-->
শিরোনাম

সিলেটে বানের জলে বন্দি লাখ লাখ মানুষ

কামরুল ইসলাম মাহি
সিলেটে বানের জলে বন্দি লাখ লাখ মানুষ

চোখের পলকেই বাড়ছে পানি। পানি দেখে খাটের উপর তুলছেন খাট, সেই খাটও তলিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে সাপ এবং নানা ধরণের বিষাক্ত পোকামাকড়ের ভয় তো আছেই। নেই বিদ্যুৎ, বন্ধ হয়ে আছে মুঠোফোন। চুলোয় জ্বলছে না আগুন। খাবার নেই। এ যেন 'মহাবিপদে' লাখ লাখ মানুষ।

সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে। পৌঁছে দিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে। এছাড়া খাদ্য এবং চিকিৎসাসেবাও দিয়ে যাচ্ছে।

শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিভাগীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট নগরীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মানুষ।

এদিকে সিলেটের জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, লামাকাজী, বিশ্বনাথ এবং ওসমানীনগরসহ সবকটি এলাকায় পানিতে টইটুম্বুর করছে। অনেক জায়গায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার বেশ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেইসঙ্গে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

কোম্পানীগঞ্জের পাড়ুয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, আমার জীবনে আমি অনেক বন্যা দেখেছি। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার কখনো হয়নি। পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নেই।

জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা শাহিদ হাতেমী জানান, এই বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। একদিকে যেমন টানা বৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে পুরো উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ১১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শাকিল মোরশেদ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই আমার ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। কিন্তু এখন আমার ঘরে হাঁটুর ওপরে পানি। এই অবস্থায় বউ-বাচ্চা নিয়ে কার শরণাপন্ন হব? নিরাপদ আশ্রয় নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

বন্যার কারণে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আগে থেকেই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়স্থলে যাওয়ার জন্য এসব এলাকার লাখো মানুষ আকুতি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

তিনদিনের জন্য বন্ধ বিমান যোগাযোগ। বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি বন্যার পানি চলে আসায় বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, এই বৃষ্টিপাত সিলেট জেলায় আগামী ২ দিন অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি ঝরবে সোমবার (২০ জুন) পর্যন্ত।

তিনি আরও জানান, উজানের দিকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। যার প্রভাবে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জ জেলার সব জায়গায় বৃষ্টিপাত হবে। ২০ তারিখের পর কমার সম্ভাবনা থাকলেও এ মাসের শেষ দিক পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে।

অপরদিকে সিলেট নগরের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ ফিরতে শুরু করে। তবে এখন পর্যন্ত নগরের বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন আছে। বিদ্যুৎ নেই উপজেলাগুলোতেও।

শনিবার বেলা ১২টার দিকে নগরের কুমারগাওয়ে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিড লাইনের উপকেন্দ্রে পানি ঢুকে বিদ্যুৎহীন হয়ে পরে পুরো সিলেট। এছাড়া বৃহিস্পতিবার থেকেই বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে সুনামগঞ্জসহ সিলেটের কয়েকটি উপজেলা।

মন্তব্য

Beta version