মো. রেজাউর রহিম: দেশের বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে রদবদল প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আগামী মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ পদ হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে কাকে নিয়োগ করা হচ্ছে- তা নিয়ে প্রশাসনের সর্বস্তরে আলোচনা চলছে। এ পদে সিনিয়র, দক্ষ এবং আস্থাভাজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ করা হবে। আর আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ পদে নিয়োগ সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানো হচ্ছে- এমন আলোচনা চলছে সচিবালয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের মধ্যে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে-মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের এক বছরের মেয়াদ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।
অন্যদিকে বর্তমানে প্রশাসনে নিয়মিত চাকরিরত শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ারকে এ পদে নিয়োগ করা হচ্ছে বলেও ব্যাপক জল্পনা রয়েছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেনের নামও আলোচনায় আছে। এদিকে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন বিজয় দিবসের আগেই গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষতম পদ হওয়ায় দক্ষ, সৎ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের সবচেয়ে সিনিয়র কোনো কর্মকর্তাকে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। আর গুরুত্বপূর্ণ এ পদটিতে কাকে নিয়োগ করা হচ্ছে- গত কিছুদিন ধরেই প্রশাসনের সর্বস্তরে এ বিষয়ে চলছে তুমুল জল্পনা-কল্পনা। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদনক্রমেই হবে। বর্তমানে প্রশাসনে নিয়মিত চাকরিতে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন। আর বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বর্তমানে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োজিত আছেন। সচিবালয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, শীর্ষ এ দুই পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই তিন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় আছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ এ পদে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারির কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা আসার পর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
সচিবালয়ে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত জ্যেষ্ঠতাকে অন্যতম যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে সর্বজ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তার মধ্য থেকেই শীর্ষ এই পদে নিয়োগ হওয়ার কথা। এ হিসেবে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম ১৯৮২ সালের বিশেষ বিসিএস কর্মকর্তা এবং পরপর দুইবার এ পদে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। মেধা, কর্মদক্ষতা ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং স্বচ্ছ ইমেজের কারণে বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মেয়াদ আরেক দফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায় ছাড়াও সরকারি বড় প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তার রয়েছে ব্যাপক অভিজ্ঞতা।
এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে কবির বিন আনোয়ারকে নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান পদে কবির বিন আনোয়ারের চাকরির মেয়াদ আগামী ১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সপ্তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সহকারী কমিশনার হিসেবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। তিনি প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন-বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। দক্ষ প্রশাসক এবং নীতি, কৌশল ও উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। অন্যদিকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে যোগদান করেন মাহবুব হোসেন। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। প্রশাসনে তারও দক্ষতার সুনাম রয়েছে। এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে কবির বিন আনোয়ারের নাম জোরালো আলোচনায় রয়েছে। আর বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং মাহবুব হোসেনের নামও উচ্চপর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে নিয়োজিত ড. আহমদ কায়কাউসকে তিন বছর মেয়াদে একই পদমর্যাদায় ওয়াশিংটনে বিশ^ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চুক্তিভিত্তিতে ‘বিকল্প নির্বাহী পরিচালক’ পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য