-->

ভূমি ব্যবস্থাপনায় আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন

মো. রেজাউর রহিম
ভূমি ব্যবস্থাপনায় আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন

ঢাকা: দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসছে। ভূমির মালিকানা এবং জটিলতা নিরসনে সরকার ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। একদিকে দেশে বসবাসের বাড়ি, শিল্পকারখানা নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ফলে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে। আর আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বিশাল সংখ্যা অধ্যুষিত দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিও আছে। এ অবস্থায় ভূমির ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা, ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার সংস্কারে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এদিকে আজ রোববার থেকে সারা দেশে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ভূমি অফিসগুলোয় রেকর্ড সংশোধন এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি নগদ অর্থে নেয়া হবে না। এ-সংক্রান্ত ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে সরকার বদ্ধপরিকর। সরকারি উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ থেকে সারা দেশে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে রেকর্ড সংশোধন এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি আর নগদ অর্থের পরিবর্তে অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। এ ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুত ভূমি ব্যবস্থাপনায় ক্যাশলেস ই-নামজারি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

এ ছাড়া ডিসিআর ও খতিয়ানসংক্রান্ত কোনো ত্রুটি সংশোধনের জন্য ভূমি অফিস থেকে কোনো ফি আদায় করা হবে না। কোর্ট ফি ৫০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ২০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ১ হাজার এবং ও খতিয়ান সরবরাহ ফি ১০০ টাকা- এ চার ধরনের ফি প্রদানে নামজারির জন্য মোট প্রকৃত খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৭০ টাকা। ভূমির মালিকদের এসব ফি এখন থেকে অনলাইনে মোবাইল ওয়ালেট অথবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। কোনোভাবেই নগদ অর্থে পরিশোধ করা যাবে না।

 

সূত্র জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়, জনস্বার্থে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখের পর রেকর্ড সংশোধন ও খতিয়ান সরবরাহ ফি বাবদ মোট ১ হাজার ১০০ টাকা শুধু অনলাইনে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসগুলোকে আদেশ দেয়া হলো। সরকারি আদেশ অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বর এর পর রোববার থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসে রেকর্ড সংশোধন এবং খতিয়ান সরবরাহ ফি নগদ অর্থে নেয়া হবে না।

 

এ বিষয়ে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভূমিসংক্রান্ত বিষয়ে মানুষের ভোগান্তি লাঘব এবং জটিলতা এড়ানোর জন্য ই-নামজারি আবেদন ও নোটিশ ফির মতো নামজারি অনুমোদনের পর রেকর্ড সংশোধন ও খতিয়ান সরবরাহ ফিও অনলাইনে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১ অক্টোবর থেকে নামজারি অনুমোদনের পর রেকর্ড সংশোধন ও খতিয়ান সরবরাহ ফি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (নগদ অর্থে) দেয়া যাবে না।

 

এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নামজারির জন্য কোনো ভূমি মালিকের যাতে কোনো অবস্থায়ই ১ হাজার ১৭০ টাকার বেশি অর্থ খরচ না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী তথ্যসংক্রান্ত দলিল না পাওয়ার জন্য নামঞ্জুরকৃত কোনো নামজারি আবেদন আবার চালু হলে ওই আবেদন মঞ্জুরের পর রেকর্ড সংশোধন ও খতিয়ান সরবরাহ ফি বাবদ মোট ১ হাজার ১০০ টাকা প্রযোজ্য হবে। নামজারি চূড়ান্তভাবে মঞ্জুর হওয়ার পর জটিলতা এড়াতে দ্রুত কিউআর কোডযুক্ত অনলাইন ডিসিআর সংগ্রহ করা ভূমি মালিকদের করণীয় বলেও মনে করে ভূমি মন্ত্রণালয়।

 

এদিকে অনলাইনে জাতীয় ভূমি তথ্য ও সেবা কাঠামোয় গিয়ে ই-নামজারি ট্যাবে ক্লিক করে ই-নামজারি সিস্টেম থেকে ই-নামজারি আবেদন সংশ্লিষ্ট তথ্য জানা যাবে। এ ছাড়া ভূমি বিষয়ক সব তথ্য জানতে, ভূমিসেবা পেতে অথবা অভিযোগ জানাতে ‘নাগরিক ভূমিসেবা ২৪/৭’-এর হেল্পলাইন ১৬১২২ এবং বিদেশ থেকে +৮৮০ ৯৬১২৩ ১৬১২২ নম্বরে কল করতে হবে। অথবা ভূমিসেবার ফেসবুক পেজে কমেন্ট কিংবা মেসেজ (বার্তা) পাঠাতে হবে।

 

এদিকে দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় যগোপযোগী পরিবর্তন আনতে ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ভূমিসংক্রান্ত আইনের অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। গত চলতি বছরের ১৯ মে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২২’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনটির খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিমালিকানায় ৬০ বিঘার বেশি জমি থাকতে পারবে না। থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করতে পারবে সরকার।

 

ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, দেশের মানুষের ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে সরকার এ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করেছে। এ ছাড়া আইনে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার দেশের অনাবাদি জমি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে অনাবাদি জমি ব্যবহারের নীতিমালার পাশাপাশি ফসলি জমিতে খাদ্যশস্যসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করতে ব্যক্তিমালিকানায় জমি নির্ধারণ করে দেয়ার কথাও ভাবছে সরকার।

 

জানা গেছে, দেশে ব্যক্তিমালিকানায় থাকা হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি থাকায় ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তায় ঝুঁকির আশঙ্কা করছে সরকার। এ কারণে তিন ফসলি জমি রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ আইন বাস্তবায়ন হলে দেশে ভূমি ব্যবহারে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। আর যেকোনো জমি উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করতে হবে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই কিছু করতে পারবে না। আর জমির ব্যবসা করার জন্য সরকার অনুমতি দেবে না। মূলত ফসলি জমি রক্ষায় সরকার এ ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ছাড়া নতুন আইনানুযায়ী ৬০ বিঘার বেশি জমি ব্যক্তিমালিকানায় থাকতে পারবে না। এটা আগেও ছিল, তবে এটাকে এখন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে চরাঞ্চলের হাজার হাজার একর জমির মালিক কিছুসংখ্যক মানুষ। এসব জমি উদ্ধার করে কৃষি ও অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে সরকার।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version