দুর্ভিক্ষ আসছে এই আতঙ্কে জনগণ যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ না করে তাহলে দেশে কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
রোববার কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) ‘হেলথ সার্টিফিকেট’ প্রদান অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানকে পণ্যের স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করা হয়। ইএসএল বাংলাদেশ লি. ও ট্রাস্ট অ্যান্ড ট্রেড এম ইমপেক্স।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমি গত সপ্তাহে ডাক্তারের চেম্বারে গেলে সেখানে শুনতে পাই এক লোক চালসহ খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে রাখতে সবাইকে পরামর্শ দিচ্ছেন। ওই লোক জানান তিনি দেড় বছরের জন্য চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য মজুদ করে রেখেছেন। তার মতো আতঙ্কিত না হয়ে সবাই খাদ্যদ্রব্য মজুদ না করে তাহলে দেশে খাদ্য সংকট হবে না। এছাড়া দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সামনে ইরি ও বোরো মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুর ও সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে, এছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। আবার বেসরকারিভাবেও খাদ্যদ্রব্য আমদানি করা হচ্ছে। আমরা যদি হতাশা আর আতঙ্কিত হয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি পণ্য কিনে মজুদ না করি তাহলে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
পণ্যের স্বাস্থ্য সনদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদেরকে সার্টিফিকেট দিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে রপ্তানির জন্য নিরাপদ খাদ্য দরকার। এখন আমাদের সবার উচিত সচেতন হওয়া। আমরা যদি সব খাদ্য নিরাপদ করতে পারি তাহলে এত সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে না। নিজেদের সু-স্বাস্থ্য ও খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির জন্য নিরাপদ খাদ্যের একটা অবস্থা তৈরি করতে হবে। যাতে করে সার্টিফিকেট নয়, আমাদের নাম শুনলেই বিদেশিরা যেন খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে আগ্রহ হন।
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য আইন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ভোক্তাদের সচেতন করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে তখন আর সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে না।’
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আম রপ্তানির সময় বিদেশিরা তদারক করে তারপর তারা বাংলাদেশ থেকে আম নিয়ে যায়। সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা না থাকায় এমনটি হয়েছে। এখন থেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্যদ্রব্যের স্বাস্থ্য সনদ দেবে।’
তিনি আরও বলেন, এতদিন খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির জন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ-বিদেশের ল্যাব থেকে পণ্যের মান পরীক্ষা করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছে দিতো। ওইসব পরীক্ষা নিরীক্ষার সব কাজ এখন থেকে বিএফএসএ নিজেই করবে। এতে করে একদিকে রপ্তানিকারকদের ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে পণ্যের মানের বিষয়েও কম্পোমাইজ করার সুযোগ থাকবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, " আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কাজের যাতে ওভারলেপিং না হয়, তা আমরা বসে সমাধানের চেষ্টা করবো। " তিনি খাদ্যপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বজনস্বীকৃত স্বাস্থ্য সনদ প্রদান করার জন্য আস্থা তৈরীর উপর জোর দেন এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ও নির্ভুলভাবে প্রদান করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএফএসএর চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাইউম সরকার ও সদস্য আব্দুল আলীমসহ আরও অনেকে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য