত সব খোলা না রেখে বরং খুব জরুরি নয় এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো রাত আটটার মধ্যে বন্ধ করার মাধ্যমেই এর সূচনা হলো বলে মনে করছেন তারা।

মন্তব্য

Beta version