ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতি স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানি এ দেশীয় দোসরদের গাত্রদাহ হয়ে উঠেছে।
তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টসহ দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
মন্ত্রী অপশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
মন্ত্রী আজ শনিবার (১১ জুন) ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভুক্তভোগী ও প্রকৃত অপরাধী শীর্ষক ভিকটিমদের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি (অব) শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস বল, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কাজল দেবনাথ, নির্মূল কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আইন সম্পাদক এডভোকেট নাসির মিঞা প্রমূখ।
সম্মেলন সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহীদসন্তান আসিফ মুনীর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, লেখক মারুফ রসুল।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে প্রতিটি মানুষের সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, দেশ যত বেশি ডিজিটাল হবে ডিজিটাল অপরাধ তত বেশি বাড়বে।
যে কোনো অপরাধ প্রতিরোধে আইনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপরিহার্য।
তিনি আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ রোধে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে স্বার্থন্বেষী মহল কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করে আসছে।
অতীতে এ ধরনের অনেক ঘটনা এ দেশে ঘটেছে। একাত্তরে আমরা স্বাধীন হয়েছি বটে কিন্তু এখনো মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ চলমান।
মন্ত্রী, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আর কোনো মানুষ যেন ভিকটিমাইজ না হয় সেজন্য দেশের আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল অপরাধ আদালতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃত্বে আটটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল আইনজীবী প্যানেল তৈরির পরামর্শ দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র সমাজ, আইন বিরোধী যে কোনো কর্মকাণ্ড হলে এবং আমরা যদি তার রিপোর্ট পাই তাবে তার বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার সক্ষমতা আমরা ইতোমধ্যে অর্জন করেছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন ‘আমরা কোনোভাবেই আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কুতি দুর্বৃত্তদের হাতে যেতে দিব না।
আমাদের সংগ্রাম চলবেই এই সংগ্রামের সূচনা করতে হবে সামাজিক ভিত্তিতে। আমাদের সকলকে একযোগে এদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে তবেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারব।'
আরোমা দত্ত এমপি বলেন, ‘ অনেক কষ্টের বিষয় যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ দিনের পর দিন ভুগছে।
যারা আইনটি প্রয়োগ করছে তারাও হয়তো এটা জানে না। আইনটি রাষ্ট্রের উপকারের জন্য করা হলেও এখন এটি অনেক মানুষের ক্ষতি করছে।
এই মিথ্যা মামলাগুলো থেকে ভিকটিমদেরকে যেন মুক্তি দেয়া হয়, আইনটিকে যেন আবার রিভিউ করা হয় এটা সরকারের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ।’
মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি (অব:) শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রের শিকার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভিকটিমরা আমাদের এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন।
যাদের নিরাপত্তার জন্য আইনটি প্রণীত হয়েছিল সেই আইনে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কারানির্যাতন ভোগ করেছেন প্রধানত সংখ্যালঘু সনাতনধর্মালম্বীরা।
এদের কেউ শিক্ষক, কেউ ছাত্র, কেউ দোকান কর্মচারী, মৎস্যজীবী কিংবা ক্ষৌরকার। যে বালক নিজের নাম লিখতে শেখেনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সে ফেসবুকে নাকি বিশাল পোস্ট দিয়েছে ইসলাম ধর্ম অবমাননা করে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভিকটিম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস (আইনজীবীর মাধ্যমে প্রদত্ত) বলেন আমি একজন নিরীহ মৎস্যজীবী।
জলাশয় থেকে মাছ আহরণ করে বিক্রিত আয় থেকে বৃদ্ধা মাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনোমতে জীবনধারণ করি।
মিথ্যা অভিযোগে সাম্প্রদায়ীক সহিংসতার শিকার হয়ে এবং তথ্য ও যোগাযোগ আইনের মিথ্যা মামলার অভিযুক্ত আসামি হয়ে মামলার ঘানি টানতে টানতে এখন আমি নিঃস্ব।
অনুষ্ঠানে হৃদয় মণ্ডল, ঝুমন দাশ, রুমা সরকারসহ ভুক্তভোগীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
মন্তব্য