-->

ভূতের গল্প খোঁজে শিশুরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
ভূতের গল্প খোঁজে শিশুরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: একসময় সারা দেশে যৌথ পরিবারের প্রচলন ছিল। মা-বাবা, ভাই-বোনের সঙ্গে পরিবারের থাকতেন দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, নানা-নানিসহ অন্যরা। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না, ছিল না অহরহ টেলিভিশন বা অন্য কোনো বিনোদন মাধ্যম। যে কারণে শিশুদের প্রধান আকর্ষণ ছিল রাজা-রানি আর ভূতের গল্প শোনা। সন্ধ্যার পরই তারা দাদা-দাদি, নানা-নানি বা পরিবারে যারা বড় তাদের কাছে গল্প শুনতে বসে যেতে। লেপ-কাঁথা মুড়ি দিয়ে গা-শিরশির গল্প শুনতে শুনতেই ঘুমিয়ে পড়ত শিশুরা। এখন এর প্রচলন নেই বললেই চলে। যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ায় এখন শিশুরা একা একা বেড়ে ওঠে। আটকে থাকে মোবাইল গেমে। তবে এত সবের মধ্যে এখনো শিশুরা ভূতের গল্প শুনতে ভালোবাসে। বইমেলায় এসে এখনো ভূতের গল্পের বই খোঁজে শিশুরা।

 

বইমেলায় ঘুরতে আসা শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে দেশি-বিদেশি সব ভূতের গল্প। শুধু ভূতের গল্প হলেই চলবে না। হতে হবে ভয়ংকর সব ভূতের গল্প। বইয়ে থাকতে হবে ভয়ংকর ভূতের ছবি। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে, নাবিল নামে এক শিশু জানায়, ‘আমার ভূতের গল্প পড়তে ভালো লাগে। বাসায় যত বই আছে, তার বেশিরভাগই ভূতের বই। এবার মেলা থেকে বেশকিছু ভূতের গল্পের বই কিনেছি। আব্বুকে বলেছি আরো কিছু বই কিনে দিতে।’ একই প্রসঙ্গে রিয়া নামে এক শিশু বলে, ‘রাজকন্যা ও ভূতের বই কিনেছি। আর কিছু বই খুঁজছি। আমার ভয়ংকর সব ভূতের গল্প পছন্দ। সেরকম বই পাচ্ছি না। পেলেই কিনব। গত মেলায় যে বইগুলো কিনেছিলাম। তা শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি নিজেই পড়ি। যখন ছোট ছিলাম আম্মু পড়ে শোনাতেন। ভূতের গল্প আমি খুব ভালোবাসি।’ এদিকে মেলায় শিশুচত্বরে থাকা স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ভূতের বই ভালো বিক্রয় হয়। একইসঙ্গে ডাইনোসর, পাতালপুরের গল্প, জল পরি এসব পছন্দ করে শিশুরা। বিশেষ করে যাদের বয়স ১৬-এর নিচে তারাই এসব বই পছন্দ করে। তারা লেখক দেখে বই কেনে না। ছবি আর গল্প পছন্দ হলেই কেনে।

 

জানতে চাইলে কবি লিমা সুলতানা লিপু ভোরের আকাশকে বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ শিশুই গেম খেলে সময় পার করে। এর মধ্য কিছু শিশু বইপ্রেমী হয়ে উঠছে এটা ভালো খবর। অভিভাবকরা যদি তাদের এ বিষয়ে উৎসাহ দেন, তাহলে আরো বেশি পাঠক তৈরি হবে। আমার মনে হয় যে শিশুটি ভালো পাঠক হয়ে ওঠে সে নষ্ট হয়ে যায় না।’ এদিকে সময় যতই গড়াচ্ছে, ততই ভিড় বাড়ছে বইমেলায়। মেলায় আসছে ছেলে-বুড়ো সব বয়সের মানুষ। দেখে দেখে কিনছেন নিজের পছন্দের বই। দিচ্ছেন উপহারও। মেলায় দেখা হচ্ছে বন্ধাবান্ধবের সঙ্গে। জমে উঠছে আড্ডা। ঘুরে ঘরে তুলছেন ছবি। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল মেলার ১৬তম দিন। অন্যদিনের মতো গতকালও মেলায় ভিড় ছিল উচড়েপড়া। বিকেল ৩টায় গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ঢুকে পড়েন অপেক্ষমাণ পাঠক-দর্শনার্থীরা। জমে উঠেছিল শিশু কর্নার। এদিকে এবার মেলায় বিক্রয়ও যথেষ্ট ভালো হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, অন্যবার প্রথম দিকে সবাই ঘুরতে আসে। পরে এসে বই কেনেন। তবে এরার ভিন্নচিত্র দেখা যাচ্ছে। এবার প্রথম থেকেই মেলায় কেনাবেচা তুলনামূলকভাবে জমজমাট।

 

এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশুচত্বরে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভিলিয়ন ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভিলিয়ন আছে ১৪৭টি। সব মিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং মোট ৭০৪টি (প্যাভিলিয়ন বাদে) স্টল আছে। এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এদিকে মূল গেট থেকে ঢুকেই রয়েছে শিশুচত্বর। সেখানে সিসিমপুরসহ শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য প্রতিদিন নানা আয়োজন থাকছে। এ বছর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি ঘোষিত সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version