-->
শিরোনাম
আগে শেষ হচ্ছে শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ

বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিতে প্রাণান্তকর চেষ্টা

ইমরান আলী
বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিতে প্রাণান্তকর চেষ্টা

ইমরান আলী : দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজ। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর আরেক অগ্রাধিকার প্রকল্প মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আর এ কারণে থার্ড টার্মিনালের কাজেও গতি এসেছে। টার্মিনালটি সেবার দিক দিয়ে বিশ^মানের করতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে টার্মিনালটি পূর্ণাঙ্গ চালু হবে এমনটি জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

 

জানা যায়, নির্মাণ শুরুর দুই বছরে কাজ হওয়ার কথা ছিল ৩০ ভাগ। হয়েছে ৩৩ ভাগের বেশি। ফলে আকাশপথে দেশের প্রবেশদ্বার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের (তৃতীয় টার্মিনাল) নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যেতে পারে নির্ধারিত সময়ের আগেই।

 

বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় বলছে, করোনার মধ্যেও প্রকল্পটির কাজ অব্যাহত থাকায় এ অগ্রগতি হয়েছে। কাজের গতি চলতে থাকলে ২০২৩ সালের জুনের আগেই শেষ হবে নির্মাণ।

 

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় শাহজালাল বিমানবন্দরের এই সম্প্রসারণ প্রকল্প। তারও আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। সে সময় এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে আরো ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলে প্রকল্পের আকার দাঁড়ায় প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায়।

 

প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয়ের বড় অংশ আসছে জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি ৫ হাজার ২৫৮ কোটি ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, শাহজালালে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি।

 

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে এর অ্যাপ্রন বা পার্কিং এলাকায় একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। ভেতরে যুক্ত হবে নতুন ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার আর ১৬টি লাগেজ বেল্ট। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা। এর পার্কিংয়ে একসঙ্গে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি।

 

তৃতীয় টার্মিনালে নির্মাণ করা হচ্ছে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। থাকছে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এই টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে মেট্রোরেলও। আর বর্তমান দুই টার্মিনালের সঙ্গে সুড়ঙ্গপথে যুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।

 

সূত্র জানায়, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় অদক্ষতা, অনিয়ম, অপেশাদার আচরণ ও হয়রানির অভিযোগের অন্ত নেই বিমানের বিরুদ্ধে। থার্ড টার্মিনাল প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। তিনি প্রতিনিয়ত এর খোঁজখবর নেন। বিমানের বর্তমান লোকবল, যন্ত্রপাতি ও দক্ষতা দিয়ে বিমান তো শাহজালালেই ঠিকমতো সেবা দিতে পারে না। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেয়া সংস্থাটির পক্ষে সম্ভব নয়। থার্ড টার্মিনাল হবে সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক মানের। আর এ কারণেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বিদেশি কোম্পানিকে।

 

এ বিষয়ে বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, বহুল আলোচিত থার্ড টার্মিনালের সেবা হবে আন্তর্জাতিক মানের। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার দায়িত্ব কারা পাবেন, কীভাবে পাবেন, তার জন্য নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। কনসালট্যান্ট নিয়োগ করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। সময় হলে টেন্ডার ছাড়া হবে। দরপত্রের মাধ্যমে বিশ্বমানের কোম্পানিকেই বাছাই করা হবে। এটা সামনেই দেখা যাবে।

 

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এখানে সেবাটাও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। এসব বিবেচনা করেই থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক মানের যোগ্য ও পেশাদার এজেন্ট নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 

জানা গেছে, থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের আগেই যাত্রীসেবার মান বাড়াতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। টেন্ডার সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

 

বিমান সূত্রে জানা গেছে, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দেয়ার মাধ্যমে বিমান বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি আয় করে। থার্ড টার্মিনালের দায়িত্ব পেলে এই আয় অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু দায়িত্ব না পেলে এবং এ সেবা হাতছাড়া হলে এ আয়ও হাতছাড়া হয়ে যাবে বিমানের। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় নিজেদের একক আধিপত্য বজায় রাখতে নানাভাবে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে তারা।

 

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট বেবিচকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির ২৮১তম বোর্ড সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

 

বোর্ড সভায় লিখিত প্রস্তাবের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে এয়ারপোর্ট কাউন্সিল ইন্টারন্যাশনালকে (এসিআই) দিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা নিয়ে আলোচনা হয়। টার্মিনালটির নির্মাণ শেষ হলে বিমানবন্দরে যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সার্বিক সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি হবে। বর্তমানে বিমানবন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম বেবিচক ও বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়।

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে উন্নত গ্রাহকসেবা দেয়াসহ বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করার উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পরিচালনা করলে কতটুকু সুবিধাজনক হবে- এ বিষয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই করা প্রয়োজন।

 

আলোচনার পর বেসরকারিভাবে থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মতি দেয়।

 

বেবিচক সূত্র জানায়, মূলত গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা আর যাত্রী ভোগান্তির কারণে তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেছেন, থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের পর আমরা লাগেজ হ্যান্ডলিং, মালামাল লোড-আনলোডসহ টার্মিনালের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে প্রশাসনিক নিরাপত্তা, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দফতরেই ন্যস্ত থাকবে। বিশ্বের উন্নত বিমানবন্দরে

 

এই ধরনের প্রক্রিয়া রয়েছে। এর ফলে আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রীরা দ্রুততার সঙ্গে সেবা পাবেন এবং যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জবাবদিহিতা থাকবে।

 

তিনি বলেন, ‘সংস্থাটি দেশীয় বা যেকোনো বিদেশি কোম্পানি হতে পারে, তবে এর মান অবশ্যই আন্তর্জাতিক হতে হবে।’

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version