-->
শিরোনাম

প্রবাসীদের এনআইডি সেবায় অগ্রগতি নেই

শাহীন রহমান
প্রবাসীদের এনআইডি সেবায় অগ্রগতি নেই

শাহীন রহমান: প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে এবং স্মার্ট এনআইডির আওতায় আনতে ২০১৯ সালে কার্যক্রম হাতে নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন-ইসি। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেছে। এই সেবার কাক্সিক্ষত কোনো অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত কাউকে এনআইডি দিতে পারেনি তারা।

 

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইসির এনআইডি উইংয়ের প্রতিনিধি দল সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যেতে না পারায় আটকে আছে প্রবাসীদের এনআইডি সেবা কার্যক্রম।

 

এছাড়া ২০১৯ সালে কার্যক্রম শুরু হলেও করোনা মহামারির কারণে এই সেবার কাজ আটকে ছিল। পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

 

প্রবাসের নাগরিকদের ভোটার করার কার্যক্রম কোভিড মহামারির আগে হাতে নিলেও তা আর এগিয়ে নিতে পারেনি ইসি। ফলে প্রবাসীদের দেশে এসেই ভোটার হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

 

জানা গেছে, এজন্য এনআইডি প্রবাসী ডেস্ক তৈরি করা হয়েছে। যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা দেশে ফিরলে যাতে কম সময়ের মধ্যে এনআইডি সেবা পেতে পারেন, এই ডেস্কের মাধ্যমে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশে বসেই অনলাইনে ভোটার হওয়ার কার্যক্রমে অগ্রগতি না থাকায় প্রবাসে থাকা প্রায় ২ কোটি নাগরিক বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে ফিরেও নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

 

যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, ছয় দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশির ভোটার নিবন্ধনের আবেদন পাওয়ার পর তাদের স্থানীয় ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দূতাবাস ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালিও হয়েছে।

 

কিন্তু ভোটার নিবন্ধনে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইসির এনআইডি উইংয়ের প্রতিনিধি দল সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে যেতে না পারায় আটকে আছে প্রবাসীদের এনআইডি সেবা কার্যক্রম।

 

দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা পেরিয়ে কে এম নূরুল হুদা কমিশন ২০১৯ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় অনলাইন নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু এরপর মহামারিতে সেই উদ্যোগ থমকে যায়। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আবার সেই কাজে গতি আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য সম্প্রতি মাঠ কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে একটি নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর পর ছয়টি দেশ থেকে ভোটার হতে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে আবেদন করেছেন ৫ হাজার ১৩৮ জন। তাদের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ৪৭৫ জনের।

 

এর মধ্যে নানা কারণ দেখিয়ে ২০৩ প্রবাসীর আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তাধীন ৫৩ জনের আবেদন। তিন বছরে তদন্ত সম্পন্ন করে ২৭২ জনের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ এনআইডি পায়নি।

 

জানা গেছে, প্রবাসীদের মধ্যে এনআইডি পেতে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সৌদি আরব থেকে। দেশটিতে বসবাসরত এক হাজার ৬২১ জন প্রবাসী অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এদের মধ্যে তদন্ত শেষে অনুমোদন হয়েছে ৯৫ জনের আবেদন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আবেদন এসেছে এক হাজার ৩৭৫টি।

 

এর মধ্যে অনুমোদন করা হয়েছে ৬৩ জনের আবেদন। এক হাজার ২১৬টি আবেদন পড়েছে যুক্তরাজ্য থেকে। এর মধ্যে অনুমোদন করা হয়েছে ৫১ জনের। মালয়েশিয়া থেকে আবেদন করেছেন ৪৮৭ জন। এদের মধ্যে অনুমোদন হয়েছে ৪৪ জনের আবেদন।

 

সিঙ্গাপুর থেকে থেকে ভোটার হতে এবং এনআইডি পেতে আবেদন করেছেন ৩৯১ জন। এদের মধ্যে তদন্ত শেষে অনুমোদন করা হয়েছে ১৬ জনের আবেদন। এছাড়া মালদ্বীপ থেকে ৪৮ জন আবেদন করেছেন, তদন্ত শেষে অনুমোদন পেয়েছে তিনজনের আবেদন।

 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে এই উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়। ওই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। পরে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আবর আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

 

এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করার কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপের প্রবাসীদের জন্যও কার্যক্রমটি হাতে নেয়া হয়।

 

প্রবাসীদের ভোটার করার ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রবাসীরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বসেই অনলাইনে আবেদন করবেন। পরে সেগুলো নির্বাচন কমিশন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানার অধীন উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করে এনআইডি সরবরাহ করবে।

 

এক্ষেত্রে তদন্তে ইতিবাচক প্রতিবেদন পাওয়া সাপেক্ষে আবেদন অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে এনআইডি সরবরাহ করার কথা। প্রবাসে দুই কোটির মতো নাগরিক রয়েছে। এদের বিভিন্ন ধরনের সেবা সহজ করতে প্রবাসেই এনআইডি দেয়ার এ সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।

 

তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রবাসে যারা রয়েছে সরাসরি তাদের কাছে এনআইডি পৌঁছে দেয়ায় নানা জটিলতা রয়েছে। এ কারণে যারা দেশে আসছেন, তারা যাতে দ্রুত এনআইডি পায় সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রবাসে এনআইডি পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অনান্য সেবা সংস্থা কীভাবে কাজ করছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর ও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

 

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, বিভিন্ন সংস্থা কীভাবে প্রবাসীদের জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট সেবার কাজটি করছে, সে অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে চিঠি দিয়েছি। ফি ও লোকবল নির্ধারণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন লাগে। এসব বিষয় সমাধান করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

কিন্তু বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক সংকটের কথা বিবেচনা করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দূতাবাসে ইসির লোক পাঠিয়ে নিবন্ধনের কাজটি করার বিরোধিতা করেছে।

 

বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে মিশন আবেদনকারীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে আবেদনগুলো ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে যাচাই-বাছাই এবং পাসপোর্ট প্রিন্টের জন্য পাঠিয়ে থাকে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট প্রিন্ট করার পর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সেগুলো বিতরণ করার জন্য ডাকযোগে মিশনগুলোতে পাঠায়।

 

স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করলে তা টেকসই, বাস্তবসম্মত, সাশ্রয়ী ও অধিক প্রবাসীবান্ধব হবে বলে পরামর্শ দেয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে।

 

তিনি বলেন, আপাতত দেশে ফিরলে প্রবাসীদের দ্রুত এনআইডি সেবা দেয়া হচ্ছে প্রবাসী ডেস্কের সহায়তায়। চেষ্টা করা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রবাসেও যাতে সেবা দেয়া যায়।

 

এদিকে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ভোটার সেবা অব্যাহত রাখতে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন থেকে মাঠ কর্মকর্তাদের একটি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী নির্দেশনাটি মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন।

 

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রবাসী ব্যক্তিদের চলমান প্রক্রিয়ায় যথারীতি নতুন ভোটার নিবন্ধন ও আপলোড কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে ভোটার তালিকা আইন-২০০৯-এর ১৫ ধারা মোতাবেক নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version