-->
১ থেকে ৭ এপ্রিল জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন

১২ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার টন

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ বছরে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার টন

সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে দেশে গত ১২ বছরের ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার টন। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার টন। সরকারি পদক্ষেপে ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬৭ হাজার টনে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণ করতে পারলে ইলিশের উৎপাদন আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।

 

এ লক্ষ্যে আগামী ১ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন করা হবে।

 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে মৎস্য জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ, ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা জানান। এ সময় তিনি বলেন, ২০২২ সালে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নের ফলে ৫২ শতাংশ ইলিশ প্রজননক্রিয়ায় অংশ নিতে পেরেছে, যা ২০০১-০২ অর্থবছরের তুলনায় অনেক বেশি। দেশের সব মানুষের কাছে পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও সুদৃশ্য ইলিশ পৌঁছানো সরকারের লক্ষ্য বলেও উল্লেখ করেন।

 

সারা বিশ্বের সুস্বাদু ইলিশের ৮০ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদন হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইলিণশ উৎপাদনের জিআই সনদ আমাদের। এটা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই উদ্দেশ্যে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ পালন করা এবারের লক্ষ্য। একটা সময় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে যাওয়া ইলিশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সর্বোচ্চ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিয়ে এসেছি।

 

এ প্রক্রিয়ায় মৎস্যজীবী সংগঠন, নৌ পুলিশ, কোস্ট কার্ড, সাধারণ পুলিশ, সিভিল প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ইলিশ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করতে চাই। ইলিশের স্বাদ সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সুযোগ হলে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে।

 

ইলিশসম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নানা কার্যক্রম তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ইলিশের বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা সরকার দেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে মা ইলিশ আহরণের নিষিদ্ধ সময় ২২ দিন নির্ধারণ, জাটকা নিরাপদে বৃদ্ধির জন্য ১ নভেম্বর হতে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ৮ মাস জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, দেশের ইলিশ সমৃদ্ধ নদনদীতে ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রম স্থাপন ও নির্দিষ্ট সময়ে এ অভয়াশ্রমে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা, নিষিদ্ধকালে জেলেদের প্রতি বছর ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান, জাটকা আহরণে বিরত অতি দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, টেকসই কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প।

 

তিনি বলেন, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এমন জাল যেমন বেহুন্দি জাল, কারেন্ট জালসহ অন্যান্য অবৈধ জাল যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য সরকার আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করেছে। শুধু সমুদ্রে বা নদীতে নয় বরং যেখানে এসব অবৈধ জাল তৈরি হয় সেখানে আঘাত হানতে হবে। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহে যেখানে বেআইনি জাল উৎপাদন হবে, সে কারখানায় অভিযান চলবে। যারা জাটকা নিধনের চেষ্টা করবে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

পাশাপাশি যে অঞ্চলে জাটকা ধরা হবে সে অঞ্চলে বরফ কল বন্ধ রাখা হবে। বাজারেও মোবাইল কোর্ট থাকবে। জাটকা পরিবহন ও বিপণনে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

 

মন্ত্রী জানান, জাটকা নিধনে সবচেয়ে ক্ষতিকর জাল ধ্বংসে ২০২৩ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে দেশের ১৭টি জেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সহায়তায় বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনার মাধ্যমে মোট ৯৮৭টি মোবাইল কোর্ট ও ৩ হাজার ২২৬টি অভিযান পরিচালনা করে ৭ হাজার ৫৪টি বেহুন্দি জাল, ৫৪৯.১৯ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং ১২ হাজার ৪৮টি অন্যান্য নিষিদ্ধ জাল আটক করা হয়েছে।

 

মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে সরকার জেলেদের জন্য ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২০ জেলার ৯৭ উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৯টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি হারে ৪ মাসে ৫৭ হাজার ৭৩৯ টন ভিজিএফ চাল বিতরণ চলমান রয়েছে।

 

বিগত ৭ বছর ধরে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের সময়ও জেলেদের ভিজিএফ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। পাশাপাশি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান কাজী আশরাফ উদ্দীন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এবং মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version