-->
শিরোনাম
পদ্মা সেতু

রাজধানীতে বাড়বে গাড়ির চাপ

ভোগান্তি কমবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্টে

শাহীন রহমান
রাজধানীতে বাড়বে গাড়ির চাপ

মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার গাড়ি পারাপার হয় ফেরি দিয়ে। অপরদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন ফেরিতে পারাপার হয় ১০ থেকে ১২ হাজার গাড়ি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মাওয়া রুটে ফেরি পারাপার বলতে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতু হওয়ার পর এখন এই রুটে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাবে অনেক বেশি। যার বাড়তি চাপ পড়বে রাজধানীর ওপর। ফলে রাজধানীর এই অংশে যানজটের ব্যাপক আশঙ্কা বেড়ে যাবে। তারা বলেন, এখন বিষয়টির ওপর নজর দিতে হবে। অপরদিকে তারা বলেন, ভোগান্তি কমবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে। এটা আশার খবর।

 

পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে দেশ। এই অঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। ফলে সড়ক পথে সহজেই ঢাকা পৌঁছানো সহজ হবে।

 

অন্যদিকে সময় ও শ্রম দুটোই কমবে সেতুর কারণে। দেশে বাণিজ্য ও শিল্প ব্যবস্থাপনার এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে। যোগাযোগব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকা পৌঁছাতে সক্ষম হওয়ার কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশির ভাগ পরিবহণ এই সড়ক ব্যবহারের কারণে ঢাকায় পরিবহণ চাপ বাড়বে অনেক।

 

বিআইডাব্লিউটিসির পরিচালক এস এম আশিকুজ্জামানের মতে, মাওয়ার দুই-আড়াই হাজার গাড়ির বিপরীতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দিয়ে প্রতিদিন ১০-১২ হাজার গাড়ি যাওয়া-আসা করে। এর মাঝে বাস আছে গড়ে ১২শ থেকে ১৩শ। তবে আশার কথা এই যে সেতুটি চালু হলে যানবাহনের চাপ কমবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আরেক প্রবেশদ্বার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে। এতে ঘাটে যানজট আর যাত্রী ভোগান্তি কমবে। ফলে এ নৌ-রুটেও স্বস্তি ফেরাবে পদ্মা সেতু। তাই প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে পদ্মা সেতুর সুবিধা এ রুটে মিলবে।

 

তবে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজধানীতে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়া নিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগে যেসব পরিবহণ পাটুরিয়া রুটে চলাচল করত এর বড় অংশ এখন পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকার যানজট তীব্র হবে। বিআইডাব্লিউটিসির পরিচালক এস এম আশিকুজ্জামানের মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে পাটুরিয়া রুটের অন্তত ২০-২৫ শতাংশ গাড়ি চলে আসবে পদ্মা সেতুতে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ অনেক আগে থেকেই যানজটপূর্ণ এলাকা। তবে ২০১৩ সালে উদ্বোধন হওয়া মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কারণে ফ্লাইওভারে চলাচলকারী মানুষ এই যানজট থেকে মুক্তি পায়। ফ্লাইওভারের কারণে নিচেও কমে যায় গাড়ির চাপ। সম্প্রতি সময়ে এই এলাকায় যানজট এমনিতেই বেড়ে গেছে। বিশেষ করে রাজধানী থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং সিলেটগামী পরিবহণ গাড়ির চাপ সব সময় রয়েছে। এর ওপর মাওয়ায় পদ্মা সেতুর কারণে বাড়তি গাড়ির চাপ তৈরি হবে রাজধানীর এই এলাকায়। যার প্রভাব পড়বে এই অংশেও।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে প্রতিদিন অতিরিক্ত আড়াই থেকে ৩ হাজার গাড়ির চাপ বাড়বে যাত্রাবাড়ীতে। এসব গাড়ি শহরে ঢুকতে ফ্লাইওভার ব্যবহার করতে পারবে। তবে চট্টগ্রাম-সিলেট বিভাগের দিকে যেতে পার হতে হবে যাত্রাবাড়ীর বেহাল ভাঙাচোরা রাস্তা। কারণ, এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে উঠে ডেমরামুখী সড়কে নামার কোনো ব্যবস্থা নেই। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ফ্লাইওভারে উঠলে সায়েদাবাদ, গুলিস্তান বা চানখার পুল দিয়েই কেবল নামা যাবে।

 

অপরদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অধিকাংশ বাস ছাড়ে গাবতলী থেকে। বিআইডাব্লিউটিসির হিসাবে প্রতিদিন ১২শ থেকে ১৩শ গাড়ি এই টার্মিনাল থেকে যাওয়া-আসা করে। এই গাড়িগুলোর জন্য পদ্মা সেতু ব্যবহারের সঠিক রুট নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে গুলিস্তান হয়ে গেলে গাড়ির চাপ যেমন বাড়বে। যানজট তৈরি হবে অনেক বেশি। তবে সংশ্লিষ্টরা বিকল্প হিসেবে কেরানিগঞ্জের রুটের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু তার অবস্থাও ভালো না। সরু ও ভাঙ্গাচোরা। গাবতলী এলাকার পরিবহণ শ্রমিকরা জানান, এখান থেকে কোন রুট দিয়ে পদ্মা সেতু ব্যবহার করব তার ব্যবস্থা নেই। শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। এই গাড়িগুলো কোথা থেকে গিয়ে পদ্মা সেতুতে উঠবে, এর কোনো দিকনির্দেশনা এখন নেই।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছে বিকল্প ব্যবস্থা না রাখা হলে সায়েদাবাদে এতগুলো গাড়ি অ্যাকমোডেশনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে না। বেশি গাড়ি রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে বুয়েটের অধ্যাপক এবং গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাসসুল হক বলেন সেতু উদ্বোধনের আগেই চাপ বাড়ছে। মাওয়াপ করিডর দিয়ে যেসব বাস বা পরিবহণ আসছে, ঢাকায় ঢুকতে গিয়ে এর যে রোড নেটওয়ার্কটা আছে, সেটা কিন্তু নিজস্ব লোকাল ট্রাফিকের ক্যাপাসিটিটাই এখন ধারণ করতে পারছে না। সেতু হলে এই চাপ আরো বেড়ে যাবে। তখন ঢাকার যে রোড ক্যাপাসিটি তা ধারণ করতে পারবে না।

মন্তব্য

Beta version