-->
বারবার কেঁপে উঠছে দেশের বিভিন্ন এলাকা

বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ

শাহীন রহমান
বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ

ঢাকা: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল প্রায়ই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ এখন পর্যন্ত যতবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে, তার বেশিরভাগের উৎপত্তিস্থল ছিল সীমান্তঘেঁষা মিয়ানমারে। গতকাল শুক্রবার ভোরে রিখটার স্কেলে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনভূত হয়। যার উৎপত্তিস্থলও ছিল মিয়ানমারের মাওলাইক এলাকায়।

 

কিন্তু কেন ওই এলাকা বারবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ কতটা ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের বিশিষ্ট ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরি কেন্দ্রের পরিচালক ও ভূতত্ত্ববিদ ড. সৈয়দ হুমায়ুন আকতার বলেন, ভূমিকম্প হয় পৃথিবীর ভূত্বকের বড় বড় খণ্ড যা টেকটোনিক প্লেট নামে পরিচিত- সেগুলোর চলাচল ও সংঘর্ষের কারণে। টেকটোনিক প্লেট চলাচল করে তার নিচের লাভাসহ বিভিন্ন কারণে। বাংলাদেশ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সন্ধিস্থলে অবস্থিত। এই তিনটি টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান প্লেট, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা প্লেট।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরজুড়ে হলো ভারত প্লেটের অবস্থান। ভারত প্লেটের উত্তরে ইউরেশিয়ান প্লেট। পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বে মুজাফরাবাদ থেকে শুরু হয়ে হিমালয়ের দক্ষিণ পাদদেশ ঘেঁষে ভারতের উত্তর-পূর্বে অরুণাচল-চীন সীমান্ত পর্যন্ত ২৫শ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর পূর্বে বার্মা প্লেটের সঙ্গে রয়েছে এর সংযোগ। এই সংযোগ উত্তরে অরুণাচল-চীন সীমান্ত থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণে মণিপুর, মিজোরাম, মিয়ানমার হয়ে বঙ্গোপসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম পাশ দিয়ে আরো দক্ষিণে সুমাত্রা পর্যন্ত ৩ হাজার কি.মি. বিস্তৃত। ভারত প্লেট উত্তরে ইউরেশিয়া প্লেটের নীচে ও পূর্বে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে।

 

তিনি বলেন, ভূমিকম্প কোথায় ঘটবে তা নির্ভর করে নির্দিষ্ট এলাকার ভূতাত্ত্বিক ও টেকটনিক কাঠামোর ওপর। দুটি প্লেটের সংযোগ অঞ্চলে ও কোনো এলাকায় ফাটল থাকলে সেখানে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। বাংলাদেশ-ভারত প্লেটের অংশ এবং উত্তর-পূর্বে তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভূতাত্ত্বিক গঠন ও টেকটনিক কাঠামোর কারণেই বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলগুলো ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর বাইরেও আমাদের দেশের অভ্যন্তরে এ রকম বড় শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাব্য ফাটলগুলোর একটি সিলেট-মেঘালয় সীমান্তে শিলং মালভূমির দক্ষিণ পাদদেশে ডাউকি ফল্ট। অন্যটি চট্টগ্রাম উপকূল বরাবর সীতাকুণ্ড-টেকনাফ ফল্ট। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সমতলভূমিতে অসংখ্য ফাটল বিদ্যমান, যা ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। ঢাকার পূর্বে, পশ্চিমে, উত্তরে ও দক্ষিণে অর্থাৎ চারদিকে ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ফাটল আছে। মোট কথা যে ফাটলগুলো ভূমিকম্প সৃষ্টি (সাইজমজনিক ফল্ট) করতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করা ভূমিকম্প গবেষণায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোর বর্তমানে জরুরি দায়িত্ব।

 

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার ভোররাত ৪টা ২২ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে সিলেটে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের মাওলাইক এলাকায়। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ছিল প্রায় ৪৭১ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।

 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সাইসমিক গ্যাপ বা ভূচ্যুতি থাকায় এ এলাকা থেকে প্রায়ই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হচ্ছে। এর বেশিরভাগই হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা থেকে। এ এলাকায় মূলত তিনটি প্লেটের সংযোগস্থল। আর সংযোগস্থলে দেশের অবস্থান থাকায় দেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূত্বকের অভ্যন্তরে এই ফাটলগুলোতে বা এর সন্নিহিত অঞ্চলে দীর্ঘদিন কোনো ভূমিকম্প হয়নি। এ কারণে ভূত্বকের শীলারাশির স্থানচ্যুতি ঘটানোর জন্য যথেষ্ট শক্তি জমা হয়ে আছে। যে কোনো সময় তা ভয়াবহ ভূমিকম্পের সৃষ্টি করতে পারে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশ ভূমিকম্পের দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version