-->
শিরোনাম

আবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা

# ভ্যাট ছাড়ের সুবিধা অব্যাহত রাখতে এনবিআরকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ

মো. রেজাউর রহিম
আবার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা

ঢাকা: পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য দেশের ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। এবার বাড়তি ভ্যাটের অজুহাতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পায়তারা শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানিতে বিদ্যমান ভ্যাট মওকুফ সুবিধার মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার পর আবার নতুন করে দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে আমদানিকারক ও পরিশোধন প্রতিষ্ঠানগুলো।

 

তবে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে তেল আমদানিতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহত রাখা এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়িক পর্যায়ে সমুদয় ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ আগামি ৩০ জুন, ২০২৩ পর্যন্ত  বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়  থেকে গত ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আবারো বাড়ানোর অপচেষ্টা শুরু করেছেন আমদানিকারক ও পরিশোধন প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ব্যাপারে ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক (অর্থ ও অপারেশন) শফিকুল আতহার তসলিম জানান, ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফের জন্য এসআরও জারি ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সুবিধা নতুন করে না বাড়ানোর ফলে বাজারে তেলের মূল্য বাড়তে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

এ ব্যপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য অধিশাখার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, ভোজ্যতেল আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন করের  (ভ্যাট) বিষয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, শিগগির এ বিষয়ে এনবিআররের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে একটি সুরাহা হবে বলে আশা করছি। দেশে ভোজ্যতেলের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমদানিতে ৫ শতাংশ এবং সমুদয় ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কাজ চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

 

জানা গেছে, সরকার ভ্যাট ছাড়ের সুবিধা দেয়ার পর আমদানির ওপর ভ্যাট মাত্র ৫ শতাংশ ছিল। এনবিআর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভ্যাট ১৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ ধার্য করেছিল। গত ৩০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে ভ্যাট ছাড়ের এই সুবিধা বহাল নেই। ফলে গত  ১ অক্টোবর থেকে পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল এবং অন্যান্য পরিশোধিত পাম তেলের ওপর আগের মতো ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এতে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

 

এর আগে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে গত ১৪ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে এনবিআর  সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করে। এরপর  ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ৫ শতাংশও করা হয়। প্রথমে এর মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়, পরবর্তীতে ৩ জুলাই এনবিআর আরেক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মওকুফ সুবিধার মেয়াদ গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভ্যাট ছাড়ের জন্য এনবিআর এখন পর্যন্ত নতুন কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর  বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন, পরিশোধিত /অপরিশোধিত পামতেলের মূল্য কিছুটা কমলেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধির (পূর্বের ১ ডলার সমান ৮৬ টাকার স্থলে বর্তমানে ১০৫ টাকা) কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্য আনুপতিক হারে কমানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্থানীয় বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে ভ্যাট অব্যাহতির বর্তমান মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অবা-৫ শাখার যুগ্ন নিয়ন্ত্রক মোছা. শামীমা আকতার স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে আরো বলা হয়, এমতাবস্থায় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ১৪ মার্চ এবং ১৯ মার্চের এ সংক্রান্ত এসআরও এবং মুসক এর মেয়াদ আগামি ১ অক্টোবর, ২০২২  হতে ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।

 

আমদানিকারকদের একটি সুত্র জানায়, আমদানিকারকদের পক্ষ থেকেও ভ্যাট ছাড়ের সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য এনবিআরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আর এনবিআর বিষয়টি ইতিবাচক হিসাবে বিবেচনা করে শিগগির এ বিষয় নতুন সিদ্ধান্ত দেবে বলেও আশা করছে তারা।

জানা গেছে, দেশে বছরে ভোট ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। এরমধ্যে ২ লাখ টন দেশে উৎপাদন হয় এবং অবশিষ্ট ভোজ্যতেল ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আর আমদানি ও পরিশোধন করে হাতে গোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- এস আলম গ্রুপ,  সিটি গ্রুপ,  মেঘনা, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল মিল লি.।

 

এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাম সুপার খোলা ভোজ্যতেলের দাম মিলগেটে ১২৮ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৩০ টাকা এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ দাম ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়। আর বর্তমানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ১৯২ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/জেএস/

মন্তব্য

Beta version