-->
বেকারদের কর্মসংস্থানে নানামুখী উদ্যোগ

দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার

মোতাহার হোসেন
দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার

মোতাহার হোসেন: দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯০ হাজার আর বেকার নারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪০ হাজার। বিবিএস জানায়, দেশে এখন বেকার জনগোষ্ঠীর হার কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে, যা আগে ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

 

বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশে বেকার যুবক-যুবতীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারি উদ্যোগে নেয়া হয়েছে বহুমুখী কর্মসূচি। সরকারি মহল আশা করছে, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলে দেশে কর্মক্ষম একজন মানুষও বেকার থাকবে না।

 

অবশ্য এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই তিনি বেকার নন। তার কথা সঠিক ধরলে দেশে বাস্তাবিক অর্থে কোনো বেকার নেই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেশে বেকার আছে বেসরকারি হিসাবে সরকারি হিসাবের দ্বিগুণেরও বেশি।

 

বিবিএস প্রকাশিত ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’-এ এমন চিত্র উঠে এসেছে। আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিবিএস। সভায় বলা হয়, এই বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগও পায় না। বেকারত্বের এ হিসাব আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দেয়া মানদন্ড অনুযায়ী। আইএলও মনে করে, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ না করলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।

 

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে এখন বেকার জনগোষ্ঠীর হার কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। আগে যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার। এর মধ্যে বেকার পুরুষের সংখ্যা ১৬ লাখ ৯০ হাজার এবং বেকার নারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৪০ হাজার।

 

বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ (এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। এর জন্য বর্তমান সরকার যুবকদের বিভিন্ন চাকরির সুযোগ তৈরি করছে। তাছাড়াও সুনির্দিষ্ট চাকরি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সরকার আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

 

বিবিএসের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বিগত পাঁচ বছরে শ্রমবাজারের সূচকগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। ২০২২ সালের ফলাফলে পাওয়া যায়, বেকারত্বের হারের সূচক কমেছে। শ্রমশক্তিতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের হারে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেছে এবং কর্মে নিয়োজিত বিশেষ করে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। যুব জনগোষ্ঠীর শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ বেড়েছে। কৃষি এবং সেবাখাতে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বেড়েছে।

 

প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ও নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিস্তারিত প্রতিবেদনে শ্রমবাজারের সূচকগুলোর বিশ্লেষণ এবং পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।

 

নমুনা ফ্রেম হিসেবে জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর দ্বিতীয় জোনাল অপারেশন ব্যবহার করে দেশব্যাপী এক হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক গণনা এলাকা ও প্রতিটি প্রাথমিক গণনা এলাকা থেকে ২৪টি খানা নির্ধারণ করা হয়। বিশাল বেকার জনগোষ্ঠী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগও পায় না। বেকারত্বের এ হিসাব আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দেয়া মানদন্ড অনুযায়ী।

 

আইএলও মনে করে, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ না করলে ওই ব্যক্তি বেকার হিসেবে ধরা হয়।

 

এদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, এবং যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশে বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দে বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।

 

এসব কর্মসূচি সরকারের রূপকল্প ২০৪১ অনুযায়ী, প্রধান খাতগুলো হলো তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, শিপ-বিল্ডিং এবং তৈরি পোশাক, পর্যটন ও পর্যটন পরিষেবা, হালকা প্রযুক্তিগত নির্মাণ শিল্প; তবে এই ক্ষেত্রগুলোর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রযুক্তিবিদদের (বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ) অভাব রয়েছে।

 

এসব বিষয়ে শ্রমিকদের দক্ষ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। পাশাপাশি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ওপরের দিকের ক্লাসের শিক্ষা কারিকুলামে স্থানীয় ও বৈশ্বিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার নিরন্তর কাজ করছে অন্তত ২০টি সরকারি ও প্রায় সহ¯্রাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

 

বেকার যুবক-যুবতীদের বিনা অর্থে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ৩ মাস, ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য খামার, ভাসনমান সবজি বাগান, হাতের সেলাই, নকশিকাঁথা সেলাই, গরু মহিষ ছাগাল পালন সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। এই প্রশিক্ষণের ফলে প্রশিক্ষিতরা নিজেরা একদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নিজদের নিকটজনদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করছে।

 

গত ৫ বছরে এ রকম প্রায় ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। তাছাড়া ব্লক বাটিকের কাজ, সবজি বাগান, নার্সারি করা, সেলাইয়ের কাজ, কুটির শিল্পের কাজ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, অনলাইন সেবা দিয়েও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেকার যুবক-যুবতীরা নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছে, রেকারত্ব ঘোছাচ্ছে।

 

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড গ্রামের দুস্থ ও ভ‚মিহীনদের কর্মসংস্থান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে এটি আত্মকর্মসংস্থানে কাজ করছে।

 

তাছাড়া রয়েছে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠাকরণ, মহিলা উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রভৃতি। এছাড়া প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পর সফলভাবে তা পরিচালনার জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, বিপণন কৌশল ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন কোর্স ও প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে থাকে।

 

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসায় উদ্যোগ, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় মহিলাদের জন্য উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। দেশের সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক কারিগরি ও প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।

 

সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলে তিনি বেকার নন : পরিকল্পনামন্ত্রী

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত ‘শ্রমশক্তি’ জরিপের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কেউ যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন, তিনি আর বেকার নন। এমনকি যেসব মায়েরা বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালন করেন, তারাও বেকার নন বলেও দাবি করেন তিনি।

 

মন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর সম্পূরক প্রশ্নে সাংবাদিকরা জানতে চান এক ঘণ্টা কাজ করে কি জীবন চলবে? জবাবে এম এ মান্নান বলেন, ‘জীবনের প্রশ্ন তো বিশাল ব্যাপার।’ বিবিএস প্রকাশিত ‘শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২’-এর প্রভিশনাল রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।

 

এ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে বিবিএস। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এম এ মান্নান বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসের সময় কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যের হার কমেছে। সরকার বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কারণে কর্মসংস্থান বেড়েছে।

 

করোনার সময় ২০ শতাংশ থেকে দারিদ্র্য কমে ১৬ শতাংশ হয়েছে। সরকার বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। আপনারা গভীরে গেলেই বুঝবেন দেশে দারিদ্র্য কমেছে।’

 

আলোচনা সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার সময় কর্মসংস্থান কমেনি, বরং বেড়েছে। শহর ছেড়ে অনেকে গ্রামে গিয়ে মাছ, সবজি চাষ করেছেন।

 

অনেকে মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version