-->
সরব মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা

মে'র শেষ সপ্তাহে গাজীপুর সিটি নির্বাচন

শাহীন রহমান
মে'র শেষ সপ্তাহে গাজীপুর সিটি নির্বাচন

শাহীন রহমান: জাতীয় নির্বাচনে আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ নির্বাচন কমিশনের। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই এসব সিটির ভোট করতে হবে। তবে ৫ সিটির মধ্যে আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। তবে কবে নাগাদ এই সিটির ভোট হবে এখনো নিশ্চিত করেননি তারা।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রমজানের পরেই এই সিটি ভোটের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহে ভোট হতে পারে বলে এর আগেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। এদিকে, নির্বাচন ঘিরে সরব হচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অনেকে জনসংযোগ করে প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।

 

বৃহস্পতিবার এ সিটির ভোটের বিষয়ে কথা বলেন ইসি রাশেদা সুলতানা। তিনি বলেন, পাঁচ সিটি করপোরেশনের মধ্যে গাজীপুরে সবার আগে ভোট হবে। জুলাইয়ের শুরুতে কোরবানির ঈদের আগেই বাকি চার সিটিতে ভোট করা হবে। কোরবানির পরে সংসদ নির্বাচনের জন্য মনোনিবেশ করতে হবে। অনেক কাজ। অনেক ধরনের বিষয় আছে।

 

এর আগে গত ১৫ মার্চ কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানান, মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে। কোন সিটিতে কবে ভোট হবে, সেটি পরে জানানোর কথাও সে সময় বলেন তিনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি রাশেদাও। তবে বলেছেন, গাজীপুরে আগে হবে।

 

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ওই বছর ১৫ মে অনুষ্ঠিত হয় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় খুলনা সিটি নির্বাচন। তবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন আলাদা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আয়তন এবং ভোটার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

 

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনা করে নির্বাচন নির্বিঘ্নে করতে আলাদাভাবে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটের আয়োজন করা হচ্ছে। এরপরই বাকি ৪ সিটিতে এক দিনে বা ভিন্ন ভিন্ন দিনে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

 

জানা গেছে, সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে কনিষ্ঠতম হলেও আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩২৯ দশমিক ৫৩ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ। ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এর প্রায় ৭৫ ভাগ গার্মেন্ট শিল্প এ অঞ্চলে অবস্থিত।

 

এই সিটির ভোটার সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর ২০১৩ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এরপর ২০১৮ সালের ১৫ মে এই সিটিতে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম জয়লাভ করেন। তিনি তিন বছর ক্ষমতায় থেকে দলীয় পদ হারান এবং মেয়র পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়ে ক্ষমতার বাইরে অবস্থান করছেন।

 

২০১৮ সালের ২৬ জুন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের এক মাস পর শপথ নেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব নেন তিনি। সিটি করেপারেশন নির্বাচন আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষের আগের ১৮০ দিনের বা ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। এ অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সিটির মেয়াদ থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের আগে আগেই নির্বাচন করার উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি।

 

এদিকে নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় মেয়র নির্বাচনের জন্য প্রার্থীরাও সরব হয়ে উঠছেন। বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া মেয়র জাহাঙ্গীর আলম পুনরায় এই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন। দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলেও তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ইতোমধ্যে ক্ষমা করা হয়েছে। তার কর্মী-সমর্থকরা সরব হয়ে উঠছেন। এই সিটিতে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রার্থিতা ঘোষণা করছেন।

 

গত বুধবার টঙ্গীর বাটা গেটস্থ বন্ধন কমিনিউটি সেন্টারে স্মার্ট গাজীপুর সিটি গড়ার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মোহাম্মদ আলী সরকার ফাউন্ডেশনের (আরএসবি) গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. মেজবাহ উদ্দিন সরকার রুবেল সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। এ সময় তিনি লিখিত লিফলেট পড়ে ১৫ দফা ইশতেহারও ঘোষণা করেছেন।

 

এছাড়া নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ ও প্রচার-প্রচারণা বেড়েই চলছে। এর মধ্যে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা পোস্টার-ব্যানারসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তাদের প্রার্থিতা জানান দিয়ে যাচ্ছেন। কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে ভোট প্রার্থনা করছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version