শনিবার সকাল নয়টা থেকে রোববার সকাল নয়টা পর্যন্ত ভারতের আসাম, চেরাপুঞ্জি ও মিজোরামে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬২৭ মিলিমিটার। তাছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও বিভিন্ন পয়েন্টে কেটে দেওয়া হয়েছে বাঁধ।
ফলে উভয় জেলায় পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি। বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমায় সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ সচল হলেও দুই জেলাতেই বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক হয়নি। উপজেলাগুলোর সঙ্গে এখন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বেশির ভাগ এলাকায় সচল হয়নি মোবাইল নেটওয়ার্ক। চার্জ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে মুঠোফোন।
ফলে বন্যাদুর্গত এলাকায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন। দুই জেলায় ভূতুড়ে পরিবেশের মধ্যে সিলেটে ডাকাত আতঙ্ক দেখা দেয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুজব বলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে এসব জেলার বাইরে থাকা বন্যাকবলিত মানুষের স্বজনদের। এদিকে বন্যায় সুনামগঞ্জ ও সিলেটে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো দুই জেলায় এখন কোনো মাটি নেই। ফলে মৃত লাশ দাফন করতে না পেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি উঠেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রাথমিকে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির আরেক দফা অবনতি হয়েছে।
এরই মধ্যে দেশের আরো বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। সেগুলো হলো রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন ১২টি জেলা বন্যাকবলিত। প্রায় ৭০টি উপজেলায় বন্যা হয়েছে। বন্যায় প্রায় ৫০ লাখ পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থা কাজ করছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে দুর্গত মানুষদের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তার জন্য রোববার সকাল থেকে সেনাবাহিনী ও বিজিবি নামানো হয়েছে। এই জেলার ১০টি উপজেলাই এখন বন্যাকবলিত। সব মিলিয়ে বন্যাকবলিত সিলেট সুনামগঞ্জে দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে বানভাসি মানুষ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। অনেকের ঘরে থাকা খাবার ফুরিয়ে গেছে।
বিদ্যুৎ না থাকায় রান্নাবান্নাও বন্ধ। একটি মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে শত টাকায়। দিয়াশলাই বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। শহরের প্রতিটি নিচতলায় গলাপানি থাকায় কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
রাস্তায় পানির পরিমাণ আরো বেশি। বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। যারা নিত্যপণ্যের জন্য কোনো রকমে বের হচ্ছেন তাদের সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পানির কারণে দোকানপাট অনেকেই সচল রাখতে পারছেন না।
সরবরাহ কমেছে নিত্যপণ্যেরও। আবার নৌকার সংকটের কারণে ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় শতগুণ নৌকা ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থের অভাবে অনেকে বিপদ সামাল দিতে নৌকা পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারছেন না।
বৃষ্টি থেমেছে, পানি কমেছে সিলেটে: প্রায় ১০ দিন পর সিলেটে বৃষ্টি থেমেছে। নগরের পানিও কিছুটা কমেছে। আকাশ মেঘলা থাকলেও রোববার সকাল থেকে বৃষ্টি হয়নি। এতে অনেকেই আশা করছেন, হয়তো দ্রুত কাটতে শুরু করবে ভয়াবহ এই দুর্যোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে কিছুটা কমেছে, তবে বেড়েছে কানাইঘাটে। অন্য নদীগুলোর পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে।
স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ এই বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, দুই জেলায় এখন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি।
তিনি বলেন, ‘বন্যার পাশাপাশি বিদ্যুৎহীনতা ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি আরো বেড়েছে। উদ্ধার কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। প্রশাসন বানভাসি মানুষের সহায়তায় সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দুই জেলার বেশির ভাগ প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বিপদে পড়া মানুষের সঠিক তথ্য মিলছে না। প্রশাসন, গণমাধ্যম সবাইকেই তথ্য পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় শুক্রবার থেকে সিলেটে এবং শনিবার থেকে সুনামগঞ্জে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। শনিবার থেকে তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনীও।
এবার মৌলভীবাজারে বন্যা: সিলেট ও সুনামগঞ্জের মতো উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারে প্লাবিত হচ্ছে একের পর এক ইউনিয়ন। এতে সাত উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ আছে পানিবন্দি। এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এদিকে কুলাউড়া ও জুরী উপজেলায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা করেছে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। এমন অবস্থায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের উদোগে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সদর উপজেলায় খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের আংশিক অংশ প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়ার সদরসহ ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চণ্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে জেলার জুরী উপজেলায় গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এ উপজেলাধীন ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
কুলাউড়া আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গনি বলেন, ‘বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুলাউড়া উপজেলার ইসলামগঞ্জ এবং জুরীর নার্সারি ফিডারের বিদ্যুৎ সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে বিদ্যুৎ পুনরায় চালু করা হবে।’
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ায় জেলার ৯টি উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা।
বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে নিম্নাঞ্চল ও নদ-নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী চরাঞ্চলের মানুষজন। দুর্গম চরাঞ্চলের অনেক পরিবার নৌকা ও বাঁশের মাচানে আশ্রয় নিয়ে দিন পাড় করছে।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘ভারী বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মনিটরিং টিম ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় কক্ষ চালু করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বন্যাকবলিতদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৯৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১১ লাখ টাকা, শুকনো খাবার এক হাজার প্যাকেট, ১৭ লাখ টার শিশু খাদ্য ও ১৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলার রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বাকি উপজেলাগুলোতেও দ্রুত শুরু হবে।’
টানা বৃষ্টিতে আখাউড়ার ১২ গ্রাম প্লাবিত : তিন দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সীমান্ত এলাকার অন্তত ১২টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
পানির তীব্র স্রোতে কর্নেল বাজার এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। পানির তোড়ে বাঁধ সংলগ্ন পিচ ঢালাই সড়কের প্রায় ৩০ ফুট অংশ ভেঙে কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
রোববার সকালে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বৃষ্টি আর ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পানিতে মোগড়া ইউনিয়নের নিলাখাদ, ছয়গড়িয়া, খলাপাড়া, জয়নগর, মনিয়ন্দ ইউনিয়নের আইড়ল, ইটনা, খারকুট, বড় লৌহঘর, ছোট লৌহঘর ও বড় গাঙ্গাইল এবং আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিকাপুর, আবদুল্লাহপুর ও বঙ্গেরচড় গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আখাউড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. লুৎফুর রহমান বলেন, অতি বৃষ্টির কারণে বিদ্যালয় মাঠে পানি ওঠায় পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পানি সরে গেলে পরবর্তীতে শ্রেণি কার্যক্রম চালু হবে।
এদিকে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা জানান, আকস্মিক এ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ২৮টি পরিবারকে একটি স্কুলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদের ৩০ কেজি করে চাল ও নগদ ১ হাজার ৫০০ শত টাকা দেওয়া হবে।
নেত্রকোনায় বন্যার্তদের সহযোগিতায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন : নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিটি নদ-নদীর পানি।
প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য রোববার সকাল থেকে খালিয়াজুরী উপজেলায় সেনাবাহিনী ও বিজিবি কাজ করছে। সেখানে যারা পানিবন্দি তাদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ করছেন তারা।
এদিকে জেলার সবকটি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে করে পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ৪ লাখ মানুষ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৭৩ হেক্টর জমির আউশ ধান ও সবজি ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গ্রামের সড়কগুলো ডুবে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।
নেত্রকোনা ব্যাটালিয়নের (৩১-বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল এএসএম জাকারিয়া জানান, ‘রোববার সকাল থেকে আমরা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণের কাজ করছি।’
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপরে : উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ও কাজীপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রোববার সকালে পানি বৃদ্ধির তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান ও মেঘাই ঘাট পয়েন্টের পানি পরিমাপক ওমর আলী।
যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকা, চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব মানুষের মাঝে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাজীপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ও সিরাজগঞ্জ শহর বাঁধ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় সৃষ্ট ভাঙন রোধসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।’
বন্যাকবলিত এলাকায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সংযোগ স্থাপন : বন্যাকবলিত সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও উত্তরবঙ্গে জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন শুরু হয়েছে।
এ লক্ষ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নির্দেশে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ইন্টারনেটসহ নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে ভিস্যাট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গতকাল শনিবার ১২টি ভিস্যাট যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করা হয়।
রোববার নেত্রকোনা ও উত্তরবঙ্গে ভিস্যাট হাব স্থাপিত হয়েছে। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরকেও আরো ২৩ সেট ভিস্যাট যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে। এতে আরো ২৩টি বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপন করা যাবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বন্যাকবলিত এলাকায় নিয়োজিত সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রয়োজন অনুযায়ী আরো ভিস্যাট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে সক্ষম।
এর মাধ্যমে বন্যাকবলিত আরো এলাকায় জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপন করা যাবে। মুঠোফোন কোম্পানিগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সচল করার কাজেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করতে পারবে।
ভিস্যাটের মাধ্যমে দুর্যোগকালীন নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএসসিএল এরই মধ্যে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে, যেটি মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় টেলিযোগাযোগ সেবা চালু রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোবাইল অপারেটরগুলোকে বানভাসি মানুষদের জন্য তিনটি করে টোল ফ্রি নম্বর চালু করার নির্দেশে দিয়েছেন। নির্দেশনার আলোকে মোবাইল অপারেটরগুলো টোল ফ্রি নম্বর চালু করেছে। টোল ফ্রি নম্বরগুলো হচ্ছে- গ্রামীণফোন: ০১৭৬৯১৭৭২৬৬, ০১৭৬৯১৭৭২৬৭, ০১৭৬৯১৭৭২৬৮ রবি: ০১৮৫২৭৮৮০০০, ০১৮৫২৭৯৮৮০০, ০১৮৫২৮০৪৪৭৭ বাংলালিংক: ০১৯৮৭৭৮১১৪৪, ০১৯৯৩৭৮১১৪৪, ০১৯৯৫৭৮১১৪৪ এবং
টেলিটক: ০১৫১৩৯১৮০৯৬, ০১৫১৩৯১৮০৯৭, ০১৫১৩৯১৮০৯৮।
মন্তব্য