মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেলো ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। মাস ফুরানোর সঙ্গে সঙ্গে সাঙ্গ হলো রক্তে রাঙানো অমর একুশের বইমেলা। বছরজুড়ে লেখক-পাঠক এই মাসটির জন্য অপেক্ষা করেন।
অপেক্ষার পর মাসটি এলে মেলে তাদের মিল বন্ধন। বই আদান প্রদানসহ দেখা হয় স্বজনদের সঙ্গে। তারপর মেলা ভেঙে যায়। আবারও এক বছরের জন্য অপেক্ষা বাড়ে লেখক- পাঠকদের। নিয়ম মেনে গতকালই ভেঙেছে এই মিলন মেলা। কাল থেকেই আবার শুরু হয়েছে লেখক পাঠকের অপেক্ষার পালা।
গতকাল মেলার অন্যান্য দিনের মতো এদিনও যথা সময়ে (বেলা ৩টা) মেলার গেট খোলে। এর পরই মেলায় ঢুকে পড়েন পাঠক-দর্শনার্থীরা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়তে থাকে। তবে গতকাল আশানুরুপ ভিড় হয়নি। উদ্যান এবং একাডেমি উভয় স্থানেই আগের চেয়ে উপস্থিতি কম ছিলো। তবে শেষ সময়ে স্টলগুলোতে বেচাকেনার ছিলো চোখে পড়ার মতো।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে লেখক আরমানউজ্জামান বলেন,‘ যারা একুশের বইমেলার জন্য অপেক্ষা করেন তাদের কাছে আসলেই মেলা দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যায়। বিশেষ করে লেখক এবং পাঠকের বেলায় এমন হয়। কারণ আমাদের দেশে বইমেলা কেন্দ্রিক লেখা বেশি হয়। পাশাপাশি এই সময়ে প্রচুর বই প্রকাশিত হয়। পাঠকরাও দেখে ,শুনে তাদের প্রিয় লেখকের বই কিনতে পারেন। সে কারণে মেলা এলে আমাদের এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে। আবার মেলা শেষ হলে মন খারাপ হয়ে যায়।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুব্রত বড়–য়া নামে এক পাঠক বলেন‘ এবার মেলায় অনেক বার এসেছি। আজ এলাম শেষ বারের মতো। আজও কিছু বই কিনেছি। আজ কিনেছি সব খ্যাতমান লেখকদের বই। প্রথমদিকে তরুণ লেখকদের বইও কিনেছি। আমি কবিতার মানুষ তাই ঝুলিতে কবিতার বই-ই বেশি। তবে বাজেটের জন্য আরও কিছু বই কেনা হয়নি। আশা করছি এগুলো অনলাইন থেকে
এদিকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের হামলার হুমকির পর শুক্রবার থেকে অমর একুশে বইমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। গতকালও শেষ দিনেও এ ধারা অব্যাত ছিলো।
২০১৫ সালে বইমেলায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের পর একুশে বইমেলায় জঙ্গি হামলা অথবা হামলার হুমকির ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন করে জঙ্গি হামলার হুমকিতে সরকার চিন্তিত না হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
জঙ্গিগোষ্ঠী “মাঝেমধ্যে হুমকি দেয়,” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা এসবে ভয় পাই না।” “তারপরও আমরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নেইনি। বইমেলা এবং আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে,” ।
এদিকে জঙ্গি হামলার হুমকি সত্তে¡ও গতকালও চলমান একুশে বইমেলায় দর্শক-ক্রেতার ঘাটতি ছিল না গতকালও বাড়তি নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে বেশিরভাগ মানুষ পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাকে খারাপ চোখে দেখছেন না।
একুশে বইমেলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. কে. এম. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের একটি চিঠি পেয়েছি। ডাক মাধ্যমে পাওয়া চিঠিটির কোনো সঙ্গতি নেই। চিঠির এক জায়গায় বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ীর হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেউ কিছু বলছে না। এ রকম কাজ চলতে থাকলে, করাচির মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে।”
তিনি বলেন, “আবার এর সাথে বইমেলাকে যুক্ত করে বলা হচ্ছে, বই মেলাতেও হামলা করা হবে।”
প্রসঙ্গত, এবার বইমেলার স্লোগান-‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট।
প্রাপ্ত তথ্য মতে এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশু চত্ত¡রে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভেলিয়ন ৩৪টি।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভেলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং সর্বমোট ৭০৪ টি (প্যাভেলিয়ন বাদে) স্টল । এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য