-->
শিরোনাম
* তফসিল জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই * নির্বাচন ২৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যেই

আলোচনায় ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

শাহীন রহমান
আলোচনায় ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন

শাহীন রহমান :দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. আবদুল হামিদ দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল। এ বছর ২৩ এপ্রিল তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আইন ও সংবিধান অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি- এটাই এখন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ সংসদীয় গণতন্ত্রে ফেরার পর ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন হয়েছিল। এরপর সবাই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন। আইনানুযায়ী, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে। ফলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তিনিই দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হবেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় আইনানুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ পদে নির্বাচন করতে হবে। জানুয়ারি শেষ সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

 

সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখের আগের নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। ফলে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ নির্বাচনের জন্য জানুয়ারি মাসেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আইনানুযায়ী ইসি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। এছাড়া সংসদ সদস্যদের তালিকার ভিত্তিতে ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। আগ্রহী প্রার্থীদের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী না থাকলে বা একমাত্র প্রার্থী থাকলে নির্বাচনের আগেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজীয় ঘোষণা করা হবে।

 

বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হলে নির্বাচিত নতুন রাষ্ট্রপতি ২৪ এপ্রিল দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন। সংসদের স্পিকার রাষ্ট্রপতি শপথবাক্য পড়াবেন। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এগিয়ে এলেও এ পদে এখন পর্যন্ত কারো নাম আলোচনায় আসেনি। ক্ষমতাসী দলের পক্ষ থেকে কাউকে এ পদে মনোনন দেয়া হয়নি। বিষয় নিয়ে এখন পর্যন্ত দলীয় ফোরামে আলোচনা করা হয়নি। তবে ক্ষমতাসী দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন নেয়া হবে, তিনিই হবেন দেশে ২২তম রাষ্ট্রপতি। তবে এখন পর্যন্ত কারো মনোনয়ন দেয়া না হলে কিছু নাম ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে। ফলে রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন- এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে নতুন রাষ্ট্রপতির সময়ে। সেজন্যই রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেনÑ এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। রাষ্ট্রের শীর্ষ পদটির জন্য অনেকের নামও শোনা যাচ্ছে।

 

রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে এখন পর্যন্ত যাদের নাম আলোচনায় এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি খায়রুল হক, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

 

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা বলেছেন, রাষ্ট্রপতি কে হবেন- এ নিয়ে আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাঙ্কের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। জানা গেছে, জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তিনি উপনেতা না হলে রাষ্ট্রপতি পদে তাকেও দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য মোশাররফ হোসেন এবং সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের নামও আলোচনায় আছে। সংবিধান মতে, ‘৩৫ বৎসরের কম বয়সের কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য নির্বাচনে অযোগ্য এবং অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারবেন না।’ একাধিক প্রার্থীর সুযোগ থাকলেও বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দল মনোনীত ব্যক্তিই রাষ্ট্রপতি হবেন।

 

ইতিহাস গড়ে টানা দুই মেয়াদে মো. আবদুল হামিদ দেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয় দফায় তিনি এ পদে আর নির্বাচন করতে পারছেন না। সংবিধানে সর্বোচ্চ দুইবার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার সুযোগ রয়েছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন আবদুল হামিদ। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিদায়ী নির্বাচন কমিশনের প্রধান কেএম নূরুল হুদা ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ওই বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। ওই সময় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তিনটি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। প্রথম মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ছিলেন সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ। প্রথম মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর টিকে যাওয়ায় পরের মনোনয়পত্রগুলো পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়নি। বাকি মনোনয়নপত্রগুলো এমনিতেই বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জমা দেয়া দ্বিতীয় মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ছিলেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, সমর্থক ছিলেন সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ। তৃতীয় মনোনয়নপত্রের প্রস্তাবক ছিলেন প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং সমর্থক সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক। ওই বছর ৭ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রাষ্ট্রপতি পদে মো. আবদুল হামিদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতি পদে মো. আবদুল হামিদ একমাত্র বৈধ প্রার্থী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা রাষ্ট্রপতি আইন ১৯৯১-এর ৭ ধারা মোতাবেক মো. আবদুল হামিদকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল।

 

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ১৪ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকার সময় তিনি প্রথম রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেন। এরপর জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০ মার্চ থেকে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ওই বছর ২৩ এপ্রিল তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। আইনানুযায়ী জাতীয় সংসদের সদস্যরা ভোট দিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন। কিন্তু ’৯১ সালের পর থেকে এ পদের নির্বাচনে কখনো ভোটের আয়োজন করতে হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে মো. আবদুল হামিদ এ পদে সপ্তদশ ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতি। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপতি পদে একবার ভোট হয়েছিল।

 

এরপর থেকে আওয়ামী লীগের আমলে সাহাবুদ্দীন আহমেদ, বিএনপি পরের আমলে প্রথমে বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং পরে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রাষ্ট্রপতি হন। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে জিল্লুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করেন। আইনানুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও বিএনপি সরকারের দ্বিতীয় আমলে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সাত বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এর মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের দুই বছর তিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন জরুরি অবস্থা জারির সুবাদে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version