আগামীকাল বুধবার (১৫ জুন) সারাদেশে শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২’ কার্যক্রম।
এ কার্যক্রম চলবে আগামী ২১ জুন পর্যন্ত। প্রায় ১১ বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ জনশুমারি বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ জনশুমারি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে।
আর এবারই প্রথম বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদেরও শুমারির আওতায় আনা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগের আদমশুমারিগুলোর তথ্য খাতা-কলমে সংগ্রহ করা হলেও এবারই প্রথমবারের মতো ডিজিটাল পদ্ধতিতে জনশুমারি কার্যক্রম পরিচালিত হতে যাচ্ছে।
একটি ওয়েবভিত্তিক ইনটিগ্রেটেড সেনসাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইসিএমএস) প্রস্তুতসহ জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমে (জিআইএস) গণনায় এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের কন্ট্রোল ম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশে কত বিদেশি কাজ করেন, এবারের শুমারির মাধ্যমে তা জানা যাবে। তা ছাড়া বিদেশে কত বাংলাদেশি বসবাস করেন তাও জানা যাবে।
প্রতিটি খানায় গিয়ে জানতে চাওয়া হবে, কার পরিবারে কতজন বিদেশে থাকেন।
জানা গেছে, এবারের জনশুমারির তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে শুমারি কর্মী হিসেবে সারাদেশে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার গণনাকারী, ৬৪ হাজার সুপারভাইজার এবং বিবিএসের সাড়ে ৪ হাজারের অধিক কর্মচারীকে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়াও বিবিএস বহির্ভূত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রায় ৯শ’ কর্মচারীও জোনাল অফিসার হিসেবে জনশুমারি কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করবেন।
আর দেশের ভাসমান মানুষের তথ্য সংগ্রহের জন্য রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত শুমারির কার্যক্রম চলবে।
যিনি যেখানে থাকেন, সেখান থেকেই তথ্য সংগ্রহ হবে। আর একই ব্যক্তির একাধিকবার তথ্য সংগ্রহ করার সুযোগ নেই।
এ ছাড়া তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহৃত ট্যাবের সঙ্গে ভৌগোলিক তথ্যবিজ্ঞান (জিআইএস) ব্যবস্থার সংযোগ থাকছে এবার।
ফলে গণনা কার্যক্রমে ফাঁকি দেওয়ার এবং জনগণের তথ্য হ্যাক করারও সুযোগ নেই।
জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন ভোরের আকাশকে জানান, জনশুমারি ও গৃহগণনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসংখ্যা ও দেশের বাসগৃহের সংখ্যা নিরূপণ করা।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ সহজতর হয়।
এ ছাড়া সহজ ও সুনির্দিষ্টভাবে শুমারির গণনা এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং কোনো খানা গণনা থেকে বাদ না পড়া বা একাধিকবার গণনা না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ও জিও কোড সমন্বয় করে ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, শুমারিতে সঠিক তথ্য প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক গান, নাটিকা, শুমারি কাউন্ট ডাউন, ডকুমেন্টারি দেশের সব সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
পাশাপাশি জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে স্থানীয় কেবল টিভিতে জনশুমারি প্রচার, প্রচার সামগ্রী বিতরণ, ডকুমেন্টারি প্রচারসহ শুমারি চলাকালে মাইকিং কার্যক্রমও চলছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো সূত্র জানায়, কেউ এই শুমারি থেকে যাতে বাদ না পড়েন সেজন্য নির্দিষ্ট হটলাইনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
যে কেউ সেখানে অভিযোগ দিতে পারবে। তবে তথ্য পুরোপুরি যাচাই করার সুযোগ কম।
আর জনশুমারি সঠিকভাবে সম্পন্নের জন্য প্রত্যেক উপজেলায় পরীক্ষার মাধ্যমে স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
যেন সহজে সবাই ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়নে জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রয়োজন রয়েছে।
দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরে এবং দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জনশুমারি গুরুত্বপুর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৭৪ সালে দেশে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা পরিচালিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় দশ বছর পরপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ এবং ২০১১ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ এবং পঞ্চম আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, এবারের জনশুমারির জন্য এর আগে তিন বার সময় নির্ধারণ করা হলেও তা পেছানো হয়। প্রথমবার শুমারির জন্য ২০২১ সালের ২ থেকে ৮ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর ও তৃতীয় দফায় ২৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময় নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু ট্যাব ক্রয়সংক্রান্ত জটিলতায় তৃতীয় দফার নির্ধারিত সময়ও স্থগিত করা হয়।
মন্তব্য