-->
শিরোনাম
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

প্রথম আলোর সম্পাদকের আগাম জামিন হাইকোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রথম আলোর সম্পাদকের আগাম জামিন হাইকোর্টে

মহান স্বাধীনতা দিবসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় করা মামলায় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট।

 

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইমতিয়াজ মাহমুদ ও প্রশান্ত কর্মকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুদীপ চ্যাটার্জি।

 

এর আগে রোববার সকালে হাজির হয়ে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন মতিউর রহমান। আবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত বেলা ৩টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন। এরপর নির্ধারিত সময়ে শুনানি হয়।

 

গত ২৯ মার্চ রাতে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক (সাভারে কর্মরত) শামসুজ্জামান শামসকে আসামি করে রাজধানীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক) বাদী হয়ে করা এই মামলায় আসামি হিসেবে ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যান’সহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরাও রয়েছেন। মামলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫-এর (২), ৩১, ৩৫-এ আনা অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, আসামিরা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করে এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে।

 

এ মামলায় সাভারের বাসা থেকে শামসুজ্জামানকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। এর ৩০ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে তোলা হয়। এরপর জামিন আবেদন খারিজ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

 

গত ২৬ মার্চ প্রথম আলো অনলাইনের এক প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশের সময় দিনমজুর জাকির হোসেনের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি ‘ফটোকার্ড’ তৈরি করা হয়। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি ছিল একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার ১৭ মিনিটের মাথায় অসংগতিটি ধরা পড়লে তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি সংশোধনী দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিবেদনটি আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়।

 

মামলার বাদী এজাহারে অভিযোগ করে বলেন, তিনি গত ২৬ মার্চ রাত ৯টায় শিল্পকলা একাডেমির মূল গেইটে থাকাকালীন ফেসবুক ব্রাউজ করার সময় দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনের একটি নিউজের স্ক্রিনশট দেখতে পান। স্ক্রিনশটে দেখা যায়, জাকির হোসেন নামে একটি দিনমজুর শিশুর বক্তব্য উল্লেখ করে প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান একটি প্রতিবেদন করেছেন। প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব। ’ নিচে লেখা জাকির হোসেন, দিনমজুর, সাভার। বাদী এই খবরটি দেখে বিস্মিত হন বলে জানান এজাহারে।

 

এজাহারে বাদী আরও বলেন, পরে ২৮ মার্চ রাত ১০টার দিকে তার মোবাইল ফোনে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ৭১ টিভির প্রতিবেদক ফারজানা রূপার একটি প্রতিবেদন চোখে পড়ে। প্রতিবেদন থেকে তিনি জানতে পারেন, প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে উল্লিখিত প্রতিবেদনটি দেখে ফারজানা রূপা ঘটনা সম্পর্কে মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধানে নামেন। অনুসন্ধানে তিনি সাভার স্মৃতিসৌধ এলাকায় গিয়ে প্রতিবেদনে কথিত জাকির নামে শিশুটিকে খোঁজ করেন। প্রথম আলো অনলাইনে প্রদর্শিত জাকির নামীয় শিশুটির ছবি স্থানীয় লোকজনদের দেখিয়ে প্রতিবেদনের শিশুটিকে খুঁজে বের করেন। পরে শিশুটির বাড়িতে যান। সেখানে তিনি জানতে পারেন শিশুটির নাম জাকির নয়, তার নাম সবুজ। বয়স সাত বছর, সে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। শিশুটিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদন ও তার ছবি দেখালে সে জানায়, একজন লোক স্বাধীনতা দিবসের দিন নিজেকে প্রথম আলোর সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাকে ১০ টাকা দিয়ে ক্যামেরায় ছবি তুলে। শিশুটিকে ওই ব্যক্তি তার নাম বা কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করেননি এবং তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।

 

বাদী এজাহারে বলেন, আমি ফারজানা রূপার এই প্রতিবেদন দেখে মনে মনে আতঙ্কগ্রস্ত হই এবং আমার মনে পড়ে যে, ১৯৭৪ সালে কুড়িগ্রামের বাসন্তী নামে একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত মহিলাকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় প্রকাশ করে জনমনে দুর্ভিক্ষের আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এই কথা মনে পড়ে যাওয়ায় আমি শঙ্কিত হয়ে পড়ি যে, ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলো তাদের অনলাইন ভার্সনে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে একটি মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

 

তিনি বলেন, আমি আরও বুঝতে পারি যে, প্রথম আলোর সম্পাদকের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় ওই প্রতিবেদক তার অজ্ঞাতনামা ক্যামেরাম্যান ও মুদ্রণ সহযোগীদের নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত ও হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছেন। এ কারণে জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

 

একই অভিযোগে গত ২৯ মার্চ শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক একটি মামলা করেন সৈয়দ মো. গোলাম কিবরিয়া নামের এক ব্যক্তি।

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version