-->

বঙ্গবাজারে আগুন: উত্তাপ ছড়াবে ঈদবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক
বঙ্গবাজারে আগুন: উত্তাপ ছড়াবে ঈদবাজারে

কয়েকদিন বাদেই ঈদ। সবে শুরু হয়েছে টুকটাক ঈদের কেনাকাটা। ঈদবাজার জমার আগে এমন সময়ে বঙ্গবাজারে ঘটল ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনা। ঈদের আগে দেশের অন্যতম একটি বড় পাইকারি মার্কেট আগুনে ছাই হওয়ায় এবার ঈদবাজারেও এর উত্তাপ ছড়াতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

 

পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, ফতুয়া, পায়জামা, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, সেলোয়ার-কামিজ, থ্রিপিসসহ নারী ও পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ সকলের দেশি-বিদেশি পোশাকের বড় পাইকারি মার্কেট এ বঙ্গমার্কেট। শীতের সব ধরনের পোশাকও বিক্রি করা হয় এখানে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাসহ সারা দেশের অসংখ্য খুচরা ব্যবসায়ী বঙ্গবাজার থেকে পোশাক পাইকারি কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রি করেন। শুধু পাইকারি নয়; এখানে খুচরাও বিক্রি করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা দোকান থেকে না কিনে, একটু কম দামের আশায় অনেকেই ছোটেন বঙ্গবাজারে।

 

রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের পাশে ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত এ মার্কেটটি মূলত তৈরি পোশাকের জন্য বিখ্যাত। এর পূর্ব পাশে রয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, দক্ষিণ পাশে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এবং পশ্চিম পাশের সড়ক পেরোলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। উত্তর-পশ্চিম কোণে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল। শুধু ঈদ নয়; সারা বছরই রাজধানীর অনেকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের পোশাক এ মার্কেট থেকে কিনে থাকেন।

 

উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, ১৯৫০ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত পুরান ঢাকার রেলস্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়ায়। এ স্টেশন ঘিরেই মূলত গড়ে ওঠে এ বাজার। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবাজারে হকার ও ছোট দোকানদার সংখ্যা বেশি ছিল। পরে রেলস্টেশন সরিয়ে নেয়া হয় কমলাপুরে। রেলস্টেশনকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ওই টিনশেড দোকান ভেঙে ১৯৭৫ সালে ঢাকা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পাকা বাজার গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৫ সালে জায়গাটির মালিকানা পায় সিটি করপোরেশন এবং ১৯৮৯ সালে নির্মাণ করা হয় পাকা বিপণিকেন্দ্র। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে এটি তৈরি পোশাকের বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ২১ হাজার ২৫০ বর্গফুট জায়গায় অবস্থিত বঙ্গবাজার তিনটি ভাগে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে বঙ্গ গুলিস্তান, আদর্শ হকার্স মার্কেট এবং মহানগরী। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে দেশের অন্যতম তৈরি পোশাকের বাজার পরিচালিত হয়।

 

মঙ্গলবার ১২তম রোজায় আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায় রাজধানীর এ অন্যতম পোশাকের পাইকারি ও খুচরা মার্কেটÑ বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট। ঈদ সামনে রেখে এসব মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের সব পুঁজি খাটিয়ে, কেউ কেউ ধারদেনা করে দোকানে তুলেছিলেন কোটি কোটি টাকার পোশাক। কারণ করোনার গত কয়েক বছর ভালো ব্যবসা করতে পারেননি তারা। এবার আশা করেছিলেন অতীতের সব লোকশান পুশিয়ে নেয়ার। ভালো ব্যবসার আশায় দোকানে তুলেছিল অনেক পণ্য। কিন্তু ব্যবসায়ীদের সেই আশা আর পূর্ণ হলো না; হলো সব শেষ। শুধু পোশাকই পোড়েনি। পুড়েছে অনেকে দোকানের ক্যাশে রাখা নগদ লাখ লাখ টাকাও। যা ছিল দোকানে, তা সবই গেছে ছাই হয়ে ।

 

এক ব্যবসায়ী বলেন, শাড়ি কাপড়ের ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, সঞ্চয় থেকে টাকা লাগিয়ে, কেউ ধার করে মাল তুলেছেন। ভেবেছিলেন ঈদে বিক্রি করে ধার শোধ করবেন। আরেক ব্যবসায়ী বলেন, এ মার্কেট ঘিরে দেড় লাখ লোকের রিজিক নির্ভর করে। কোনো ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত আজ থেকে তাও হয়তো বন্ধ।

 

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ৫ থেকে সাড়ে ৫ হাজার দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দেড় হাজার কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। এ বাজার থেকে দেশের একটা বড় অংশের মানুষের পোশাকের চাহিদা পূরণ হয়। ঈদের আগে এমন দুর্ঘটনার কারণে যারা এ মার্কেট নির্ভর ছিলেন, তাদের এবার ছুটতে হবে অন্য মার্কেটে। ফলে অন্য সেসব মার্কেটের ওপর চাপ পড়বে, ক্রেতা বাড়বে। দাম বাড়ারও আশঙ্কা রয়েছে।

 

রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা সবুজ বলেন, আমি বঙ্গবাজার থেকে কেনাকাটা করি। এখান থেকে তুলনামূলক কম দামে কিনতে পারতাম। এবার হয়তো অন্য মার্কেটে ছুটতে হবে। দামে না মিললে তো চাহিদা অনুযায়ী কেনাও সম্ভব হবে না।

 

শুধু সবুজ নয়; সবুজের মতো এমন অসংখ্য মানুষ নির্ভর ছিলেন বঙ্গবাজারে। এ মার্কেট থেকে যারা পাইকারিতে পোশাক নিয়ে খুচরা বিক্রি করেন তাদেরও এবার পোশাকের জন্য যেতে হবে অন্য মার্কেটে। ফলে তাদেরও কিনতে হতে পারে চড়া দামে। আর চড়া দামে কেনায়, বিক্রিও করতে হবে চড়া দামে। সব মিলিয়ে বঙ্গবাজার নির্ভর ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের কারণে আগুনের প্রভাব পড়তে পারে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার ঈদবাজারে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version