মো. রেজাউর রহিম: আগামী রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবদের বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এর আগে সচিবালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। করোনা মহামারি-পরবর্তী অবস্থা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী সচিবদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেবেন। বিশেষ করে ২০২৩ সালে বিশ^ব্যাপী খাদ্য, জ¦ালানি ও অন্যান্য সংকটের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্লেষকের পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় আশু করণীয় পদক্ষেপ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া রোববার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠকে পদ্মা ও মেঘনা বিভাগ গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। এ বৈঠকও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই দুটি বৈঠকের সময়সূচি অপরিবর্তিত থাকছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সচিবদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় করণীয় ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সশরীরে বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এ বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা ছিল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয় অনুবিভাগ) মো. রাহাত আনোয়ার জানান, সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পরিবর্তে এ বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সচিবালয়ে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত নিকারের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েই অনুষ্ঠিত হবে। সচিব সভা এবং নিকারের বৈঠকের স্থান পরিবর্তন হওয়ায় সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। তবে আগের নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় নিকার এবং দুপুর ১টায় সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, এর আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে সচিবদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছিল। তবে ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন। রোববারের বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি, জ্বালানি সংকট মোকাবিলাসহ গুরুত্বপূর্ণ আটটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। মূলত করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচিবদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্লেষণে খাদ্য সংকটের যে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে, তা মোকাবিলায় বিশেষ নির্দেশনা আসবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে অর্থমন্দাসহ আগামী বছর খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও) আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এ পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় করণীয় ঠিক করতে সচিবদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং সেগুলো সমাধানের বিষয়েও আলোচনা হবে। তিনি জানান, এফএওর বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২০২৩ সালের সম্ভাব্য আর বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার দেশে কৃচ্ছ্রতাসাধনের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর ওপর বাড়তি জোর দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথাও বলছেন। বৈঠকে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে এবং নেয়া হবে, তা কৃষি সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইবেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের জোগান নিশ্চিত করা, পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে করণীয় নির্ধারণ এবং সুশাসন ও শুদ্ধাচার নিয়ে সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ডলার সংকট ও দেশের অর্থনীতির দুর্বল দিক চিহ্নিতকরণ এবং তা কাটিয়ে উঠতে সরকারের করণীয় সম্পর্কে সচিবদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি কোন কোন মন্ত্রণালয়-বিভাগ বর্তমানে কী কী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তার বিস্তারিতও জানতে চাইবেন তিনি। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা, তাও আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী। আর সামনের দিনগুলোতে প্রশাসনের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আসতে পারে, সেগুলো তুলে ধরবেন সচিবরা।
জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী সচিবদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। এ ছাড়া ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, সরকারি কর্মকাণ্ডে যথাযথ আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ, নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বিষয়, সরকারি সেবার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারবিষয়ক পরিকল্পনা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি পর্যালোচনার পাশাপাশি প্রশাসনের সার্বিক বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা’ এবং বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর তিনটি করে মোট ছয়টি জেলা নিয়ে ‘মেঘনা’ বিভাগ গঠন চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। রোববারের নিকার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে এ প্রস্তাবসহ মোট ছয়টি প্রস্তাব উঠছে। নতুন এই দুটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব ছাড়াও রয়েছে অন্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাকে ঝাউদিয়া এলাকায় স্থানান্তর করে ‘ঝাউদিয়া থানা’ নামকরণ এবং ‘ঝাউদিয়া পুলিশ ক্যাম্প’কে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্প’ হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে নিকার বৈঠকের তারিখ গত ২ জুন নির্ধারিত ছিল। ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ বিভাগ নামে দুটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব থাকলেও বৈঠক স্থগিত করা হয়। নতুন এই দুটি বিভাগ বাস্তবায়ন হলে দেশে বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টিতে। তবে আগের সব বিভাগের নাম স্থানীয় শহরের নামে নামকরণ হলেও এবারই প্রথমবার দেশে দুটি বড় নদীর নামে এ দুটি বিভাগ হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, নিকার দেশে নতুন বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, থানা-ইউনিয়ন গঠন বা স্থাপনের প্রস্তাব বিবেচনা করে থাকে। নিকারের আহ্বায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন ১১ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১১ জন সচিব ও সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা কমিটিতে রয়েছেন।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য