-->
শিরোনাম

অযত্ন-অবহেলায় ভাষাশহীদ রফিকের মায়ের কবর: সংরক্ষণের দাবি

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি
অযত্ন-অবহেলায় ভাষাশহীদ রফিকের মায়ের কবর: সংরক্ষণের দাবি
ভাষার জন্য জীবনদানকারী প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন আহমেদ রফিকের মায়ের কবরটি রাস্তার ধারে অযত্ন-অবহেলায় রয়েছে

বাবুল আহমেদ, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে শহীদ হন মানিকগঞ্জ সিংগাইরের পারিল গ্রামের সন্তান রফিকউদ্দিন আহমেদ। শহীদ রফিকের মা রোফেজা খাতুন ১৯৮৯ সালে মৃত্যুবরণ করায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে মানিকগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র দেবেন্দ্র কলেজের সামনের খালপাড়ে। তার মায়ের কবরটি একটি বিরোধপূর্ণ স্থানে রয়েছে।

 

এদিকে শহরের প্রাণকেন্দ্রে শহীদ রফিকের মায়ের কবর থাকলেও স্থানীয় বাসিন্দাসহ অল্পসংখ্যক মানুষ জানলেও বাকি সবার এখনো অজানা রফিকের মায়ের কবর কোথায়। ভাষার জন্য জীবনদানকারী প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন আহমেদ রফিকের মায়ের কবরটি রাস্তার ধারে অযত্ন-অবহেলায় রয়েছে।

 

শহিদ রফিকের ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. খোরশেদ আলম বলেন, কবরটির জায়গা নিয়ে দেবেন্দ্র কলেজের সঙ্গে বিরোধ চলমান রয়েছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য একাধিকবার জেলার উচ্চপর্যায়ে মিটিং হয়েছে। তবে ফয়সালা হয়নি, ফলে এখানে নিজেরাও পারিবারিকভাবে কোনো সংস্কার কিংবা কর্মসূচি আয়োজন করতে পারি না। ২১ ফেব্রুয়ারির যত অনুষ্ঠান গ্রামের বাড়ি পারিলের রফিকনগরে নানা আয়োজনে পালিত হয়।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে শহীদ রফিকের মা রোফেজা খাতুন মৃত্যুবরণ করেন। সর্বস্তরের মানুষ সহজে যেন শ্রদ্ধা জানাতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি সিংগাইরের পারিলে তার মরদেহ সমাহিত না করে দেবেন্দ্র কলেজের মাঠের দক্ষিণ পাশে সমাহিত করা হয়। বর্তমানে শ্রদ্ধা জানানো দূরের কথা অনেকেই তা জানেনও না। এখানে সমাহিত রয়েছে ভাষার জন্য জীবনদানকারী রফিকের মাকে। কবরের পাশে জরাজীর্ণ পরিবেশ, নেই কোনো সাইনবোর্ড। ফলে কবরটি কার সাধারণ মানুষ তা জানতেও পারছেন না।

 

দেবেন্দ্র কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী রুবেল হোসেন বলেন, দেবেন্দ্র কলেজে লেখাপড়া করছি। এই রাস্তা দিয়েই চলাফেরা করি প্রতিদিন। কিন্তু এটি যে ভাষাশহীদ রফিকের মায়ের কবর, তা জানতাম না। আমাদের সহপাঠীর অনেকেরই জানা নেই। আর জানবই বা কী করে? এখানে নেই কোনো সাইনবোর্ড। জেলা ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, যেহেতু শহীদ রফিক কোথায় সমাহিত আছেন সেটি আমরা ৭১ বছর পার হওয়ার পরও শনাক্ত করতে পারিনি।

 

আর তার মাকে আমরাই মানিকগঞ্জ শহরে সমাহিত করেছি। অথচ দুঃখের বিষয় হলো মায়ের কবরটি যে স্থানটিতে আর সেখানে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের নিজস্ব সম্পত্তি দাবিকৃত সাইনবোর্ড ঝুলছে। বিবদমান বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমাঝোতায় কবরটি মানসম্মতভাবে সংস্কার ও সংরক্ষণ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

 

তিনি আরো মনে করেন সাধারণ মানুষ এখানে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগটুকু তৈরি করতে দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের এ বিষয়ে নজর দেয়া উচিত। মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রমজান আলী বলেন, শহীদ রফিকের বাড়ি সিংগাইরের পারিলে। তার পরও সর্বস্তরের মানুষ যাতে শহীদ রফিককে স্মরণ করে তার মায়ের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে পারে, সে জন্য শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমাহিত করা হয়। দ্রুত কবরটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

এ ব্যাপারে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মো. রেজাউল করিম টেলিফোনে জানান, শহীদ রফিকের মায়ের কবরস্থান সংরক্ষণ নিয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা প্ররিষদের চেয়ারম্যানসহ সর্বস্তরের এলাইড পারসন নিয়ে কবরটি সংরক্ষণ নিয়ে সভা হয়েছে। এটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হবে। তিনি বলেন, জায়গাটি দেবেন্দ্র কলেজের হলেও যেহেতু এখানে সমাহিত আছেন ভাষার জন্য জীবনদানকারী এক শহীদের মায়ের কবর এটি তাদের জন্যও গর্বের।

 

এখন আর এটি কলেজের সম্পত্তি হিসেবে তিনি দেখছেন না। তবে তিনি জানান, কবরটি সরকারের কোন দপ্তর সংস্কার কিংবা সংরক্ষণ নাকি কলেজ কর্তৃপক্ষ করবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও তিনি জানান। তিনি জানান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে দায়িত্ব দিলেও তারা সেটি বাস্তবায়ন করবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version