-->
শিরোনাম

সচিবালয়ে প্রবেশে ফি নির্ধারণের পরিকল্পনা

মো. রেজাউর রহিম
সচিবালয়ে প্রবেশে ফি নির্ধারণের পরিকল্পনা

মো. রেজাউর রহিম: প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ে দর্শনার্থী ও যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে সরকার। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

সচিবালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং প্রবেশ কার্ডের ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। মূলত সচিবালয়ের ওপর চাপ কমাতে ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে প্রবেশ ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী, এক বছরের জন্য ফি নির্ধারণ করা হবে। ফির বিনিময়ে এক বছরের জন্য একটি প্রবেশ কার্ড দেয়া হবে। এ ছাড়া সচিবালয়ে বেসরকারি গাড়ি প্রবেশের ক্ষেত্রে বছরে সর্বোচ্চ ফি ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

জননিরাপত্তা বিভাগের প্রস্তাব অনুযায়ী বেসরকারি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রবেশ ফি বছরে পাঁচ হাজার টাকা এবং মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রাধিকারভুক্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সচিবালয়ে প্রবেশে বছরে তিন হাজার টাকা নির্ধারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের প্রবেশ ফি বছরে দুই হাজার পাঁচশ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

আর সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কারো কার্ড হারিয়ে গেলে, নষ্ট হলে বা অন্য কোনো কারণে ব্যবহারের অনুপযোগী হলে পুনরায় কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকা ফি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি ব্যক্তিদের প্রবেশের ক্ষেত্রে ফি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে জননিরাপত্তা বিভাগ।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি হিসেবে জননিরাপত্তা বিভাগ বলছে, সচিবালয় দেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। এটি সংরক্ষিত, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব, সচিবদের কার্যালয় এখানে অবস্থিত।

 

সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বেসরকারি ব্যক্তিরা বিভিন্ন মেয়াদের প্রবেশ পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া সচিবালয়ে বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ও দর্শনার্থীরা দৈনিক পাস নিয়ে প্রবেশ করেন। সচিবালয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে দর্শনার্থী গেটে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের পাশাপাশি প্রবেশপথে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এসব করতে প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। এই ব্যয় বহন ও পরিচালনা-রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

এ ব্যাপারে জননিরাপত্তা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, মূলত সচিবালয়ে মানুষ ও যানবাহনের নিয়ন্ত্রণেই ফি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সচিবালয়ে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ও যানবাহন প্রবেশ করে। কিন্তু গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা না থাকায় প্রতিদিন সচিবালয়ে তীব্র যানজটও দেখা দিচ্ছে। মূলত এ অবস্থা নিরসনে ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের ফি নির্ধারণের প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই এ প্রস্তাবের যৌক্তিকতা দেখছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ে মানুষ ও যানবাহন সীমিত করার জন্য ফি আরোপের চেয়ে বরং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।

 

তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি আরো পর্যালোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, সচিবালয়ে প্রবেশ ফি নির্ধারণ করা হলে তখন এক বছরের জন্য নির্ধারিত ফি দিয়ে অনেকেই সচিবালয়ে যানবাহনসহ ঢুকবেন। এতে দর্শনার্থী ও যানবাহনের সংখ্যা আরো বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রবেশ কার্ডের অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকবে।

 

এ ব্যাপারে গতকাল রোববার নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সচিবালয়ে প্রবেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করতেই এই ফি আরোপ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, সচিবালয়ে প্রবেশপত্রটি আরো স্মার্ট ও যুগোপযোগী এবং আরো নিরাপত্তা সংবলিত বিষয়গুলো যেন থাকে, সে জন্য সাজেশন করে আসছিল। এ বিষয়গুলো করতে আমাদের কিছু অর্থের প্রয়োজন হয়। যেমন এখানে ছবি থাকবে এর সঙ্গে চোখের আইরিশ, ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া থাকবে। এসব করতে আমাদের টাকার প্রয়োজন হবে।

 

তিনি বলেন, যারা কার্ড নেবেন তারাই এ অর্থ দেবেন- আমরা এ রকমই মনে করছি। সে জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

 

জানা গেছে, এর আগে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব/সচিবদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কেন্দ্র এবং একটি উচ্চ সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

 

মাত্র ১৭ দশমিক ৫৩ একর জমিতে ১১টি বড়-ছোট ভবন ও ৬টি ক্যান্টিন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, কর্মকর্তা/কর্মচারী, বিভিন্ন সভায় আগত সদস্য ও দর্শনার্থীসহ প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ সচিবালয়ে গমনাগমন করেন। এ ছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৬ হাজার যানবাহন সচিবালয়ে প্রবেশ করে থাকে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version