বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে দেশের উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে রোববার রাতের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় রূপ নেবে এটি। সোমবার মধ্যরাত থেকে আগামী মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই দেশের উপকূল মধ্যবর্তী অঞ্চল বরাবর আঘাত হানতে পারে। স্থলভাগে আঘাত হানার সময় এর গতিবেগ ঘন্টায় ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠতে পারে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাত মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে রোববার তারা একটি সভা করেছে। সভায় জানানো হয়েছে দেশের উপকূলীয় সব জেলায় জরুরি খাবার, উদ্ধার সরঞ্জামসহ ঘূর্ণিঝড়ুপরবর্তী অবস্থা মোকাবিলায় অনেক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ভোরের আকাশকে বলেন, গভীর নিম্নচাপটি রোবাবার রাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এটি দেশের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ এটি দেশের উপকুল মধ্যবর্তী অঞ্চলের উপরে আঘাত হানতে পারে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল এবং নোয়াখালীর অঞ্চল সমুহের উপর দিয়ে প্রবল গতিবেগ নিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানবে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘন্টায় একশ’ কিলোমিটার। এদিকে সাগরে যে ঘুর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে তার নাম সিত্রাং। এটি থাইল্যান্ডের দেয়া নাম।
আব্দুল মান্নান জানান, থাইল্যান্ডের ভাষায় সিত্রাং শব্দের অর্থ হলো চোখ রাঙানো। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় ইতোমধ্যে দেশের সব কটি সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী, ফেনীসহ দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং নদীবন্দরগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে দেশের উপকূলের দিকে দুই দিনের মধ্যে আঘাত করতে পারে। আমরা এর গতিবিধি লক্ষ্য করছি। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে এটি মাঝারি মাত্রার ঘূর্ণিঝড়। তবে এটি আঘাত হানার সময় অমাবস্যা থাকবে। এ কারণে বাতাসের গতি কমলেও জলোচ্ছ্বাসের কারণেই উপকূলীয় এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপ আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রোববার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৯০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের বর্ধিতাংশের প্রভাবে এরইমধ্যে বাংলাদেশে বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রোববার সকাল থেকে ঢাকার আকাশও মেঘে ঢাকা।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভার আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে এটি আরও এগিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিতে পারে। যদি উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেয় তাহলে এটি কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত প্রতিটি জেলাতেই আঘাত হানবে।
প্রস্তুতির বিষয়ে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, লঘুচাপ সৃষ্টির পর থেকেই আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস সেন্টারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোকে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সব জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি মিটিং হয়েছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং হয়েছে। সিপিপিকে (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) প্রস্তুতি গ্রহণ ও সতর্কবার্তা প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখতে বলেছি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে।
তিনি জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে মানবিক সহায়তা দিতে প্রত্যেক জেলায় ২৫ টন চাল, পাঁচ লাখ টাকা এবং ড্রাইকেক ও বিস্কিট সরবরাহ করা হয়েছে। এটা মজুত আছে, যে কোনো সংখ্যক লোক হলে খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে। সিত্রাং’-এর বিস্তৃতি অন্যান্য ঘূর্ণিঝড় থেকে বেশি হলেও এটি খুব বেশি শক্তিশালী হবে না বলেও জানান তিনি। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি নিয়ে সোমবার দুপুর ১২টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে উল্লেখ করেন।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য