-->

জেআরসি ছাড়াই জেসিসি বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-ভারত

-তিস্তায় জল না গড়ালেও কুশিয়ারায় তাগাদা -চূড়ান্ত হবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর -পিকেকে দ্রুত ফেরত চাওয়া হবে সহযোগিতা

তরিকুল ইসলাম
জেআরসি ছাড়াই জেসিসি বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ-ভারত
প্রতিকী ছবি

যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক ছাড়াই নয়াদিল্লিতে আজ রোববার যৌথ পরামর্শক (জেসিসি) সভায় বসছে বাংলাদেশ ও ভারত। যৌথ পরামর্শক সভায় বসার আগেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকটি সম্পন্ন করার তাগাদা দেওয়া হয়েছিল দেশটিকে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসেও বৈঠকে রাজি করানো যায়নি ভারতকে।

আজকের সপ্তম জেসিসির সভার আয়োজক ভারত। যদিও এই সভা গত ৩০ মে হওয়ার কথা ছিল। যা শেষ সময়ে এসে পিছিয়ে দিয়েছিল ভারত। ২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে প্রথম বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ পরামর্শক (জেসিসি) সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে গত ১০ বছরে এখন পর্যন্ত ৬টি সভা সম্পন্ন করতে পেরেছে উভয় দেশ। করোনা মহামারির কারণে সর্বশেষ ২০২০ সালে ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে ৬ষ্ঠতম বৈঠকটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সভায় তিস্তায় জল গড়ানো ইস্যুতে অলাদা কোনো অগ্রগতি নেই। তবে কুশিয়ারা নদী থেকে পানি উত্তোলন ইস্যুতে সমাঝোতা সইয়ে তাগাদা দেবে ঢাকা। চূড়ান্ত হবে প্রধানন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরের দিনক্ষণ। এছাড়া ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পিকে হালদার) দ্রুত ফেরাতে দেশটির সহযোগিতা চওয়া হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, গত মাসে আসামে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আমি বলেছিলাম জেআরসি বৈঠক করার জন্য। কিন্তু তারা এজন্য রেডি না বলে সেটা হয়নি। যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকটি না হলেও পরামর্শক সভায় এ নিয়ে আমরা আলোচনা তুলব।

বৈঠকে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সবকিছু ঠিক থাকলে বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে ১৮ জুন রাতে নয়াদিল্লি পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় বিভাগ ও সংস্থার সিলেক্টিভ এবং দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এরই মধ্যে নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। সমানসংখ্যক সদস্যর প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস বলেছেন, তিস্তা, কুশিয়ারা ও ছয়টি অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনসহ সব নদীর ইস্যুটি বৈঠকে গুরুত্ব পাচ্ছে। লাইন অব ক্রেডিট নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে জটিলতাগুলো আছে, সেটি নিয়ে এর আগে অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে। আসন্ন বৈঠকে জটিলতাগুলো কীভাবে দূর করা যায় এ নিয়ে আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, বৈঠকে আইসিটি, ফুড সিকিউরিটি, রিনিউয়েবল এনার্জি, ক্লাইমেট ইস্যু, ট্রেড, কানেকটিভিটি, কমার্স সেক্টর কো-অপারেশনসহ উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত ‘কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট’ (সিপা)-এর সম্ভব্যতার বিষয়ে লাভ ক্ষতির হিসাব- নিকাশ করছে উভয় দেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, তিস্তাসহ বেশ কিছু অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বাংলাদেশের জন্য বারডেম ইস্যু। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরও আসন্ন। বাংলাদেশ চায় দীর্ঘ দিনের ঝুলে থাকা ইস্যুগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি। বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ পরামর্শক (জেসিসি) সভার আগে যদিও দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য যৌথ কমিশনগুলোর বৈঠক এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

সরকারের দায়িত্বশীল অপর কর্মকর্তারা বলেছেন, বৈঠকের বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু কেন এক টেবিলে বসা যায়নি তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা এ নিয়ে আপত্তির কোনো বিষয় ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।

যদিও অভিন্ন নদীগুলোর পানি প্রবাহ নিশ্চিতে চলমান অলোচনায় ভারতের কোনো অনাগ্রহ লক্ষ করা যায়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে বৈঠকগুলো রুটিন ওয়ার্ক করা না গেলেও সুবিধাজনক সময়ে বৈঠক সেরে নিয়েছে উভয় দেশ।

মন্তব্য

Beta version