শাহীন রহমান: স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত নানা জাতের ধান সারাবছরই উৎপাদন হচ্ছে। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে সফল দেশের বিজ্ঞানীরা। কিন্তু একটি ধানের জাত নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তা হলো মিনিকেট। এটি আসলে ধানের জাত কিনা তা নিয়ে মূলত বিতর্ক। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে মিনিকেট নামের কোনো ধানের জাত নেই। এই নামে দেশের কোথাও ধানের আবাদ হয় না। মূলত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি-২৮, বিআর-২৬, ব্রি-৩৯ এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার উদ্ভাবিত বিনা ধান-৭ একসঙ্গে করে তৈরি হয় মিনিকেট। চালকলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
এসব ধানের চাল লম্বা ও চিকন। খেতেও সুস্বাদু। জানা গেছে, চাল চিকন ও খেতে সুস্বাদু হওয়ার কারণে কৃষকের কাছ থেকে এই ধান বেশি করে ক্রয় করেন ব্যবসায়ীরা। তারা কোনো ধান উৎপাদন করেন না। মূলত কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে বাজারজাত করেন।
কুষ্টিয়া চালকলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এগুলো মূলত চিকন ধান। এ ছাড়া চিকন জাত হিসেবে নতুন যেসব ধানের জাত রয়েছে সেগুলোও মেশানো হচ্ছে মিনিকেটের সঙ্গে। এর মধ্যে যে ধানটি একটু মোটা সেটির চাল কিছুটা কেটে বা ছাঁটাই করা হয়। এভাবে বিভিন্ন কোম্পানির নামে বাজারে আসছে মিনিকেট চাল।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা রাসেল রানা জানান, ব্রি থেকে এখন পর্যন্ত ১০৮টি ধানের জাত আবিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০১টি জাত হলো ইনব্রিড ও ৭টি জাত হাইব্রিড। এ ছাড়াও বিনা উদ্ভাবিত জাত রয়েছে ১০টি। এসব জাত দেশে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে উৎপাদন করা হচ্ছে।
ধানের জাত আবিষ্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা জানান, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত জাত ব্রি-২৮ ধান একটি বোরো জাত। এটি শীত মৌসুমে রোপণ করা হয়। এটি বোরো মৌসুমের আগাম জাত হিসেবেও বিবেচিত। এটি ১৯৯৪ সালে দেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয় জাতীয় বীজ বোর্ড। এই ধানের চাল মূলত মাঝারি চিকন ও সাদা। ভাত ঝরঝরে। খেতেও সুস্বাদু। বোরো মৌসুমে এটির ব্যাপক চাষাবাদ হয়। চিকন হওয়ার কারণে চালকলে পালিশ করে মিনিকেট হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে।
বিআর-২৬ ধান মূলত একটি শ্রাবণী রোপা আউশ জাত হিসেবে পরিচিত। এটি ১৯৯৩ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক দেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটিও আগাম জাত হিসেবে পরিচিত। এর চাল লম্বা চিকন ও সাদা। ভাত নরম ও আঠালো। চিকন হওয়ার কারণে এটি মিনিকেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এই জাত ১১৫ দিনেই ফলন দেয়ায় এটির অধিক চাষ রয়েছে দেশে।
ব্রি-৩৯ ধানও ব্যবহার করা হচ্ছে মিনিকেট নামে। তবে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ১৯৯৯ সালে দেশে এটি চাষাবাদের জন্য জাতীয় বীজ বোর্ডের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি মূলত আমন জাতের ধান। স্বল্প জীবনকালের জাত হিসেবেও এটি বিবেচিত। এই জাতের চালও লম্বা ও চিকন। ফলে মিনিকেট হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে অধিক বিবেচিত।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার বা বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত বিনা-৭ ধানও মিনিকেট হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির পক্ষ থেকে কলেজ অব এগ্রিকালচার সায়েন্স প্রকল্প পরিচালনা করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা জানান, বিনা-৭ ধান একটি রোপা আমন হিসেবে দেশে বেশ জনপ্রিয়। এই ধানের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন সাড়ে চার টন থেকে সাড়ে ৫ টন পর্যন্ত হয়। দেশে এটি আগাম জাত হিসেবে পরিচিত। এটির চাল চিকন হওয়ার কারণে মিনিকেট হিসেবে বাজারে আসছে।
দেশে মিনিকেট চাল নিয়ে বেশ বিতর্ক শুরু হয়েছে। মোটা চাল কেটে তৈরি হয়। এটি খেলে ক্যানসার হতে পারে। এমন বিভিন্ন রকমের মন্তব্য বিভিন্ন জনের। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম গাজীপুরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। ‘মিনিকেট’ নামে কোনো চাল বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মিলে চাল বস্তাজাত করার সময় তাতে জাতের নাম লিখে দিতে হবে। কেউ যদি এর ব্যত্যয় করে, সে ক্ষেত্রে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থায় যাব।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই গবেষণায়ও উল্লেখ করা হয়েছে মিলগুলো বিআর-২৮, বিআর-২৯ ও অন্যান্য জাতের ধানকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাঁটাই করে মিনিকেট তৈরি করে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মিনিকেট বা পলিশ করা চাল খেলে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকে- এর কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ নেই বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, দেশে মিনিকেট বলে কোনো চাল নেই। তবু ব্যবসায়ীরা মিনিকেট নামে চাল বাজারজাত করছেন। যারা মিনিকেটের নামে চাল বাজারজাত করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ অটো মেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী এ বিষয়ে বলেন, ব্যবসায়ীরা কোনো ধান উৎপাদন করেন না। ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে চাল উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করেন। কৃষক বাজারে ধান নিয়ে এসে যে নাম বলে সে নামেই ব্যবসায়ীরা ধান কিনে চাল উৎপাদন করে, সে নামেই বিক্রি করে। মিনিকেট ধান আছে কিনা সেটা কৃষক ও কৃষি বিভাগের বিষয়। তবে বাজারে খরার মৌসুমে অর্থাৎ ইরি- রোরো মৌসুমে এ নামে ধান বাজারে ব্যাপক বিক্রি করেন কৃষকরা।
কুষ্টিয়ায় গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় আধুনিক চালকল। সেখান থেকে সারাদেশে চালের বড় অংশ সরবরাহ করা হয়। কুষ্টিয়ায় আড়াইশ থেকে ২৬০টি চল কল রয়েছে। তবে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলগুলোতে চাল কাটার প্রযুক্তি নেই। চাল ঝকঝকে করতে এটি পলিশ করা হয়। ঢাকার মিরপুরে ভাণ্ডারী রাইচ এজেন্সির মালিক আব্দুল গনি খাঁ। তিনি রাজধানীতে চালের একজন খুচরা ব্যবসায়ী। কৃষ্টিয়াসহ বিভিন্ন চালকল থেকে এনে ঢাকায় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, চাল ছেঁটে ছোট করে মিনিকেট তৈরি করা হয় না। মূলত কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনেই মিনিকেট নামে বাজারে ছাড়া হয়।
সম্প্রতি রাজধানীর জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে এ নিয়ে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্যাকেটজাত মিনিকেট চাল ব্যবসায়ীরা বলেন, ছেঁটে মিনিকেট চাল বানানোর যন্ত্র দেশে নেই। অনুষ্ঠানে প্রাণ-আরএফএলের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, মিনিকেট একটি ব্র্র্যান্ড, এটি বাজারে অনেক দিন ধরে আছে। এখন এটা বন্ধ করা হলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত দেশের মোট ধানি জমির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯০ ভাগ। ধান উৎপাদনে দেশ অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত ৫০ বছরে দেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। দেশে তিনটি মৌসুমে আউশ, আমন ও বোরো ধানের চাষ করা হয়। তিন মৌসুমে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ধানের জাত ব্যবহার করা হচ্ছে। এর বাইরেও বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত ধানের জাতও চাষাবাদ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭০-৭১ সালে দেশে ধানের মোট উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। সেখানে ২০১৯-২০ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ৬৯৫ দশমিক ৩৩ হাজার টন।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত তারা ১০৮ উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর মধ্যে ১০১টি জাত হলো ইনব্রিড ও ৭টি জাত হাইব্রিড। এ ছাড়াও কালিজিরা এবং কাটারিভোগ ধান বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। ফলে ধান গবেষণায় ব্রি সারাবিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে উৎপাদিত মোট ধানের ৯০ শতাংশই আসছে ধান গবেষণা থেকে উদ্ভাবনকৃত জাত থেকে। দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ জমিতে ব্রি ধানের চাষ করা হয়। এর মধ্যে মিনিকেট নামের কোনো জাত নেই বলে জানান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান, ব্রির উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত বর্তমানে দেশের বোরো ধানের (শীতকালীন ধান) ৮২ ভাগ, আউশের (গ্রীষ্মকালীন) ৩৬ ভাগ এবং রোপা আমনের (বর্ষাকালীন ধান) ৪৭ ভাগ এলাকায় চাষ হচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট ৭৫ ভাগ জমিতে ব্রি ধানের চাষ হয় এবং এর থেকে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৮৫ ভাগ আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্রির আধুনিক জাত এবং উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশ, বিশেষ করে স্বল্প ব্যয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষ লাভবান হচ্ছে। এই শ্রেণির বিশাল জনগোষ্ঠী গ্রামীণ এলাকায় এবং শহরের বস্তিতে বসবাস করে। ব্রির আধুনিক জাতের উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি না থাকলে দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটাতে সরকারকে খাদ্য আমদানি করতে হতো। ব্রির আধুনিক জাতের কারণে সরকারের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণে ১ টাকা বিনিয়োগ থেকে আসে ৪৬ টাকা। ব্রির জাত এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে ধানের দাম স্থিতিশীল থাকে। সর্বোপরি ১৯৮০ সাল থেকে নিয়মিত খাদ্যশস্য আমদানি কমতে থাকে এবং ১৯৯০ সালের দিকে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি পৌঁছে।
ব্রির প্রযুক্তি গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় আয় এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। দেশের যেসব এলাকায় ব্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, সেসব এলাকায় অন্য এলাকার চেয়ে দরিদ্রের হার কম। আধুনিক সেচ সুবিধা, আধুনিক জাতের ধান চাষের জমির প্রসারণে দেশের কৃষি এবং অকৃষি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে গ্রামীণ মানুষের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও পরোক্ষভাবে সার ব্যবসা, পাম্পসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণসহ নানাভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে প্রতিকূল ও অপ্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এ পর্যন্ত ১০৮টি (১০১টি ইনব্রিড ও ৭টি হাইব্রিড) উচ্চ ফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। ৪৮টি জাত বোরো মৌসুমের জন্য (১২টি জাত বোরো ও আউশ উভয় মৌসুম উপযোগী)। ২৬টি জাত বোনা এবং রোপা আউশ মৌসুম উপযোগী। ৪৫টি জাত রোপা আমন মৌসুম উপযোগী, ১২টি জাত বোরো ও আউশ উভয় মৌসুম উপযোগী, ১টি জাত বোরো, আউশ এবং রোপা আমন মৌসুম উপযোগী, ১টি জাত বোনা আমন মৌসুম উপযোগী।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) কর্তৃক উদ্ভাবিত ধানের জাতও চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত জাতের মধ্যে রয়েছে ইরাটম-২৪ আউশ/বোরো, ইরাটম-৩৮: আউশ/বোরো, বিনাশাইল : রোপা আমন, বিনাধান-৪-রোপা আমন, বিনাধান ৫ ও ৬ বোরো, বিনাধান ৭ রোপা আমন, বিনাধান-৮ বোরো, বিনাধান-৯ রোপা আমন, বিনা ধান-১০ বোরোর চাষ করা হচ্ছে, সেখানে মিনিকেট নামের কোনো ধানের জাতের অস্তিত্ব নেই।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ও ধান গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে মূলত আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে ধানের চাষাবাদ হয়। আউশ মৌসুমে বপন ও রোপণ দুভাবেই ধান আবাদ করা যায়। বোনা আউশের উফশী জাতগুলো হলো বিআর-২১, বিআর-২৪, ব্রি ধান-২৭, ব্রি ধান-৪২ এবং ব্রি ধান-৪৩। রোপা আউশের জাতগুলো হলো বিআর-২৬, ব্রি ধান-২৭, ব্রি ধান-৪৮ এবং ব্রি ধান-৫৫। কিন্তু এই জাতের মধ্যে মিনিকেট নামের কোনো জাত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আমন মৌসুমে যেসব ধানের চাষ করা হয়, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সুগন্ধি পোলাও ও বিরিয়ানির চালের জন্য বিআর-৫, ব্রি ধান-৩৪, ব্রি ধান-৩৭ এবং ব্রি ধান-৩৮ অন্যতম। অধিক ফলনশীল মাঝারি মোটা থেকে মোটা চালের জন্য বিআর-১০, বিআর-১১, ব্রি ধান-৩০ ও ব্রি ধান ৩১ চাষ করা হয়। আগাম জাত হিসেবে বিআর-২৫, ব্রি ধান-৩২, ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান-৩৯ ও ব্রি ধান-৪৯ এবং বিনা ধান-৭ অত্যন্ত উপযোগী। জলমগ্নতা-সহনীয় জাত হিসাবে ব্রি ধান-৫১ ও ব্রি ধান-৫২-এর চাষ করা হয়। মাঝারি মোটা থেকে লম্বা মোটা চাল এবং নাবি জাত হিসেবে বিআর-২২, বিআর-২৩ এবং ব্রি ধান-৪৬-এর চাষ করা হয়। লবণাক্ততা-সহনশীল জাত হিসেবে ব্রি ধান-৪০, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৫৩, ব্রি ধান-৫৪, বিনা ধান-৮ ও বিনা ধান-১০ সবচেয়ে উপযুক্ত জাত। মোটা চাল এবং জোয়ারভাটা পরিবেশের ধান হিসেবে ব্রি ধান-৪৪ ছাড় করা হয়েছে।
বোরো মৌসুমে চাষাবাদ উপযোগী আগাম জাতগুলো হলো বিআর-১, বিআর-৬, ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৪৫ এবং ব্রি ধান-৫৫। উফশী ও দীর্ঘ জীবনকাল বোরো মৌসুমে চাষযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে বিআর-১৪, বিআর-১৬, ব্রি ধান-২৯, ব্রি ধান-৫৯, ব্রি ধান-৬০ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান-১ অন্যতম। এখানেও মিনিকেট নামের কোনো জাত নেই। এ ছাড়াও হাওর এলাকার জন্য বিআর-১৭, বিআর-১৮ এবং বিআর-১৯ জাতের ধান চাষের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে। যেখানে মিনিকেট নামের কোনো জাত নেই।
কলেজ অব এগ্রিকালচার সায়েন্স বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দেশে ১৯৬৮ সালে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) থেকে প্রথম উফশী জাতের ধান (আইআর-৮) মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদ শুরু হয়। খাটো আকৃতির এ উফশী ধান থেকে প্রতি হেক্টরে ৫-৬ টন (বিঘাপ্রতি ১৮-২১ মণ) ফলন পাওয়া যায়। তখন থেকে উফশী ধান লোকমুখে ইরি ধান নামে পরিচিতি লাভ করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৌসুম ও পরিবেশ উপযোগী উফশী ধানের জাত এবং ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ফসল, মাটি, পানি, সার ইত্যাদি বিষয়ক কলাকৌশল উদ্ভাবন করছে। বর্তমানে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাত দেশের মোট ধানি জমির শতকরা প্রায় ৮০ ভাগে চাষাবাদ করা হচ্ছে এবং এ থেকে পাওয়া যাচ্ছে মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯০ ভাগ। কিন্তু মিনিকেট নামের কোনো ধানের জাত দেশের কোথাও চাষাবাদের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য