-->
শিরোনাম

সরকারি কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ করছে সরকার

মো. রেজাউর রহিম
সরকারি কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ করছে সরকার

মো. রেজাউর রহিম: উন্নত দেশ বিনির্মাণের বর্তমান সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবং জনকল্যানমুখী ও গতিশীল প্রশাসন গড়ে তুলতে সরকারি কর্মকর্তাদের সব তথ্যসংবলিত আধুনিক ও যুগোপযোগী তথ্যভান্ডার (ডাটাবেজ) প্রস্তুত করছে সরকার। এ তথ্যভান্ডারে কেন্দ্রীয় এবং মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংযোজন করা হবে।

 

এ তথ্যভান্ডারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং যোগ্যদের সঠিক পদে পদায়ন এবং তাদের কর্মদক্ষতাকে প্রশাসন তথা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনিক কর্মকান্ড গতিশীল ও গণমুখী করতে প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন, বিশেষ কাজের অভিজ্ঞতার একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটবেজ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর পরিপূর্ণ তথ্যভান্ডা না থাকায় সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক জায়গায় পদায়ন এবং কাজে লাগানো অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।

 

আর মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (পিএমআইএস) বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অংশবিশেষ সংরক্ষণ করা হলেও তাতে সব কর্মকর্তার পেশাগত বৈশিষ্ট্য এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে কোন পদে কাজ করা প্রশাসনের জন্য যথাযথ এ সম্পর্কে বিশেষ কোনো তথ্য থাকে না।

 

আর এ জন্য কর্মকর্তাদের সঠিক পদে পদায়নের ক্ষেত্রে এবং কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, অবসরসহ বিভিন্ন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এছাড়া এসব কারণে সঠিক প্রয়োজনীয় যথাযথ তথ্যের ঘাটতি থাকায় উপযুক্ত ও প্রকৃত যোগ্য কর্মকর্তাকে সঠিক স্থানে পদায়ন করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। আর বিপরীতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় অনেকেই তদবিরসহ বিভিন্নমুখী প্রচেষ্টায় অনেক সময় প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও যোগ্যতা না থাকার পরেও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান। সেক্ষেত্রে সরকারি অর্থ ব্যয়ের পরেও দেশের মানুষ প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হন। এজন্য পদোন্নতি ও পদায়নের ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা, কর্মক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান, বিশেষ অর্জন, সততা, নৈতিকতা, পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দেয়া হবে।

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, প্রশাসনের গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা ও কর্মলব্ধ জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণের যাবতীয় তথ্যসংবলিত একটি তথ্যভাÐার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উন্নত দেশ বিনির্মাণে প্রশাসনকে জনগণের প্রকৃত সেবক হিসেবে কাজে লাগানোর জন্য সরকারে উচ্চপর্যায় থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রশাসনে সঠিক ব্যবস্থাপনা সৃষ্টি এবং অব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে দূর করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি (জিইএমএস) নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

 

শুধু চাকরির মেয়াদকে গুরুত্ব না দিয়ে এ কর্মসূচির মাধ্যমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মানবসম্পদ পদ্ধতির আধুনিকায়নের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা আরো গতিশীল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অধিকতর ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। আর এর মাধ্যমে যথাযথ ও কার্যকর মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রণয়ন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা মানসম্পন্ন করা সম্ভব হবে। এই কর্মসূচির আওতায় সরকারি কর্মকর্তাদের এবং বিদ্যমান সরকারি পদগুলোর একটি নির্ভরযোগ্য গতিশীল তথ্যভান্ডার তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে এবং সঠিক কর্মকর্তাকে সঠিক পদে পদায়ন করা সম্ভব হবে।

 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার যথাযথ উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়নে ও যুগোপোযোগী করে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরে প্রশাসনকে জনকল্যাণমুখী ও গতিশীল করার বিকল্প নেই।

 

জানা গেছে, সঠিক তথ্যভান্ডার না থাকায় পদোন্নতি কিংবা পদায়নের সময় অনেক কর্মকর্তা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে পদায়ন এবং পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। অন্যদিকে সংস্থার রিপোর্ট নিয়েও কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনেক সময় নিরপেক্ষ হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্যের ঘাটতি থাকে বলে মনে করেন তারা।

 

তাদের মতে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিবর্তে দাপ্তরিক পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি ও প্রমোশন দেয়া হলে অনেকাংশে এ সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা আরো সহজ ও যুগোপেযোগী হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

 

জানা গেছে, জিইএমএসএ কর্মকর্তাদের তথ্যের ঘাটতি দূর করা এবং পদায়ন নীতিমালা যুগোপযোগী করা হবে। অন্যদিকে বিদ্যমান পদায়ন নীতিমালা হালনাগাদ না হওয়ায় সঠিক ব্যক্তিকে উপযুক্ত স্থানে পদায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এসব সমস্যা সমাধানকল্পে এবং প্রশাসনকে আরো কার্যকর করার জন্য এ তথ্যভান্ডারকে সময়োপোযোগী করা হচ্ছে।

 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সিপিটি) ড. মো. সহিদউল্যাহ বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের পরিপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত না থাকায় পদোন্নতি-পদায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এজন্য (জিইএমএস) চালু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পিএমআইএসে কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নতুন একটি ওয়েবসাইট খুলেছি। এখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং অন্য ক্যাডার থেকে যারা উপসচিব হয়েছেন, তাদের অনেক তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। নতুন এই ওয়েব পেজে অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সব তথ্য পর্যায়ক্রমে সংযোজন করা হবে।

 

এতে প্রাথমিকভাবে কর্মকর্তাদের বার্ষিক কর্মবৃত্তি মূল্যায়ন (এপিএআর) আপলোডও করা হবে। আগামী জুন মাসের মধ্যে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং নন-ক্যাডার নবম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের যাবতীয় তথ্য আপলোড করে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার যাবতীয় তথ্য জিইএমএসএ থাকবে, যা প্রযুক্তিনির্ভর, আধুনিক, তথ্যসমৃদ্ধ গতিশীল ডাটাবেজ হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version