মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেখতে দেখতে অমর একুশে বইমেলার অর্ধেকের বেশি দিন শেষ হয়েছে। এবার মেলার প্রথম থেকেই তুলনামূলকভাবে ভিড় বেশি ছিল। দিন যত যাচ্ছে ততই ভিড় আরো বাড়ছে। গত দুই দিন ছুটি থাকায় মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। শিশুপ্রহর থাকায় ভিড় ছিল সব ধরনের মানুষের। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ভিড় বেশি থাকায় বেচা-কেনাও ভালো ছিল। তবে ক্রেতার চেয়ে মেলায় ছিল ঘুরতে আসা সেলফিবাজদের ভিড়। ছবি তুলে ঘুরে আনন্দে আড্ডায় দিন কাটিয়েছেন তারা। এদের বেশিরভাগই ছিল কিশোর-যুবা।
মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায় সেখানে বিভিন্ন বয়সের ছেলে-মেয়েরা হাজির হয়েছে। এরা বেশিরভাগই বই কেনেনি। তবে সবার হাতেই ছিল মোবাইল ফোন। বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলে মেলার স্মৃতি ধরে রাখতে ব্যস্ত ছিল তারা। তাদের সঙ্গে আলাপ করলে জানা যায়, মেলা শুধু বই কেনার জন্য নয়। এটা একটা মিলন মেলা। দীর্ঘদির যাদের সঙ্গে দেখা হয় না মেলায় তাদের সঙ্গে দেখা হয়, আড্ডা হয়, ভালো লাগে। সে জন্যই তারা মেলায় এসেছে।
জানতে চাইলে, আশিক আহমেদ নামে এক যুবক বলেন, ‘আমি ঢাকায় বড় হয়েছি। এখানে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। গত বছর আমরা কলেজ লাইফ পার করেছি। এখন আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। যে কারণে সবার সঙ্গে দেখা হয় না। সবাই সবাইকে মিস করি। আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য দুই বন্ধু জাহাঙ্গীর নগর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। অন্য দুই জন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বইমেলকে কেন্দ্র করে সবাই এখন ঢাকায়। সে কারণে আমাদের আড্ডা জমে ওঠেছে। আমরা অনেক ছবি তুলেছি যেগুলো জীবন স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। একই বিষয়ে লায়লা নাজনিন নামে এক ছাত্রী বলেন, ‘আগের দিন আব্বু-আম্মুর সঙ্গে মেলায় এসেছিলাম। সেদিন বই কিনেছি। আজ এসেছি বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, আজ শুধু আড্ডা হবে। আমাদের উদ্দেশ্যই আজ আড্ডা দেয়া। সেটাই হচ্ছে। আর এখকার আড্ডা মানে সেলফি তোলা হবেই। এটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। বহুদিন পর আমরা এসব ছবি দেখে আজকের স্মৃতিচারণ করতে পারবো।
এদিকে মেলা শেষের দিকে চলে গেলেও এখনো জমে ওঠেনি বাংলা একাডেমি চত্বর। ভেতরে ভিড় বলতে শুধু বাংলা একাডেমি বই বিক্রয় কেন্দ্রে। এছাড়া বাকি অংশে দর্শনার্থী বা ক্রেতার আনাগো নেই। ফলে অন্য দিনের মতো বেচা-বিক্রি নেই একামেড়ি চত্বরে থাকা স্টল মালিকদের। বাংলা একাডেমির ভেতরে থাকা স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় তারা শুরু থেকেই অলস সময় পার করছে। শুধুমাত্র শিশুপ্রহর দুই দিনে কিছুটা ভিড় হচ্ছে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘আমার মনে হয় মেলা উদ্যানে হওয়া উচিত। একাডেমির মধ্যে কিছু নাম করা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকবে। কারণ এদের বেচাকেনা নিয়ে তেমন কোনো ভাবনা নেই। কিন্তু অন্য যারা এখানে স্টল পান তাদের খরচ ওঠে আসা দায় হয়ে পড়ে। এতে তারা পরের বছরের মেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
একই বিষয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মো. ফিরোজ বলেন, প্রথম তিন দিন সন্তোষজনক উপস্থিতি এবং বেচাকেনা ছিল। তারপর উপস্থিতি কমে গেছে। এর পর আর সেভাবে ভিড় হয়নি। অনেকে জানেই না যে এদিকেও মেলা আছে। উদ্যানে খোলা জায়গা বেশি থাকায় সবাই ওখানে চলে যায়। তবে শুক্রবার এখানে কিছু ভিড় ছিল। সে কারণে বেচা-কেনাও কিছুটা হয়েছিল।
এবার বইমেলার স্লোগান ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশু চত্বরে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং মোট ৭০৪টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল । এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এদিকে গতকাল বইমেলার ১৮তম দিনে মেলা শুরু হয় সকাল ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর ছিল। গতকাল বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য