মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: অমর একুশে বইমেলায় বিদায়ের ঘণ্টা বাজতে শুরু করেছে। সময় যত ফুরাচ্ছে ততই বাড়ছে ভিড়। শেষ সময়ে মেলায় এসে বই কিনছেন পাঠক দর্শনার্থীরা। এবার মেলার শুরু থেকেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল অমর একুশে ফেব্রুয়ারির দিন। এদিন মেলায় ছিল নজনতার ঢল। কানায় কানায় পূর্ণ ছিল উদ্যান। ভিড় ছিল বাংলা একাডেমিতেও। বুধবার মেলার বাইশতম দিনেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
একুশে ফেব্রুয়ারির দিন মেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণসহ শাহবাগ এলাকায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরো বাড়তে থাকে। শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ছিল মানুষের গায়ে মানুষ। রিক্সা চলারও অবস্থা ছিলো না। যার জের ধরে মেলায় আসা সবাইকেই প্রতিয়োগিতা করে ঢুকতে হয়। অনেকে ভিড় সামাল না দিতে পেরে মেলায় ঢুকতে পারেননি।
জানতে চাইলে সোহেল আহমেদ নামে এক ব্যাক্তি ভোরের আকাশকে বলেন,‘ মেলার শুরুর দিকে এসে কিছু বই কিনেছিলাম। আজ এসেছি স্ত্রী-বাচ্চাসহ। এত ভিড়ের মধ্য দুই বাচ্চা নিয়ে মেলায় ঢোকা সম্ভব না। সে কারণে চলে যাচ্ছি। শুক্রবার আবার আসার ইচ্ছে আছে। তিনি বলেন ভিড় হলেও এটা ভাবতে ভালো লাগছে যে, বই মেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে যারা মেলায় আসেন তাদের বেশিরভাগই দর্শানার্থী। সবাই যদি একটি করে বই কিনতেন তাহলে বেচা-বিক্রি আর বেড়ে যেতো।
প্রতি বছরই শহীদ দিবসে মেলায় ভিড় দেখা যায়। একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সরকারি ছুটি থাকে। মূলত সে কারণেই থাকে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শিশু-কিশোরদের নিয়ে বইমেলায় আসেন অভিভাবকরা। এ বছরও সেই পরিবেশ ছিলো। মেলায় এসে সন্তানদের বই কিনে দিতে পেরে সন্তুষ্ট অবিভাবকেরা। মেলার পরিসর বড় এবং সুশৃঙ্খল হওয়ায় খুশি বইপ্রেমিরা।
গত দুইদিনে শিশু কিশোরদের আনন্দ উচ্ছ্বাস ছিলো চোখে পড়ার মত। অবিভাবকরা জানান, ছোটবেলা থেকেই মাতৃভাষার প্রতি টান সৃষ্টি করাতেই তারা সন্তানদের নিয়ে আসছেন বইমেলায়। আর লেখকদের আনন্দ উদদ্দীপনা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের পাঠক ও শুভাকাঙ্খিরা। সবাই পছন্দের লেখকের বই কিনছেন তাদের অটোগ্রাফ নিচ্ছেন, লেখকের সঙ্গে ছবি তুলছেন, এ যেনো আনন্দ উৎসব।
অন্যদিকে এবারও হুমায়ূন আহমেদের বই বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতারা। আর মেলার সামগ্রিক আয়োজনে সন্তুষ্ট পাঠক-দর্শনার্থীরা। প্রযুক্তির কাছে যাতে বই ম্লান না হয়, তরুণ প্রজন্মের মুঠোফোনের পাশেই যাতে একটি বইয়ের স্থান হয় সেই প্রত্যাশা জানান লেখক ও সাহিত্য অনুরাগীদের।
এবার বইমেলার স্লোগান-‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট।
প্রাপ্ত তথ্য মতে এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশু চত্ত্বরে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন ৩৪টি।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং সর্বমোট ৭০৪ টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল । এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য