-->

বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় বিদ্যুতের দাম বাড়েনি

মো. রেজাউর রহিম
বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় বিদ্যুতের দাম বাড়েনি
বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় বিদ্যুতের দাম বাড়েনি

চলমান অর্থনৈতিক সংকট, পণ্যের উচ্চমূল্য এবং নিম্নআয়ের মানুষের সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা করে এবং জীবনযাত্রায় বিনরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া সার্বিকভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়লে ভোক্তা পর্যায়ে কেমন প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে বিপিডিবির দাম বাড়ানোর আবেদনে কোনো পর্যালোচনা নেই। তাছাড়া তথ্য-উপাত্তের অস্পষ্টতার পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর সরাসরি বিদ্যুৎ ক্রয়ের তথ্যও গোপন করা হয়েছে। এসব কারণে আপাতত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

 

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান জ্বালানি সংকটের মধ্যেই পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হলেও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যুতের দাম আপাতত না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, এমনিতেই চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশে নিত্যপণ্যের দামের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় হিমশিম অবস্থা। এর ওপরে এ সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ফলে জনজীবনে অর্থাৎ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সংকট আরো বৃদ্ধির আশঙ্কায় সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে সায় দেয়নি বলে জানান তিনি।

 

বিইআরসি সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুতের পাইকারি দাম পুনর্নির্ধারণে পিডিবি আবেদনে মূল্যহার পুনর্নির্ধারণে ভোক্তাপর্যায়ে প্রভাবের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য না থাকার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ও মানুষের জীবনযাত্রা বিরূপ প্রভাবের কোনো তথ্য নেই। এছাড়া বিদ্যুতের বৃহৎ ক্রেতা হিসেবে পিডিবি এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ কিনলেও বিইআরসির কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য দেয়া হয়নি। আপাতত পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত বিদ্যুতের আগের দাম বহাল থাকবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিইআরসি।

 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) বৃহস্পতিবার পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এ ঘোষণা থেকে সরে আসে বিইআরসি। এ বিষয়ে বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, বিতরণ কোম্পানি, ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব বিশ্লেষণ ও পিডিবির আবেদনে তথ্যের অস্পষ্টতা থাকায় বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির আবেদন বিবেচনা করা হয়নি। জানা গেছে, পিডিবি গত ১২ জানুয়ারি বিদ্যুতের পাইকারি দাম পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব জমা দেয়। এরপর ১৮ মে তাদের প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করে বিইআরসি। সব পর্যালোচনা করে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কমিশন বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নিয়মানুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার নিয়ম রয়েছে। আর গণশুনানির ৯০ কার্যদিবসের সময়সীমা শেষ হয় ১৪ অক্টোবর। গত ১৮ মে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের গণশুনানিতে প্রায় ৬৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর আবেদন করে পিডিবি। সে সময় ভর্তুকি ছাড়া ৫৮ শতাংশ দাম বাড়ানো এবং ভর্তুকি দিলে দাম না বাড়ানোর সুপারিশ করে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।

 

উল্লেখ্য, দেশে বিদ্যুতের একক পাইকারি বিক্রেতা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বর্তমানে পিডিবির সরবরাহকৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম গড়ে ৫ টাকা ১৭ পয়সা। পিডিবির কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহক বা খুচরা পর্যায়ে বিতরণ করে দেশের পাঁচটি বিতরণ কোম্পানি। এগুলো হলো-ডেসকো, ডিপিডিসি, আরইবি, নেসকো ও ওজোপাডিকো। এছাড়া পিডিবি পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রির পাশাপাশি দেশের কিছু এলাকায় সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে গত ১২ বছরে ৯ বার বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এ সময়ে পাইকারি পর্যায়ে ১১৮ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৯০ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের পাইকারি দর ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

 

 

মন্তব্য

Beta version