-->
শিরোনাম
আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘আমরা রোহিঙ্গা’

বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিশ্ব শরণার্থী দিবস আজ
ইউএনএইচসিআর ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে ‘আঁরা রোহিঙ্গা’ বা ‘আমরা রোহিঙ্গা’ শিরোনামে তিন সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী

আজ ২০ জুন বিশ্ব শরনার্থী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযথ মর্দাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক অঙ্গসংগঠন ইউএনএইচসিআর ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে আজ সোমবার থেকে ‘আঁরা রোহিঙ্গা’ বা ‘আমরা রোহিঙ্গা’ শিরোনামে তিন সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষে আয়োজিত প্রদর্শনী আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের অভ্যন্তরীণ জীবন ও জীবিকা কাছ থেকে দেখার সুযোগ সৃষ্টি করেছে এই প্রদর্শনী। দশজন রোহিঙ্গা আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় এ দৃশ্য উঠে এসেছে।

ডেভিড পালাজন ও আমেনা খাতুনের কিউরেশনে এ প্রদর্শনীর ৫০টি আলোকচিত্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্মৃতি, আশা, স্বপ্ন, বিশ্বাস, কর্মকুশলতা,সৌকর্য, দুঃখ, গ্লানি এবং ভালোবাসাকে তুলে ধরেছে।

এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আর্কাইভ থেকে ১১টি আলোকচিত্র এখানে সংযুক্ত হয়েছে যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাঙালি শরণার্থীদের জীবন ও জীবনের গল্পগুলো প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা ফটোগ্রাফার সাময়িকীর প্রকাশনায় দশজন মেধাবী রোহিঙ্গা শিল্পী তাদের শিল্পকুশলতার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ তৈরি করেছে।

যার মাধ্যমে দর্শকরা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারবেন। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর শতকরা ৫০ ভাগের বেশি শরণার্থীর বয়স ১৮ বছরের কম এবং তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত।

কারিগরী শিক্ষার সুযোগও তাদের কম আর উ”চশিক্ষার সুযোগ একেবারেই নেই। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি সম্মুখীন হয়েও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর তরুণরা নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং অন্যদের মধ্যে সে দক্ষতা ছড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।

তাদের পেছনের বেদনাদায়ক অতীতকে ভুলে আবেগ ও অনুভূতির শক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য তারা শিল্পকে বেছে নিয়েছে। তারা তাদের শিল্পে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবনকেই ফুটিয়ে তোলে যার ফলে ছবি আঁকা বা আলোকচিত্র গ্রহণের মাধ্যমে তারা তাদের সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকেও ধরে রাখতে পারছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিরা তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয় এবং আজও যুদ্ধের সে স্মৃতি বাঙালি জাতিকে দশ লক্ষ রোহিঙ্গা জনতাকে আশ্রয় প্রদানের জন্য প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। প্রদর্শনীতে ইতিহাসের এ প্রেরণার উপর আলোকপাত করা হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনা নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে থেকেও আরো প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।

এদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কয়েক দফা উদ্যোগের পরও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার নিশ্চয়তা নিয়ে তারা আদৌ নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে পারবে কিনা, তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর এ দিবসটি পালন করা হয়। এবারের শরণার্থী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘নিরাপত্তা খোঁজার অধিকার’। ইউএনএইচসিআরের তথ্যানুযায়ী, গত এক দশক ধরে প্রতি বছর শরণার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।

২০২১ সালের শেষে বিশ্বে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৯ কোটি ৯৩ লাখে। কিন্তু ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এই সংখ্যা গত মে মাসে ১০ কোটি ছাড়ায়। বিশ্বে এখন প্রতি ৭৭ জনের একজন শরণার্থী। বিশ্বে শরণার্থীদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশ সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।

মন্তব্য

Beta version