-->
শিরোনাম
পদ্মা সেতুর সুফল

যশোরের গদখালীর তাজা ফুলের সুগন্ধি ছড়াবে রাজধানীতে

এম সাইফুল ইসলাম
যশোরের গদখালীর তাজা ফুলের সুগন্ধি ছড়াবে রাজধানীতে

যশোরের গদখালীকে বলা হয় ফুলের রাজধানী। দেশের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ ফুল উৎপাদন হয় গদখালীতে। এবার পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বিশেষ সুফল পাবেন এই অঞ্চলের ফুলচাষিরা। গদখালীর ফুল এখন অল্প সময়ে রাজধানীতে পৌঁছাবে। তাই রাজধানীবাসী এখন তাজা ফুলের সুগন্ধি নেবেন ভিন্ন আমেজে। এজন্য খুশি ফুলচাষিরা আর অন্যদিকে তাজা ফুলের গন্ধে মন ভরবে ফুলপ্রেমীদের।

 

জানা গেছে, যশোর শহরে থেকে ২৫ কি.মি. দূরে অবস্থিত গদখালী। এটি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার একটি ইউনিয়ন। সেখানকার শের আলী সরদারের হাত ধরে ১৯৮২ সালে ফুল চাষ শুরু হয় এই অঞ্চলে। শুরুর দিকে শুধুমাত্র রজনীগন্ধার চাষ হতো। ফুল চাষকে কেন্দ্র করে গদখালীর এখন পার্শ্ববর্তী পানিসারা, মঠবাড়ী, সৈয়েদপাড়া, টাওরা, বেনেয়ালী গ্রামেরও ফুল চাষ হয়। ক্রমেই ফুল চাষির সংখ্যাও বাড়ছে। তারা গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ইত্যাদি ফুল চাষ করে থাকেন। তবে চাহিদা বেশি হওয়ায় গোলাপ, রজনীগন্ধা, জারবেরা ফুল বেশি চাষ হয়। এর বাইরেও পলি হাউস বা ফুল চাষের বিশেষ ঘর তৈরি করে এখন চাষ করা হয় বিদেশি ফুলও। বিশেষ ঘর তৈরি করে বিদেশি জাতের জারবেরা, রথস্টিক, ক্যালোন্ডোলা, লিলিয়াম, গ্লাডিউলাস, রডস্টিক ফুল চাষ হচ্ছে এখন।

 

যশোরের গদখালীতে প্রায় এখন ১৫ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। এ অঞ্চলে ফুল চাষ করেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার চাষি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষ করে রাজধানীর ফুলের পাইকাররা নিয়মিত ফুল কিনতে যান গদখালীতে। সারা বছরের পাশাপশি বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানে গদখালীর ফুলের চাহিদা বাড়ে কয়েকগুণ। সারা বছর এখন দর্শনার্থীরাও ভিড় করেন গদখালীর মাঠে।

 

সাধারণত এই অঞ্চলের চাষিরা বান্ডেল করে সবজিবাহী ট্রাকে অথবা পরিবহণের ছাদে ফুল পাঠান রাজধানী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায়। ফুলচাষিরা জানান, এখানে নিয়মিত আসা পাইকাররা বেশির ভাগ সময় ফেরিঘাটে যানজটের কথা বলে দাম কমিয়ে দেন ফুলের। এ ছাড়া যানজট বেশি থাকলে ফুল নষ্টও এটা সত্য। সব মিলিয়ে ফেরিঘাট যেন ফুল চাষি বা পাইকারদের জন্য অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছিল। কিন্তু এবার পদ্মা সেতু চালুর পর ভিন্ন আমেজ ফিরে পাচ্ছেন যশোর অঞ্চলের ফুল চাষীরা। তারা বেশ খুশি।

 

কথা হয় যশোরের গদখালীর ফুলচাষি আমির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় কষ্টে ছিলাম ফেরিঘাট নিয়ে। পাইকাররা কারণে-অকারণে এই ফেরিঘাটের কথা বলে ফুলের দাম কমিয়ে দিত। পচনশীল জিনিস হওয়ায় আমরা তেমন কিছু বলতেও পারি না। কিন্তু এবার সেতু চালু হওয়ায় পাইকাররা কোনো অজুহাত দেখাতে পারবে না।

 

ফুলচাষি সোলাইমান হোসেন বলেন, সেতু চালু হওয়ায় ২১ জেলার সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়েছে। তবে আমি মনে করি ফুলচাষিরা একটু বেশিই উপকৃত হচ্ছেন। কারণ এখন দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন ফুল। তাই পচে নষ্ট হওয়ার কোনো ভয় আর থাকছে না। বিশেষ করে অনেক উৎসবে ফেরিঘাটে ভিড় থাকায় বেশ কয়েকবার তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, ভরা মৌসুমে ফেরিঘাটের যানজটের কবলে পড়ে আমি কয়েকবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

 

এই ফুল ব্যবসায়ী দাবি করেন, পাইকারদের পাশাপাশি অনেকে সরাসরি রাজধানীর দোকানেও ফুল পাঠিয়ে থাকেন। তাদের ক্ষেত্রে একটু বিপত্তি বেশি হয়ে থাকে। ২০১৪ ভ্যালেন্টাইনে ফুল পাঠানোর পর তা জ্যামে পড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। তখন তার লাভ তো দূরের কথা লোকসান গুনতে হয়েছে।

 

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, দীর্ঘদিন আমরা ফেরিঘাটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ফেরিঘাটে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাওয়ায় ফুল নষ্ট হয়েছে। সেতু চালু হলে ঘাটের বিড়ম্বনা আর থাকবে না। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ফুল পাঠাতে পারব।

 

তিনি পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ব্যাপক সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন- আমরা ফুল চাষের পরিধি আরো বাড়াতে পারব। চাষিরা আরো বেশি আগ্রহী হবেন চাষে।অল্প সময়ে রাজধানী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ফুল পৌঁছে যাওয়ায় তাজা ফুলের সুগন্ধিও বেশি পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি।

মন্তব্য

Beta version