আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাতীয় সমাবেশে একগুচ্ছ দাবি জানানো হবে। আজ রোববার জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) জেলা পর্যায়ে একটি পরিচালক (পঞ্চম গ্রেড) পদ সৃষ্টি। এর সঙ্গে আবাসন ও যানবাহনের সমস্যাকেও বড় করে দেখা হচ্ছে।
এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভিডিপি সদস্যদের পোশাকের বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে চান কর্মকর্তারা।
আনসার ও ভিডিপির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, এবারের আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাতীয় সমাবেশ অন্য যেকোনো বারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, দেশের উন্নয়ন ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের সুযোগ-সুবিধার তুলনায় তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম ও অপ্রতুল বলেও মনে করেন তারা। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আনসার বাহিনীকে পিছিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনসারের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলায় পুলিশ, পিডবিøউডি, কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, বিএডিসি, সড়ক ও জনপথ ইত্যাদি ক্যাডার সার্ভিস ছাড়াও এলজিইডি, পানি উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, বিআরডিবি, এনএসআই ইত্যাদি নন-ক্যাডার পদে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
কিন্তু আনসারে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। সেই কর্মকর্তাকে আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট বলা হলেও তিনি উপপরিচালক (ডিডি)। এতে জেলার অন্যান্য প্রশাসনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।’
এখন আনসারের দাবি, জেলা পর্যায়ে একটি পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা পদ ও দুটি অতিরিক্ত সহকারী পরিচালক পদ সৃষ্টি করা। যাদের পদবি হবে জেলা পরিচালক (ডিরেক্টর)। তার অধীনে একজন উপপরিচালক (ডেপুটি ডিরেক্টর, ডিডি)। আর তিনজন সহকারী পরিচালক (এডি) থাকবেন। বর্তমানে জেলায় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে উপপরিচালক (ডিডি) ও একজন সহকারী পরিচালক (সহকারী ডেপুটি ডিরেক্টর, এডি) দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু ঢাকা জেলায় একজন ডিডির পরে দুজন এডি দায়িত্ব পালন করেন।
প্রোগ্রাম শিডিউলে দেখা যায়, আজ রোববার আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৩তম জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় গাজীপুরের সফিপুরে আনসার একাডেমিতে অভিবাদন গ্রহণ করবেন। এরপর কুচকাওয়াজ, পদক বিতরণ, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ হবে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটে সংঘবদ্ধ মার্চ ও কুচকাওয়াজ শেষ করবেন। পরে তিনি আরো কয়েকটি ইভেন্টে অংশ নেবেন।
এর মধ্যে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটবেন, আনসার-ভিডিপি কুটিরশিল্প প্রদর্শনী পরিদর্শন করে পরে আনসার বাহিনীর সঙ্গে দরবারে অংশ নেবেন। সেখানেই তিনি আনসার বাহিনীর বিভিন্ন বিষয় শুনবেন বলে জানা গেছে।
আনসার বাহিনীর আরেক কর্মকর্তা বলেন, “২০১৮ সালে নির্বাচনে সারা দেশের ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ‘ব্যাটালিয়ন আনসার’ ও ‘সাধারণ আনসারের’ প্রায় পাঁচ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়। ওই সময় বেশ কিছু সদস্য নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হন।
এর মধ্যে অনেকে মারাও যান। ওই সময় আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিজস্ব যানবাহন না থাকায় আহত সদস্যদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।” তাই আগের অভিজ্ঞতা থেকে এবার নির্বাচনের আগে যানবাহনের সমস্যা সমাধান করতে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতে চান তারা।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচনসহ সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দায়িত্ব পালন করতে গেলে বাহিনীর সদস্যদের যানবাহন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া পোশাকের সমস্যাও বড় আকারে দেখা দিচ্ছে বাহিনীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করা অনিয়মিত সদস্যদের মধ্যে। আনসার জেলা কমান্ড্যান্ট অফিস থেকে নির্বাচন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আগে চাহিদা দিয়ে সাধারণ আনসার সদস্যদের পোশাক সংগ্রহ করতে হয়। পরে অনুষ্ঠান শেষে আবার জেলা অফিসে সেটা জমা দিতে হয়। তবে অনুষ্ঠানে দেয়া এসব পোশাক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের।’
আনসার বাহিনীর সদস্যদের জন্য আবাসিক সুবিধা খুবই কম। আনসার সদর দপ্তরে একটি অফিসার মেস ও একটি সৈনিক ব্যারাক আছে। এত বড় একটি বাহিনীর সদস্যদের জন্য এটা খুব কম। কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা করার বিষয়ও আসবে এবারের জাতীয় সমাবেশে। এ ছাড়া আনসার ও ভিডিপির জন্য উন্নয়ন বাজেট থেকে প্রতিটি জেলায় অফিস ভবন করারও দাবি তাদের। আনসার বাহিনীর সারা দেশে ৪৫টি ব্যাটালিয়ন আছে।
এর মধ্যে ১৫টি আধুনিকায়ন হলেও বাকিগুলো এখনো জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় আছে। কোনো জেলায় আধুনিক ভবনের সুবিধা নেই। এ ছাড়া এসব ব্যাটালিয়ন ও জেলা কম্যান্ড্যান্ট অফিসের আওতায় আবাসিক সুবিধা নেই। এতে বাহিনীর কর্মকর্তা ও সাধারণ সদস্যরা আবাসিক সমস্যায় ভুগছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।
আনসার বাহিনীর বিভিন্ন সমস্যা ও চাহিদার বিষয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিতে নিতে এত বড় একটি সমাবেশ চলে এলো। প্রত্যাশা তো অনেক কিছুই থাকে। বাহিনী সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সবকিছুই জানেন। একটির পর একটি জিনিস দিয়েই যাচ্ছেন। এটা চলমান প্রক্রিয়া, সব প্রত্যাশাই তিনি পূরণ করবেন।
সমাবেশের কয়েকটি সেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। এ সময় কথার ফাঁকে ফাঁকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বাহিনী সম্পর্কে জানতে চাইবেন। তখন আমি বিষয়গুলো তাকে জানাব। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। এসব বিষয় ছাড়া আরো অনেক বিষয় আছে।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘আনসার বাহিনী আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। আগে বাহিনীর থ্রি নট থ্রি রাইফেল ছিল, এখন শর্টগান চলে এসেছে। একটার পর একটা উন্নয়ন হচ্ছে। আগে আনসারের এক সদস্যকে স্থায়ী হতে লাগত ১৫ বছর, প্রধানমন্ত্রী সেটা ছয় বছরে নিয়ে এসেছেন। আমি নিশ্চিত, এটা একেবারে শূন্যের কোঠায় আসবে। সবচেয়ে বড় কথা, আনসার আইন প্রক্রিয়াধীন।
এই আইন হয়ে গেলে এসবের আর কিছু দরকার হবে না। সবকিছুই এই আইনের মধ্যে আছে। এখন আইন পাস হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি।’
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য