-->
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সেপ্টেম্বরে

মো. রেজাউর রহিম
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর সেপ্টেম্বরে

মো. রেজাউর রহিম: চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এ সম্ভাব্য ভারত সফর দুই দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও দেশটিতে সফর করবেন। আর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের আগামী মার্চ এবং জুন মাসে দুদফা ভারত সফরের কথা রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক আগামী মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে. আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনা-উত্তর পরিস্থিতি এবং বৈশি^ক সংকটের ফলে জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ ইস্যুর পাশাপাশি দুদেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

 

এছাড়া দুদেশের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে নিত্যপণ্য, জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা আরো সম্প্রসারণ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের নৈকট্যের জন্যও এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় অমীমাংসিত সমস্যা নিরসনে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও জ্বালানিমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

 

গত মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলাদেশে ভারত থেকে নিত্যপণ্যের আমদানি নিশ্চিত করতে দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেছেন। আর আগামী মার্চ মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফরের কথা রয়েছে। এছাড়া পানিসম্পদমন্ত্রীরও দেশটির সঙ্গে দুদেশের মধ্যকার অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বৈঠক ছাড়াও চলতি বছর ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে দুদেশের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের আরো প্রায় ২০টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

 

এসব বৈঠকের মধ্যে রয়েছেÑ দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠক, পানিসম্পদমন্ত্রীদের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রীদের মধ্যেকার বৈঠক। এছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ ও সীমান্তে মানুষ হত্যাসহ অন্যান্য ইস্যুতে দুদেশের বিজিবি-বিএসএফ সহযোগিতা সম্প্রসারণে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি দুদেশের উপক‚লীয় বাণিজ্য এবং স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিষয়গুলোও বিভিন্ন বৈঠকে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, বাংলাদেশ ও ভারত এই দুদেশেই ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বিধায় প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের ভারত সফর এবং দুদেশের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এছাড়া সার্বিক বৈশি^ক প্রেক্ষাপটেও ভারত-বাংলাদেশের চলতি বছরের বৈঠকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

 

এদিকে, বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক বৈঠক আগামী মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ভিনয় মোহন কৌয়াত্রা ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য দিল্লি সফর এবং আগামী মার্চ মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের ভারত সফরের আগে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এ বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

 

বিশেষ করে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দুদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এ বৈঠকের গুরুত্ব রয়েছে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন খাতে আগের নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নের বাস্তব অবস্থা এবং এসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করে কীভাবে পরস্পরিক সহযোগিতা আরো সম্প্রসারণ করা যায়, সে বিষয়ে দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে বৈঠকে আলোচনা হবে। অবশ্য এর আগে গত বছর পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর ভিনয় মোহন এপ্রিলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন।

 

সূত্র জানায়, এর আগে ২০২১ সালে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো সেগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতির পাশাপাশি দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্য, পানি, বিদ্যুৎ, কানেক্টিভিটি, নিরাপত্তা, লাইন অব ক্রেডিট, রোহিঙ্গা, আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যু ও বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে পারস্পরিক সহযোগিতা আরো সম্প্রসারণের বিষয়ে আলোচনা হবে।

 

এদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আগামী ১-২ মার্চে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ বছর জি-২০-এর চেয়ার ভারত এবং অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে ভারত। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেও দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক আগামী জুন অথবা জুলাইতে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version