ঢাকা: সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবীব মন্তব্য করেছেন, সব দলকে নির্বাচনে আনতে চমক দেখাবে ইসি। তবে ইসির সেই চমক কী, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ফেরাতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি। এর ধারাবাহিকতায় তারা আগামী নির্বাচনের আগেই সবার জন্য সুযোগ তৈরি বা লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে চান। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আজ শনিবার মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসবে। বৈঠকে তাদের নিরপেক্ষ আচরণের কঠোর বার্তা দেয়া হতে পারে। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছাড়া বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে ইসি। সেখানে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে ১৪ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে তারা। সেই সঙ্গে তা মোকাবিলায় করণীয়ও ঠিক করা হয়েছে। রোডম্যাপে ইসির পক্ষ থেকে যেসব চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা সৃষ্টিকেই মুখ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা, আচরণবিধি প্রতিপালন এবং অর্থ ও পেশিশক্তি নিয়ন্ত্রণ ও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির ওপরও জোর দেয়া হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে রোডম্যাপের পরিকল্পনা অনুযায়ী সারাদেশে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র তৈরিতে নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেনÑ এমন ব্যক্তির প্রভাবাধীন কোনো প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে বাছাই না করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রোডম্যাপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান বলেন, রোডম্যাপের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজন করা। জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর সাড়ে ১৫ মাস। এই সময়ের মধ্যে সব দলের আস্থা অর্জন করে ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন আয়োজনের প্রত্যাশার কথাই উল্লেখ করেছেন এই নির্বাচন কমিশনার। সম্প্রতি নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দল আসছে না বা নির্বাচন নিয়ে যে অভিযোগগুলো আসছে, সেগুলো কীভাবে হ্যান্ডেল করি দেখেন। দেখেন আমরা কী করি, জাস্ট ওয়েট। অবশ্যই চমক থাকবে। ৩৯টি দলের জন্যই কাজ করছি আমরা। সঠিক কাজটি প্রতিষ্ঠা করার জন্যই আমরা কাজ করছি। যে কাজটা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে, সেটাই করব।
এখন পর্যন্ত বর্তমান ইসির প্রতি কোনো আগ্রহই প্রকাশ করেনি বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। ফলে ইসির কোনো কর্মকাণ্ডে দলটির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াও দেখানো হয় না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান ইসির প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এই ইসির অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার কথা আগেই তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান ইসি আওয়ামী লীগের দলীয়। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে দলীয় লোকদের ইসিতে বসানো হয়েছে। শুধু বিএনপি নয়, আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়া তালিকাও অনেক বড় হচ্ছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির পক্ষ থেকে যে সংলাপ করা হয়েছে, সেখানে বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল সংলাপ বর্জন করে অনাস্থা প্রকাশ করেছে।
এখন প্রশ্ন, এ অবস্থায় দলগুলোর আস্থা ফেরানো ইসির পক্ষে কতটুকু সম্ভব হবে। নির্বাচন কমিশন কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিষয়টি মুখে না বললেও চমক সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, আজ শনিবারের বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে বড় ধরনের বার্তা দেয়া হবে মাঠ প্রশাসনে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে। এ ছাড়া অহেতুক রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করার নির্দেশনাও দেয়া হবে।
যদিও সামনে জেলা পরিষদসহ কিছু নির্বাচন রয়েছে। বিশেষ করে আগামী ১৭ অক্টোবর ৬১ জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন এবং আগামী ৫ নভেম্বর ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচন রয়েছে। এ ছাড়া ২ নভেম্বর রয়েছে বেশকিছু স্থানীয় সরকার পরিষদের নির্বাচন। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব নির্বাচন সামনে রেখেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক ডেকেছে ইসি। তবে এই বৈঠকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড তৈরিসহ নানা ধরনের আলোচনা করা হবে। একই সঙ্গে ইসির পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনকে নানা নির্দেশনাও দেয়া হবে। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ আচরণের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। নির্বাচনে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ পেলে বা দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রমাণ পেলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও কঠোর নির্দেশনা থাকছে। গত বৃহস্পতিবার ইসি মো. আলমগীর বলেন, নির্দেশনা পালনের ব্যর্থতার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, এসব লক্ষ্য সামন্যে রেখে আজ আগারওগাঁও নির্বাচন ভবনে ৬৪ জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও মহাপুলিশ পরিদর্শকেরও (আইজিপি) উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় বাকি। তবু শনিবারের বৈঠকে মাঠ প্রশাসনকে কড়া সতর্কতা জানাতে চাচ্ছে ইসি। দলগুলোর প্রতি নিরপেক্ষ আচরণের মাধ্যমে এখন থেকেই সব দলের জন্য সমান আচরণ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) সৃষ্টির কাজ শুরুর নির্দেশনা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ওই বৈঠকে।
গত রোববার ইসি কার্যালয়ের নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপসচিব আতিয়ার রহমানের সই করা চিঠি আগেই ডিসি-এসপিদের কাছে পৌঁছানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সব জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আলোচনার জন্য শনিবার সকাল ১০টায় ঢাকায় নির্বাচন ভবনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এ সভায় নির্বাচন কমিশনার, ইসি কার্যালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, ইসি মনে করছে জাতীয় নির্বাচনের আগেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করা, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সমান দৃষ্টি দেয়ার নির্দেশনা এখনই মাঠ পর্যায়ে দেয়া প্রয়োজন। ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনের করণীয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনার কথা জানান নির্বাচন কমিশনের এই সদস্য।
ভোরের আকাশ/এসআর/জেএস/
মন্তব্য