আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আজ শেষ। শুক্রবার ফজর নামাজের পর আম-বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নিয়েছেন। জানুয়ারির ২০, ২১ ও ২২ তারিখে একই স্থানে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেবেন সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, রোববার (আজ) বেলা ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত করতে আয়োজক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। আখেরি মোনাজাতের জন্য শনিবার মধ্যরাত থেকে গাজীপুরের কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশ নিয়ন্ত্রণকক্ষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ইজতেমায় লাখ লাখ মানুষের সমাগম হবে। এজন্য শনিবার মধ্যরাত থেকে তিনটি সড়ক ও মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়া হবে। যে সড়কগুলো বন্ধ থাকবে, সেগুলো হচ্ছে কামারপাড়া সড়ক, টঙ্গী থেকে গাজীপুর ভোগরা মহাসড়ক এবং আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে বাইপাইল রোড। পুলিশ কমিশনার বলেন, এক্ষেত্রে এ পথের ঢাকাগামী যাত্রীরা নবীনগর হয়ে গাবতলী এবং গাজীপুর ভোগরা থেকে মীরের বাজার হয়ে ৩০০ ফিট রাস্তা ব্যবহার করবেন। ইজতেমা উপলক্ষে একাধিক বিশেষ ট্রেন চলমান থাকার কথাও জানান। ঢাকা থেকে যারা ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আসতে চান, তারা ট্রেন ব্যবহার করতে পারবেন।
এদিকে আম-বয়ান, জিকির আর ইবাদতের মধ্য গতকাল শনিবার সকাল থেকে ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শুরু হয়। বাদ ফজর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশিদুল হকের আম-বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। মাওলানা ক্কারী যোবায়েরের বয়ান বাংলায় তরজমা করেন। তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা কোরআন-হাদিসের আলোকে ঈমান, আমল, আখলাক ও কালেমা সম্পর্কে এদিন বয়ান করেন।
এশা পর্যন্ত এ বয়ান চলে। প্রথম পর্বে মুসল্লি সমাগম বেশি হওয়ায় ইজতেমা শুরুর আগের দিনই ময়দান পূর্ণ হয়ে যায়। পরে মুসল্লিরা নির্ধারিত খিত্তায় স্থান না পেয়ে তুরাগ নদীর পশ্চিম পাড়ে, ময়দানের পাশের কামারপাড়া সড়কে ও ফুটপাতে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাতে এবং খোলা জায়গায় অবস্থান নিয়ে ইজতেমায় অংশ নেন। ইজতেমাকে ঘিরে টঙ্গীর তুরাগপাড়ে হাজারো মানুষের ভিড়। ইজতেমার মাঠ ছাড়িয়ে মানুষের সমাগম আছে আশপাশের সড়ক-মহাসড়কেও। ফজরের নামাজের পর শুরু হওয়া বয়ান শেষ হয় সকাল ১০টার দিকে। এরপর দ্বিতীয় বয়ান শুরু হয় জোহরের নামাজের পর। এর মাঝের সময়ে তাবলিগ জামাতের সাথীরা নিজেদের মধ্যে ইসলামী আলোচনা ও জিকির করেন।
ইজতেমায় ছয়জনের মৃত্যু : এদিকে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে আসা মুসল্লিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, শুক্রবার রাত ৯টা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত বার্ধক্যজনিত কারণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন খুলনার ডুমুরিয়া থানার মলমলিয়া গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন (৭০), চট্টগ্রামের রাউজান সদরের আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৭০) ও নরসিংদীর মনোহরদী থানার মাছিমপুর এলকার রহমতুল্লাহর ছেলে মো. হাবিবুর রহমান হবি (৭০)।
এর আগে ইজতেমায় আসা ঢাকার যাত্রাবাড়ীর আক্কাস আলী (৫০) শুক্রবার বিকেলে এবং গাজীপুরের আবু তৈয়ব (৯০) ও সিলেটের নুরুল হক (৬৩) বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান। ইজতেমা ময়দানের লাশের জিম্মাদার মাওলানা মোহাম্মদ শাকের বলেন, শুক্রবার রাত ৯টায় মোফাজ্জল হোসেন ও আড়াইটার দিকে আব্দুর রাজ্জাক মারা যান। আর গত শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মারা যান হাবিবুর রহমান। তারা প্রত্যেকেই বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন। ইজতেমা ময়দানে তিনজনের জানাজা শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য